অবশেষে সব প্রতীক্ষার অবসান! এতদিন ধরে যে মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে ছিল বাঙালি, তা চলেই এল। রবিবার মুক্তি পেল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মৃণাল সেনের বায়োপিক পদাতিক-এর ট্রেলার। স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ১৫ অগস্ট মুক্তি পাচ্ছে এই সিনেমা। মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, গীতা সেনের চরিত্রে মনামী ঘোষ। সিনেমায় সত্যজিৎ হিসেবে দেখা যাবে জিতু কমলকে।
শুরুতেই দেখানো হচ্ছে ১৯৫৫-এর সেই ঐতিহাসিক সময়, যখন গোটা বিশ্বের মানুষ ধন্য ধন্য করছে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে। তাঁর পথের পাঁচালী সিনেমার প্রশংসা সকলের মুখে। সম্মান পাচ্ছেন সত্যজিৎ। তাঁর সব পরিশ্রম সার্থক। আর সেই বছরই আরেক মানুষ হন ব্যর্থ।
মৃণাল সেন-রূপী চঞ্চলকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি সিনেমা বানানো ছেড়ে দেব। আমি গল্প বলতে শিখিনি। আমি গল্প বলতে পারি না। আমার জন্য মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিটাই ঠিক ছিল।’
তবে সময় বদলায়। মৃণাল সেনেরও বদলেছিল। প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সালে মৃণাল সেনের যে ছবি ব্যর্থ হয়েছিল তা হল ‘রাতভোর’। এই ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সে ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। তবে প্রথম ছবিতে তেমন সাফল্য না পেলেও, পরের ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’-তে নিজের জাত চেনান তিনি। ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবি এনে দেয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ‘ভুবনসোম’, ‘কোরাস’, ‘মৃগয়া’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খারিজ’, ‘ক্যালকাটা ৭১’ মতো সিনেমাগুি আজও রয়েছে বাঙালির পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে।
সিনেমা বাননোর সব ছক ভেঙেছিলেন মৃণাল। যা নিয়ে কম সমালোচিত হননি। তবে সবসময় পাশে থাকতেন স্ত্রী গীতা। এই ছবিতে মনামী ঘোষকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘ঠিক যেটা করতে চাও, সেটাই করো। আপোষ করবেন না’। আর মৃণাল বলছেন, ‘যে গল্পটা যেভাবে বলতে চাই, সেভাবেই বলব। কারণ ভরপেট খাওয়ার থেকে শান্তিতে ঘুমনো অনেক বেশি জরুরি।’
পদাতিকের আরও একটি ডায়লগ গায়ে কাঁটা ধরায়- ‘আমি জানি আমার সিনেমায় হয়তো কোনও পালিশ নেই, হয়তো ক্রুড, হয়তো কাঁচা, হয়তো নিটোল শৈল্পিকভাবে গল্প বলার নিয়ম মানে না। হয়তো শুধুমাত্র ছেঁড়া প্যামফ্লেট, কোনও লেদার বাউন্ড ক্লাসিক নয়। কিন্তু শুধুমাত্র মহাকালের মুকুটের লোভে, আমি বর্তমানের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না!’
মৃণাল সেনের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর যত প্রশংসা করা হয়, ততই যেন কম! চোখের পলক পড়বে না, এই সিনেমার ট্রেলারে। সিনেমা-সাহিত্যপ্রেমী বাঙালির গায়ে কাঁটা দেবেই। একটি দৃশ্যে দেখা গেল, মানুষটা থাকতে পারেননি গীতার পাশে, যখন তিনি নিয়েছিলেন বিছানা। ভারতীয় সিনেমায় নিউ ওয়েভ এনেছিলেন এই মানুষটাই, নিজের জীবনের সব শখকে উৎসর্গ করে। একাধিকবার ভেঙে পড়েছেন, থেমে যাননি। তাই তো তিনি কিংবদন্তী। ছিলেন, আছেন আর সারাজীবন থাকবেন।
তবে পদাতিকের ট্রেলারের একদম শেষে দেখা গিয়েছে, আয়নায় নিজের মুখোমুখি মৃণাল। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। সেই দৃশ্যে নগ্ন দেখানো হয়েছে তাঁকে। তবে শটটি তোলা হয়েছে পিছন থেকে। আর মৃণাল সেনের যুবক বয়সের এই চরিত্রে দেখা গিয়েছে কোরক সামন্তকে। রবীন্দ্রনাথের শেষ যাত্রায় তাঁর দাড়ি ছিঁড়ে নেওয়ার একটি দৃশ্যও রাখা হয়েছে ট্রেলারে।