বলিউড অভিনেতা সইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তকে শেষবার বান্দ্রা রেল স্টেশনের কাছে দেখা গিয়েছিল এবং তাকে ধরতে তল্লাশি চলছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে মুম্বই পুলিশ। এরপর বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়ে যে সেই ব্যক্তি নাকি ধরা পড়েছে। এমনকী, সংবাদসংস্থা এএনআই-ও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট শেয়ার করে। যাতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে থানায় ঢোকানো হচ্ছে এক ব্যক্তিকে। জানানো হয় যে, সইফ আলি খান অ্যাটাক কেস, মুম্বই পুলিশ ১ ব্যক্তিকে নিয়ে এল বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ অনুমান করেছিল, ঘটনার পর সকালের প্রথম লোকাল ট্রেন ধরে ভাসাই ভিরারের দিকে রওনা দেয় ওই ব্যক্তি। ভাসাই, নালাসোপারা ও ভিরার এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালানো শুরু করে দেয় মুম্বই পুলিশের দল।
তবে আপাতত এএনআই নতুন আপডেটের মাধ্যমে জানিয়েছে যে, ‘সইফ আলি খান হামলা মামলা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বান্দ্রা থানায় আনা ব্যক্তি সইফ আলি খান হামলা মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত নন। বর্তমানে সইফ আলি খান হামলা মামলায় কাউকে আটক করা হয়নি: মুম্বাই পুলিশ’।
শুক্রবার সকালে মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে যে তারা সাইফের পিঠ থেকে বের করা ছুরির অংশটি হাতে পেয়েছে। ওই ছুরির বাদবাকিটা কোথায়, তা খোঁজা হচ্ছে। এবং সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
লীলাবতী হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, অভিনেতার পরিবার ও চিকিৎসকরা শুক্রবারই অভিনেতাকে আইসিইউ থেকে স্বাভাবিক ওয়ার্ডে নিয়ে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বৃহস্পতিবার বান্দ্রার ১১ তলার ফ্ল্যাটে হামলার শিকার হন বলিউড অভিনেতা সইফ আলি খান। ঘটনাটি ঘটেছিল যখন একজন অনুপ্রবেশকারী তাঁর বাড়িতে, ছোট ছেলে জেহর ঘরে, অভিনেতার পরিচারিকার মুখোমুখি হয় বলে অভিযোগ। সাইফ হস্তক্ষেপ করে সেই ব্যক্তিকে আটকানোর চেষ্টা করলে ছুরি দিয়ে আক্রমণ চালায়। সইফের গোটা শরীরে ৬ বার ছুরিকাঘাত করা হয়।
অনুপ্রবেশকারীর ছুরিকাঘাতে সইফকে তৎক্ষণাৎ মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকদের একটি দলের তত্ত্বাবধানে তার অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছুরির আঘাতের কারণে সইফের মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত লাগে। মেরুদণ্ড থেকে ২.৫ ইঞ্চি লম্বা ছুরি বের করে তার 'ফুটো হওয়া মেরুদণ্ড' মেরামত করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। সইফ 'শঙ্কামুক্ত' হলেও চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। অস্ত্রোপচারের পর তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে তিনি ধীরেধীরে বর্তমানে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
মুম্বই পুলিশ অভিনেতার উপর হামলার নিয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেছে এবং অভিযোগকারীর বয়ান রেকর্ড করেছে, যিনি অভিনেতার ছোট ছেলে জেহর আয়া। হামলাকারী পরিবারের কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে। অভিযোগকারিণীর অভিযোগ, হেক্সা ব্লেড দিয়ে পরিচারিকাকেও আঘাক করে সেই অনুপ্রবেশকারী।
‘সে তার বাঁ হাতে কাঠের মতো কিছু এবং ডান হাতে একটি দীর্ঘ পাতলা হেক্সা ব্লেড নিয়ে আমার দিকে ছুটে আসে, ধস্তাধস্তির সময় সে ব্লেড দিয়ে আমাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে, যখন আমি আমার হাত এগিয়ে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি, তখন ছুরির মতো কিছু আমার দুই হাত এবং বাঁ হাতের মধ্যমা আঙুলের কাছে আমার কব্জিতে আঘাত করে। এ সময় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম 'তুমি কী চাও', তখন সে বলে, 'আমার টাকা দরকার'। আমি জিজ্ঞেস করলাম কত? এরপর তিনি ইংরেজিতে বলেন 'ওয়ান ক্রোর'।’
‘এরপর সে সইফের উপরে হামলা চালায়। আমরা সবাই দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে দরজা টেনে দেই। শব্দ শুনে ঘুমন্ত রমেশ, হরি, রামু ও পাসোয়ান (অন্যান্য কর্মচারীরা) বেরিয়ে আসে।’
মুম্বই পুলিশের জোন ৯-এর ডিসিপি দীক্ষিত গেডাম, যিনি সাইফের উপর হামলার সময় তদন্তকারী দলের অংশ ছিলেন, বলেছেন যে, ঘটনাটি একটি ‘ডাকাতির চেষ্টা’ ছিল এবং অভিযুক্তরা সাইফ আলি খানের বাড়িতে প্রবেশের জন্য অগ্নিনির্বাপক সিঁড়ি ব্যবহার করেছিল।
গেদাম বলেন, ‘গতকাল রাতে অভিযুক্তরা ফায়ার এস্কেপ সিঁড়ি ব্যবহার করে সাইফ আলি খানের বাড়িতে ঢোকে। এটি ডাকাতির চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছি। মামলাটি নিয়ে ১০টি ডিটেকশন টিম কাজ করছে। বান্দ্রা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’