আজকাল রিয়েলিটি শো, মেগা সিরিয়াল ইত্যাদি থেকে অনেক বাচ্চারা এবং প্রচুর নতুন ইয়ং ছেলেমেয়েরা উঠে আসছে। কাজের সুযোগ পাচ্ছে। আপনি কি বলেন?
সমস্যটা আসলে অনেক গভীরে, যত দিন যাচ্ছে মানুষ তত যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে। এই প্রজন্মকে আমরা কথায় কথায় দোষ দিই, তাদের অধৈর্য্য বলি, কিন্তু ওরা কেন এতটা উদ্ভ্রান্ত, ভেবে দেখেছি কখনও? কারণ আমরা ওদের ঠিক মত শেখাতে পারি নি। নিজের শিকড়কে চিনতে শেখাই নি, মাম্মা, পাপা এই কালচারে মানুষ করছি। শেখার ইচ্ছে কম, জেতার ইচ্ছা বেশি! রিয়েলিটি শো ধংশ করছে ওদের কেরিয়ার। কোথায় গেল রাশি ধারাবাহিকের সেই সুপার হিট অভিনেত্রী? একটা সময় কোন দল ওকে যাত্রা, থিয়েটারে হিরোয়িন করবে সেই নিয়ে কত টানাটানি! কিছুদিন পর সব কেমন থেমে গেল! একটা করোনা দেখিয়ে দিল অন্য জীবন দর্শন। টিভি সিরিয়ালে এত নতুন মুখ। এখন তাঁদের ভবিষ্যত সবচেয়ে অনিশ্চিত। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ডায়লগ বললে চলবে না, যাঁরা অভিনয় জানেন বা থিয়েটার করে এসেছেন তাঁরা নিজেদের ট্যালেন্টের জোরে কাজ পেয়ে যাবেন সিনেমায়,মঞ্চে বা অন্য কোনও মাধ্যমে। কিন্তু যাঁরা কিছুই জানেন না, কেবল সুন্দর চেহারা বা অন্য কোনও উপায়ে সিরিয়ালে কাজ করছেন তাঁদের ভবিষ্যত সত্যিই অতলে! কারণ এখন তো শুটিং করতে গেলে টিম ছোট করতে হবে। এটাই তো নিয়ম।
এদিকে ছোটদের ক্ষেত্রে যেটা হয়, বাচ্চারা রিয়েলিটি শোয়ের চ্যাম্পিয়ান হওয়ার পর তাদের গর্বিত বাবা মায়েরা কিছুদিন মেতে থাকেন শোয়ের বিজনেসে। ততদিনে হারিয়ে যায় সন্তানের ছেলেবেলা! ছোট বাচ্চাটা যেন একটা অর্থ উপার্যনের মেশিন। অথচ ২/১ টা সিজিন শেষ হলেই কমে যায় তাদের শো। কারণ ততদিনে নতুন চ্যাম্পিয়ান এসে গিয়েছে মার্কেটে। এইভাবে আর যাই হোক শিল্পী হওয়া যায় না। এটা কোনও সফলতা নয়। ঘরকা না ঘাটকা হয়ে থেকে যায় ওদের ভবিষ্যত। কিছুটা সময় খ্যাতির ঘেরাটোপে থাকার পর মানসিক ভাবে শিশুটি ওই জীবন যাত্রায় খানিক অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। এদিকে কিছু কাল পর যখন তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে তখন আবার সেই আগের জীবনে ফেরাটা ওই শিশুমনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। বাচ্চাটা হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। সে ভাবে সে হেরে গিয়েছে। বাচ্চাটি ডিপ্রেশনে চলে যায়।
আমি এই সবের বিরোধী নই। কম্পিটিশন হোক। তবে তাতে যেন কোনও চাপ না থাকে। প্রথম হতে হবেই, বা এক থেকে দশের মধ্যে নাম থাকতে হবে এটা যেন ওদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া না হয়। বাবা মা-দের বুঝতে হবে সন্তানের মনকে।