কদিন আগে একটি খবরে চোখ আটকায় সকলের। যেখানে দেখা যায়, গায়ক-মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অভিযোগ করেছেন, একটি হিন্দি রীন্দ্রসংগীত গাইতে যে পরিমাণ পারিশ্রমিক অরিজিৎ সিং-এর তরফ থেকে চাওয়া হয়েছে, তা নাকি ভাবতেই পারছেন না তিনি!
জানা যায়, মুম্বইয়ের এক খ্যাতনামা সংস্থার তরফে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটি হিন্দি অ্যালবাম বের করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর রবি ঠাকুরের গান গাওয়ার জন্য অফার দেওয়া হচ্ছে বাঙালি শিল্পীদের। সেই অ্যালবামের জন্যই অরিজিৎ সিংয়ের কাছে একটি একক এবং একটি দ্বৈত গান গাওয়ার অফার গিয়েছিল। আর অরিজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাবুল সুপ্রিয়কে। এরপরই অরিজিতের ম্যানেজারের তরফে নাকি জানানো হয়, গান প্রতি দেড় কোটি টাকা পারিশ্রমিক চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুটো গান গাইতে তিন কোটি।
অরিজিৎকে নিযে বাবুলের বক্তব্য:
আনন্দবাজারকে এক সাক্ষাৎকারে বাবুল এই নিয়ে মন্তব্য করেন, ‘অরিজিৎকে খুব সাদামাটা বলেই জানি। সেরকমই জীবনযাপনে অভ্যস্ত ও। সেদিক থেকে বাঙালি হিসেবে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার জন্য ওঁর দেড় কোটি টাকা পারিশ্রমিক চাওয়া, আমার কাছে অনুচিত বলেই মনে হয়েছে। যখন আমরা সকলেই তুলনামূলক কম পারিশ্রমিকে কাজ করছি।’ তবে এই কথা ভালোভাবে নেননি গায়কের ভক্ত-অনুরাগীরা। এবার বাবুলের কথার প্রতিবাদে লম্বা পোস্ট শেয়ার করলেন। অনিকেত মিত্র নামে এক ব্লগার। ফেসবুকে যিনি নিজের ডেসক্রিপশনে দিয়েছেন আর্টিস্ট, অথার, ফোটোগ্রাফার। তিনি অঙ্কন পেশার সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সমসাময়িক নানা ঘটনা নিয়ে যিনি প্রায় নিয়মিতই নিজের মতামত শেয়ার করে থাকেন।
বাবুলকে তুলোধনা সোশ্যাল মিডিয়াতে:
অনিকেত ফেসবুকে লিখলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে গেলেই বিনে পয়সায় গাইতে হবে এমন কথা কোথায় লেখা আছে আমি জানি না। অনেক পরিশ্রম করে অরিজিৎ সিং এই জায়গায় পৌঁছেছে। ওর সাধারন জীবন যাপনের সঙ্গে কোটি টাকার পারিশ্রমিক কোনোভাবেই যুক্ত নয়। বেশ করেছে তিন কোটি টাকা চেয়েছে। যে দেশে সঙ্গীত জগতের পরিকাঠামো এত নড়বড়ে, সেই দেশে একজন আন্তর্জাতিক মানের শিল্পী তার কন্ঠের ন্যায্য মূল্য চেয়েছেন। বাবুল সুপ্রিয় দেখলাম ইন্টারভিউতে বলেছেন, অরিজিতের এত সাদামাটা জীবনযাত্রার জন্য তিন কোটি পারিশ্রমিক দাবি অন্যায়।’
‘'অরিজিৎ সিং - রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছেন!' - কথাটায় না অরিজিতের গৌরব বৃদ্ধি হবে, না রবীন্দ্রনাথের অমর্যাদা হবে। আখেরে লাভের গুড় খাবেন তাঁরা, যাঁরা এই মিউজিক লঞ্চের সঙ্গে ব্যবসা করবে। কাজেই অরিজিৎ তিন কোটি দুটো গানের জন্য কেন, প্রতিটি গানের জন্য চাইলেও কোনো অন্যায় করেননি। বেশ করেছেন। শ্রীজাত এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, 'মন রে কৃষিকাজ জানো না' গানটি গাইতে অরিজিৎ এগারো টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। সুপ্রিয় বাবু কি সেই ইন্টারভিউটাকেই বেঞ্চমার্ক ধরে এগোচ্ছিলেন?’, আরও লেখেন তিনি।
দেখা গেল, অনিকেত মিত্রর কথার সঙ্গে একমত বেশিরভাগ মানুষ। একজন লিখলেন, ‘যোগ্যতা আছে তাই অরিজিৎ এই পারিশ্রমিক চেয়েছেন। বাবুল টুথপেস্ট আর কোলগেট এর কিছু তফাৎ আছে! ওটা বুঝতে হবে।’ অপরজন লেখেন, ‘বাবুল সুপ্রিয় হয়তো ভুলে গেছেন, উনি যখন হিট ছিলেন, উনি ও বিশাল টাকা ই চাইতেন’। অপর আরেকজন লেখেন, ‘অরিজিৎ সিং যা করেছেন ঠিক করেছেন। ওনার কন্ঠ উনি কতটাকায় বেচবেন সেটা ওনারই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিৎ এবং উনি তাই করেছেন। এখানে কারো কথা বলার অধিকার নেই। আর গানটা যেখানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের হিন্দি অনুবাদ, সেখানে তো সেটা অতি মূল্যবান হওয়াই উচিৎ। বাঙালি হয়ে গর্ব অনুভব করা উচিৎ সকলের।’