দুই সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে নরওয়েতে সুখী সংসার দেবিকা চট্টোপাধ্যায়ের। একদিন আচমকাই দেবিকার কোল ফাঁকা করে তাঁর সন্তানদের কেড়ে নিয়ে যায় সে দেশের সরকার। অভিযোগ, সন্তানদের যথাযথ দেখাশোনা করেন না দেবিকা। সেই থেকেই শুরু এক বাঙালি মায়ের তাঁর সন্তানদের ফিরে পাওয়ার লড়াই। একটা গোটা দেশের বিরুদ্ধে এক মায়ের এই লড়াই উঠে এসেছে রানি মুখোপাধ্যায়ের আসন্ন ছবি ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-তে। তবে এই কাহিনি কিন্তু কঠিন বাস্তব। শুধু বাস্তবের মিসেস চ্য়াটার্জির নাম দেবিকা নয়, সাগরিকা।
বিরাটির মেয়ে সাগরিকা চট্টোপাধ্যায়ের অদম্য লড়াইয়ের গল্প পর্দায় তুলে ধরছেন পরিচালক অসীমা ছিব্বর। সাগরিকা ভট্টাচার্যের থেকে নরওয়ে সরকার ছিনিয়ে নিয়েছিল তাঁর দুই সন্তান অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যকে। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’- ছবির ট্রেলারে উঠে এসেছে সেই আবেগঘন, হৃদয়বিদারক ঘটনা। যা দেখে চোখের জল থামছে না কারুর। কিন্তু যার জীবন ঘিরে এই ছবি, সেই সাগরিকা কী বলছেন এই ছবির ট্রেলার দেখে?
ই-টাইমসকে সাগরিকা জানান, ‘ভাষায় বলে বোঝানো খুব কঠিন যে নিজের লড়াইয়ের গল্প পর্দায় দেখে কেমন লাগছে। ট্রেলারটা দেখবার সময় মনে হচ্ছিল, ওই যুদ্ধটা আরও একবার আমি চাক্ষুস দেখছি। আমার বারবারই মনে হয়েছে, এই গল্পটা মানুষের জানা দরকার। জানা উচিত আজও প্রবাসী মায়েদের সঙ্গে কী ব্যবহার করা হয়, জার্মানির ঘটনা তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ। অরিহা শাহের মা ধারার সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি, যার বাচ্চাকে সে দেশের সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমি অনুরোধ করব আপনারাও ওর পাশে থাকুন। এক মায়ের প্রতি আমার এই সমর্থন নিঃস্বার্থ ও শর্তহীন’।
পর্দার মিসেস চ্যাটার্জিকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না বাস্তবের মিসেস চ্যাটার্জি। রানি মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে সাগরিকা বলেন, ‘সন্তানদের ফেরত পেতে আমাকে যে কষ্ট পেতে হয়েছে, তা রানি মুখোপাধ্যায় তুলে ধরেছেন দারুণভাবে। তিনি নিজেও একজন মা। এক মায়ের জার্নিকে এভাবে পর্দায় তুলে ধরার জন্য আমি তাঁকে সর্বান্তকরণে ধন্যবাদ দিতে চাই। এই ট্রেলার দেখে আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম’।
এই ছবিতে দেবিকা (রানি)-র স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করছেন টলিউডের অনির্বাণ ভট্টাচার্য। যে কোনও দেশে থাকতে গেলে সেই দেশের কিছুর নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে সংস্কৃতির ফারাক কোনও মায়ের কোল শূন্য করতে পারে সেই নির্মম কাহিনি এই ছবিতে উঠে আসবে। বাঙালির কাছে যা সংস্কার নরওয়ে বা বিভিন্ন পশ্চিমী দেশে তা পরিছন্নতার বিষয়। হাত দিয়ে খাবার খাওয়ানো, রাতে বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমোনো, কপালে কাজলের টিপ পরানো- এইগুলো সেই দেশে ‘অপরাধ’। তাহলেই কোর্টের নির্দেশে আপনার সন্তান চলে যাবে ফস্টার কেয়ারে। কিন্তু এই ‘অপরাধ’ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন, তা গোটা দেশের আইন-ব্যবস্থার সঙ্গে লড়ে কী ভাবে প্রমাণ করেছিলেন সাগরিকা? সেই চিত্র পর্দায় উঠে আসবে দেবিকার গল্পে। আগামী ১৭ই মার্চ বক্স অফিসে মুক্তি পাবে ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’।