মঙ্গলবার বাঙালি হারালো তাঁর কিশোরবেলার সঙ্গীদের স্রষ্টাকে। চলে গেলেন নারায়ণ দেবনাথ। টানা ২৫ দিন ধরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে লড়াই করেছেন ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর স্রষ্টা। অবশেষে থামলো লড়াই। বাঙালি অনায়াসে আজও ছেলেবেলায় ফিরতে চাইলে চোখ বন্ধ করে ভরসা করে তাঁর তুলি-কলমকে। আজ তিনি না-ফেরার দেশে। মন ভেঙেছে আপামর বাঙালির, কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
নারায়ণ দেবনাথের চিকিত্সায় কোনও খামতি রাখেনি রাজ্য সরকার। তাঁর নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন প্রবীণ শিল্পীকে হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘আমি শোকস্তব্ধ প্রবীণ কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের মৃত্যুতে। ওঁনার চলে যাওয়াটা কার্টুনের জগতে একটা অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করল’।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতের তরফে জারি শোকবার্তায় লেখা রয়েছে, 'বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যশিল্পী ও কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল প্রভৃতি চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ সব বয়সের পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১৩ সালে 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মান প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মান, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ছাড়াও তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট ডিগ্রি পান। তাঁর প্রয়াণে কমিকস্ শিল্প জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি নারায়ণ দেবনাথের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।'
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায়। ২৫দিন ধরে বেলেভিউ হাসপাতালে ভর্তি থাকবার পর মঙ্গলবার সকাল ১০.১৫ মিনিটে পরপারে যাত্রা করলেন তিনি।
৬২-তে শুরু ২২-এসে শেষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে থামল কার্টুনিস্টের জার্নি বিচিত্র কর্মজীবন। বাঙালিকে প্রথম কমিক্স সুপারহিরো বাঁটুল উপহার দিয়েছেন তিনি, রয়েছে ‘হাঁদা-ভোঁদা’, ‘নন্টে-ফন্টে’র মতো কমিক চরিত্রগুলো। যা বাঙালির সম্পদ। স্রষ্টা চলে গেলেও রয়ে যাবে নারায়ণ দেবনাথের এই সকল সৃষ্টি, বাঙালি তাঁর কিশোরবেলায় ফিরতে বারবার উলটে পালটে দেখবে, পড়বে এই সব কাহিনি।