নীনা গুপ্তাদিন কয়েক প্রকাশিত হয় বলিউড অভিনেত্রী নীনা গুপ্তার আত্মজীবনী ‘সাচ কাহু তো’। পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া প্রকাশনা সংস্থার তরফে বইটি প্রকাশিত হয়। অভিনেত্রী করিনা কপুর খান ভার্চুয়ালি বইটি প্রকাশ করেন। বইতে জীবনযুদ্ধ এবং একাকীত্ববোধের গল্প উঠে এসেছে অভিনেত্রীর। উঠে এসেছে ভাঙা প্রেম, মাসাবার জন্ম এবং পরিবার নিয়ে আরো অজানা গল্প।
বইটি থেকে কয়েকটি কাহিনি এখানে তুলে ধরা হল:
সি-সেকশনের জন্য ‘কুমারী মা’ নীনার কাছে ছিল না দশ হাজার টাকা:
বইয়ের থেকেই একটি পাতার ছোট্ট অংশ নেটমাধ্যমে শেয়ার করেছেন তাঁর কন্যা মাসাবা গুপ্তা। কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডস এবং নীনা গুপ্তার কন্যা মাসাবা পেশায় একজন সফল ডিজাইনার। ওই অংশে আঁচ পাওয়া গেছে মাসাবার জন্মের সময় নীনার আর্থিক দুরাবস্থার কথা।
মাসাবার কথায়, তাঁর জন্মানোর প্রাক্কালে আর্থিক দিকে থেকে অত্যন্ত সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন নীনা। সেইমুহূর্তে অভিনেত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পড়ে ছিল মাত্র হাজার দু'য়েক টাকা। অথচ অপারেশন করাতে তৎকালীন খরচ ছিল কমবেশি ১০,০০০ টাকা। শেষ পর্যন্ত মাসাবার জন্মের জন্য নির্ধারিত 'ডেট' এর কিছুদিন আগে 'ট্যাক্স রিটার্ন'-এর সুবাদে নীনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৯,০০০ টাকা। স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন সন্তানসম্ভবা অভিনেত্রী। কারণ সেই মুহূর্তে সবমিলিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত টাকার অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১২,০০০ টাকায়।
নীনাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সতীশ কৌশিক:
আত্মজীবনীতে নীনা লিখেছেন, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন অবস্থায় তাঁকে ভরসা দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা বলি-অভিনেতা সতীশ কৌশিক। সন্তানসম্ভবা নীনাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, সঙ্গে এও বলেছিলেন যদি নীনার সন্তানের গায়ের রং চাপা হয়, তাহলে যেন অভিনেত্রী ওই সন্তানের বাবা হিসেবে সতীশের নাম লোকসমাজে পরিচয় দিতে ইতস্তত না করে। আর তার ওপর কেউ কোনও সন্দেহও করবে না কারণ সতীশের গায়ের রংও যথেষ্ট চাপা।
সমকামী ব্যাঙ্কে কর্মরত ব্যক্তিকে বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছিলেন নীনার বন্ধু:
আটের দশকে কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ফলশ্রুতি হিসেবে জন্ম নিয়েছিল তাঁদের কন্যা সন্তান মাসাবা।
নীনা লিখেছেন, তিনি যখন সন্তানসম্ভবা তখন বন্ধু সুজয় দত্ত তাঁর বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। পাছে নীনাকে লোকনিন্দার মুখোমুখি হতে হয়, সেই আশঙ্কায়। সেই ভেবে নীনার সঙ্গে এক ব্যক্তির বিয়ের ব্যবস্থাও তিনি প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন। এরপর নীনাকে সেই ব্যক্তির কথা বলে সুজয় জানান নামি ব্যাঙ্কের এক উঁচু পদে থাকা ওই আধিকারিক আসলে সমকামী। সামাজিক লজ্জা ও নিন্দা থেকে বাঁচতে তিনি নীনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। নীনার গর্ভের সন্তান নিয়েও বিন্দুমাত্র কোনও অসুবিদা নেই তাঁর। নীনা স্বচ্ছন্দে ওই সন্তানের পিতৃপরিচয় হিসেবে ওই ব্যক্তির নাম বলতে পারবেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি যে নীনা কিংবা তাঁর সন্তানের জীবনে জড়িয়ে থাকবেন না, সেকথাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল তখনই।
সব শুনে টুনে হেসে ফেলেছিলেন নীনা। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন শুধুমাত্র কোনওরকম 'বিতর্ক' এড়াতে তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি নন। নিজের সন্তানের জন্য একজন মা যতটা করতে পারে তিনি ততটাই করবেন। ততদূরই যাবেন। এর জন্য তাঁর মনে কোনও ভয় কিংবা চিন্তা নেই। আর আপাতত যতদিন তাঁর শরীরে অন্তঃসত্বা হওয়ার সব চিহ্ন প্রকট হচ্ছে, ততদিন তিনি ঢিলে পোশাক পরে চালিয়ে দেবেন কাজ!
