ভারতীয় ছবির ইতিহাসে কেবল একজন দিলীপকুমার-ই ছিলেন। একজনই থেকে যাবেন। স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের সঙ্গে তাঁর 'পজ' দিয়ে সংলাপ উচ্চারণের কায়দায় মুগ্ধ হয়েছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম। প্রায় ছয় দশকের কেরিয়ারে তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবি পেয়েছে 'কালজয়ী'-র তকমা। জায়গা করে নিয়েছে ভারতীয় ছবির ইতিহাসের পাতায়। আসুন, ফিরে দেখা যাক প্রয়াত এই কিংবদন্তির 'দৌড়'-এর দিকে।
১৯৪৪-১৯৬০: ১৯৪৪ সালে 'জোয়ার ভাঁটা' ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ দিলীপ কুমারের। কিন্তু একেবারেই চলেনি সেই ছবি। প্রথম হিট ছবি 'জুগনু' পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও তিন বছর। তারপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। 'মেলা','আন্দাজ','দিদার' একের পর এক সুপারহিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। ১৯৫৫-এ 'দেবদাস' সৃষ্টি করল ইতিহাস। পাঁচের দশকে রাজ কাপুর এবং দেব আনন্দের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে পাল্লা দিতে পেরেছিলেন একমাত্র দিলীপ কুমার।
১৯৬০-১৯৭০: সালটা ১৯৬০। বক্স অফিস কাঁপিয়ে মুক্তি পেয়েছিল 'মুঘল-এ-আজম'। এই ছবির সুবাদেই চিরকালের জন্য ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে নিজের জায়গা পাকা করে নিলেন 'দিলীপ সাব'। ছবিতে 'রাজপুত্র সেলিম' এর চরিত্রে তাঁর তুখোড় অভিনয় আজন্মকাল মনে রেখে দেবেন দর্শকের দল। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই ছবি বলিউডের ইতিহাসে লাভের অঙ্কের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল! ১৯৬১ সালে নিজের প্রযোজনায় 'গঙ্গা যমুনা' ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। নিজের প্রযোজনায় তৈরি সেটাই তাঁর প্রথম ও শেষ ছবি। এই দশকেই একাধিক হলিউড ছবির প্রস্তাব পেলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পর্দায় প্রথমবার দ্বৈত চরিত্রে হাজির হলেন 'দিলীপ সাব'। ছবির নাম 'রাম অওর শ্যাম'।
১৯৭০-১৯৮০: সাতের দশক মোটেই আহামরি যায়নি এই বিখ্যাত অভিনেতার। ততদিনে বয়স থাবা বসানো শুরু করেছে। রাজেশ খান্না, অমিতাভের মতো নতুন বলি-অভিনেতাদের ব্রিগেড জাঁকিয়ে বসে পড়েছে বলিউডে। 'বৈরাগ' সহ একাধিক ছবি ফ্লপ করলে ১৯৭৬-১৯৮১ পর্যন্ত সাময়িকভাবে অভিনয় থেকে 'ব্রেক' নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৮০-১৯৯০: ১৯৮১ সালে রীতিমতো সাড়া জাগিয়ে ফিরে আসেন দিলীপ কুমার। সৌজন্যে, 'ক্রান্তি'। অমিতাভ,বিনোদ,ঋষির মতো নয়া প্রজন্মের সুপারহিট তারকারা থাকলেও 'মশাল','শক্তি','বিধাতা','কর্মা' প্রভৃতি ব্লকব্লাস্টার ছবিতে নিজের অনবদ্য পারফরমেন্সের মাধ্যমে তিনি বুঝে যান দর্শকদের কাছে আজও 'দিলীপ ম্যাজিক' অটুট।
১৯৯০-২০০০: ১৯৯১ সালে আরও এক বর্ষীয়ান অভিনেতা রাজ কুমারের সঙ্গে সুভাষ ঘাই পরিচালিত 'সওদাগর' ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। বলাই বাহুল্য সে ছবিও বক্স অফিসে পেয়েছিল সুপারহিটের তকমা। এরপর ১৯৯৬ সালে'কলিং' ছবির মাধ্যমে নিজের পরিচালক সত্বাকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। কিন্তু শেষমেশ তাঁর সেই ইচ্ছেপূরণ হয়নি। বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছিল সেই ছবির কাজ। শেষবার বড়পর্দায় দিলীপ কুমার হাজির হয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। ছবির নাম 'কিলা'। সেই শেষ। অভিনয় জীবন থেকে স্বেচ্ছাবসর ঘোষণা করেছিলেন 'দেবদাস'।