মঙ্গলবার মহাপঞ্চমীতে সিনেপ্রেমীরা বাঙালিদের চোখ ছিল দিল্লির বিজ্ঞানভবনে। এদিন ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের প্রতিভাবান অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পাওয়া গেল এক ছাদের তলায়। মনোজ বাজপেয়ী, এ আর রহমান, শর্মিলা ঠাকুর থেকে শুরু করে ঋষভ শেঠি, মিঠুন চক্রবর্তী- তারকা ঝলমলে অনুষ্ঠানের আসর বসেছিল বিজ্ঞান ভবনে। সেখানে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান গ্রহণ করেন মিঠুন চক্রবর্তী। এর বাইরেও গর্বে বুক ফুলল বাঙালির।
অগস্টের মাঝামাঝি সময়েই ঘোষণা করা হয়েছিল প্রাপকদের নাম। সেই মতো এদিন ছিল পুরস্কার হাতে তুলে দেওয়ার পালা। এদিন অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ীকে তাঁর স্ত্রী শাবানা রাজার সাথে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। 'গুলমোহর' ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিশেষ সম্মান পেয়েছেন মনোজ বাজপেয়ী। হাজির ছিলেন এরআর রহমান, প্রীতম, মণি রত্নমরা। দেখা মিলল মিঠুন চক্রবর্তী, শর্মিলা ঠাকুরদেরও।
বাংলার ঝুলিতে কী কী এল?
চলতি এডিশনে সেরা বাংলা ছবির সম্মান পেয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কাবেরী অন্তর্ধান। জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে সেরা রূপটান শিল্পী নির্বাচিত হয়েছেন সোমনাথ কুণ্ডু। অপরাজিত ছবির জন্য এই সম্মান পেলেন তিনি। ধুতি পাঞ্জাবিতে সেজে এদিন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সম্মান নিলেন সোমনাথ কুণ্ডু। অন্যদিকে অনীক দত্তর এই ছবির ঝুলিতেই গিয়েছে সেরা প্রোডাকশন ডিজাইনের পুরস্কার। সম্মানিত আনন্দ আঢ্য।
২০২২ সালের চলচ্চিত্র পোন্নিয়িন সেলভান - পার্ট ১-এ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের জন্য তার সপ্তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এদিন গ্রহণ করলেন এ আর রহমান। অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার আগে এক ভক্তদের সেলফির আবদারও মেটালেন।
কান্তারা অভিনেতা ঋষভ শেঠি চলতি বছর সেরা অভিনেতার সম্মান পেলেন। বেইজ রঙের শার্টের সঙ্গে ধুতিতে একদম সাবেকি সাজে পাওয়া গেল তাঁকে। চলতি বছর যৌথভাব সেরা অভিনেত্রীর সম্মান ভাগ করে নিয়েছেন নিত্য মেনন (তামিল ছবি-তিরুচিত্রমবলম) এবং মানসী পারেখ ( গুজরাতি ছবি-কচ্ছ এক্সপ্রেস)। সেরা ছবির সম্মান গিয়েছে মালায়ালি ছবি আত্তাম-এর ঝুলিতে।
বলিউডেও উজ্জ্বল বাঙালিরা
'ব্রহ্মাস্ত্র'-এর পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন পরিচালক করণ জোহর। ব্রহ্মাস্ত্র ট্র্যাক কেশরিয়ার জন্য সেরা প্লেব্যাক গায়কের সম্মান পেয়েছিলেন অরিজিৎ সিং। তবে এদিন গরহাজির ছিলেন অরিজিৎ। এচাড়াও এভিজিসি (অ্যানিমেশন, ভিজ্যুয়াল এফেক্টস, গেমিং এবং কমিক) বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র এবং সেরা ভিএফএক্স চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কৃত অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ছবি। অয়নের পাশাপাশি এই ছবির জন্যই আরও এক বাঙালি পুরস্কৃত হন। সেরা সঙ্গীত পরিচালকের সম্মান গ্রহণ করেন প্রীতম।
মিঠুন হাতে চোট সত্ত্বেও যোগ দেন
মিঠুন চক্রবর্তী এদিন মর্যাদাপূর্ণ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার গ্রহণ করলেন হাতে চোট নিয়েই। হাতের ইনজুরি সত্ত্বেও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। হাঁটতে, চলতে গেলে অন্যের সাহায্য নিতে হচ্ছে চোটে জর্জরিত মিঠুনকে, তবুও আজকের দিনটা ছিল গৌরঙ্গ চক্রবর্তীর!
তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত মিঠুন এদিন একদম বাঙালি বাবুর বেশেই ধরা দিলেন। ধুতি-পাঞ্জাবিতে ঝলমলে মহাগুরু। একটা সময় তাঁর নাচকে রিজেক্ট করেছিল বলিউড। সেই ডিস্কো ডান্সের তালে আজও নাচে গোটা বিশ্ব। গায়ের রং নিয়েও কম কটাক্ষ শোনেননি তিনি। সেই প্রসঙ্গে মিঠুন চক্রবর্তী জানান, ‘লোকে বলত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কালো রং চলবে না। এখানে কী করছো? ফিরে যাও, রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে লোকে কালিয়া বলত? আমি ভাবতাম কী করব? ভগবানকে বলতাম কী করব এই রং তো পালটাতে পারব না? ভাবতাম যে আমি নাচতে জানি, পা দিয়ে এমন নাচব যাতে লোকে আমার গায়ের রং না দেখে, আমার পায়ের দিকে দেখে… পা থামতে দেয়নি…লোকে তখন আমার রং ভুলে গেল আমি হয়ে গেলাম সেক্সি, ডাস্কি বাঙালি বাবু…’।
প্রসঙ্গত, সলিল চৌধুরী পুত্র সঞ্জয় চৌধুরী মালায়ালি ছবি কাধিকানের জন্য স্পেশ্যাল জুরি মেনশন সম্মান পেয়েছেন।