ভিভ রিচার্ডের সঙ্গে দেখা করার ট্রিপ ক্যানসেল করতেই ৫ বছর কথা হয়নি তাঁদের মধ্যে:
মাসাবার সঙ্গে ভিভ রিচার্ডের দেখা করার পরিকল্পনা করেছিলেন নীনা। কিন্তু সেই সময় মাসাবার স্কুলের অ্যাডমিশন পড়ে যায়। মাসাবার সেই ট্রিপ নিয়ে বেজায় উচ্ছ্বসিত ছিল। বাবার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের বিষয়। নীনার এক আন্টি তাঁকে ‘জামনাবাই নারসি স্কুল’এর ট্রাস্টির সঙ্গে দেখা করায়। তবে ভিভ রিচার্ডের সঙ্গে ট্রিপে দিন মিলছিল না।
নীনা ভিভকে জানান, ট্রিপের দিন রিশিডিউল করতে হবে। তবে নীনার অ্যাডমিশনের বিষয় গুরুত্ব বুঝতে পারেননি ভিভ। এমনকি তিনিও ভিভকে সেই মুহূর্তে বোঝাতে পারেননি একটা শিশুর জন্য ভালো স্কুলে অ্যাডমিশন নেওয়াটা কতটা জরুরি। ভিভ মনে করেন নীনা সাক্ষাৎ করাটা প্রয়োজন মনে করেনি। শুধুমাত্র অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তেমনটা মোটেই নয়। তবে ভিভ রেগে গিয়ে ফোন কেটে দেয়। এরপর প্রায় ৫ বছর ফোন করেনি।
এক বছরের মধ্যে ভেঙে যায় নীনার প্রথম বিয়ে:
নীনার আত্মজীবনী ‘সাচ কাহু তো’ খুব অল্প বয়সে প্রথম বিয়ে সম্পর্কে লিখেছেন নীনা। এক বছরের মধ্যেই তাঁদের বিচ্ছেদ হয় বলে জানিয়েছেন। আত্মীজীবনীতে আমলান কুসুম ঘোষ নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন অভিনেত্রী। যাঁর সঙ্গে অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল নীনার। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তিনি সংস্কৃতে স্নাতকতা নিয়ে পড়ার সময়, ওই ব্যক্তি আইআইটির ছাত্র ছিলেন।
‘ক্যাম্পাসে আমি আর আমলান লুকিয়ে দেখা করেছিলাম। ওর হোস্টেল আমার আমার বাড়ির কাছেই ছিল জায়গাটা। ওর বাবা-মা অন্য শহরে থাকত তবে ওর দাদু আমার গলিতে থাকতেন, তাই ডব্লিউইএতে উত্সব এবং ছুটি কাটাতে আসত ও’। আমলনের সঙ্গে শ্রীনগরে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি পেতে নীনা তাঁর সঙ্গে বিয়ে করেন।
যদিও পরে দম্পতির দুজনের বুঝতে পারেন তাঁরা একে অপরের জন্য নয়। নীনার কথায়, ‘আমলানের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা ছিল। সময় এবং আমাদের বড় হওয়ার প্রেক্ষিতে, মনে হত ও ধরে নিয়েছিলেন আমি শেষ পর্যন্ত পরিবারে মনোনিবেশ করব। তবে আমি কিছুটা উচ্চাকাঙ্খী হয়ে উঠেছিলাম এবং নিজেকে কখনও একজন নিয়মিত গৃহিনী হিসাবে দেখিনি। আমি জীবন থেকে আরও চেয়েছিলাম এবং যত বেশি থিয়েটার করেছি, আমার পথ আরও প্রশস্ত হয়ে উঠেছে’। বিয়ের এক বছরের মধ্য়েই নীনা-আমলান আলাদা হয়ে যায়।
'চোলি কে পিছে'র শ্যুটিংয়ে নীনাকে ‘প্যাডেড ব্রা’ পরার নির্দেশ দেন সুভাষ ঘাই:
বইয়ের একটি অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে ‘খলনায়ক’ (১৯৯৩) ছবির সুপারহিট গান ‘চোলি কে পিছে’-র শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা। এই ছবি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সুভাষ ঘাই। নীনা জানিয়েছেন, কেমনভাবে এই গানের জন্য নীনার লুক দেখে রেগে গিয়েছিলেন পরিচালক, এবং মুখের উপর দাবি জানিয়েছিলেন- ‘প্যাডেড ব্রা’ পরবার। এই ঘটনা বেজায় লজ্জায় ফেলেছিল অভিনেত্রীকে।
নীনা আরও লেখেন, ‘ওরা আমাকে গুজরাতি লোকগানের পোশাক পরিয়ে সুভাষজির কাছে পাঠাল, লুক ঠিক আছে কিনা যাচাই করবার জন্য। উনি চিত্কার করে উঠলেন! বললেন- না,নাা, না! কিছু ভরো। আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলাম। আমি মনে হয়, উনি আমার চোলির কথা বলছিলেন এবং ওঁনার মতে সেটা আরও পরিপূর্ণ দেখানোর দরকার ছিল। আমি জানি উনি কোনও ব্যক্তিগত মন্তব্য করেননি… নিশ্চয়ই ওঁনার ভাবনায় কিছু একটা ছিল। সেইদিন আমি শ্যুট করিনি। পরের দিন আমাকে ওঁনার সামনে নিয়ে যাওয়া হল অন্য একটা পোশাকে, যার নীচে ছিল একটা মারাত্মক ভারী প্যাডেড ব্রা। দেখে মনে হল উনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। সুভাষ ঘাই খুব বেশি খুঁতখুতে মানুষ, ওঁনার কী চাই, কেমন চাই- সে ব্যাপারে আপোস করেন না… সেই কারণেই উনি এতো বড়োমাপের পরিচালক’।
এমনই আরো নানা অজানা গল্প নিজের আত্মজীবনীতে তুলে ধরেছেন নীনা।