সুশান্ত সিং রাজপুত মামলার মূল অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তী এদিন সুপ্রিম কোর্টকে এদিন জানালেন দেশের শীর্ষ আদালত এই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দিলে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু বিহার পুলিশের এই মামলার তদন্ত করবার কোনওরকম জুরিসডিকশন নেই। এই দাবিতে অনড় রিয়া। গত মঙ্গলবার রিয়ার পিটিশনের শুনানির দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে এই মামলার সিবিআই তদন্ত এবং বিহার পুলিশের জুরিসডিকশন নিয়ে কোনওরকম রায় দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত। রায় সংরক্ষিত রেখে সেদিন সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষকে লিখিত জবাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বৃহস্পতিবারের মধ্যে।
সেদিন কোর্টরুমে শুনানি চলাকালীনই রিয়ার আইনজীবীর শ্যাম দিভানকে নিজের পর্যবেক্ষন থেকে আদালত প্রশ্ন করেছিল এই মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন আগে রিয়া চক্রবর্তী নিজেই জানিয়েছিল, তাহলে আপত্তি কোথায়?
এদিন রিয়া জানিয়েছেন, তাঁর কোনও আপত্তি নেই যদি সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় সংবিধানের ১৪২তম ধারা অনুযায়ী নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু বিহার পুলিশের এফআইআরের ভিত্তিতে যে মামলা সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাঁর। কারণ সেটি বিহার পুলিশের ‘আইনগত অধিকার ক্ষেত্রের বাইরে’ এবং 'আইন বিরোধী'।
এই মামলার তদন্তভার অবিলম্বে পাটনা থেকে মুম্বইয়ে স্থানান্তরিত করতে চেয়ে পিটিশন দায়ের করেছিলেন রিয়া। যদিও এই মামলার প্রথম শুনানির আগেই পাটনা পুলিশ এই মামলার তদন্ত তুলে দেয় সিবিআইয়ের হাতে। গত ৫ই অগস্ট কেন্দ্রের তরফে সেই আবেদনে মঞ্জুরি দেওয়া হয়। এবং এদিন রাতেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে এই মৃত্যুর তদন্ত সঁপে দেয় মোদী সরকার।
গত ১৪ জুন সুশান্তের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয় অভিনেতার দেহ। যদিও আজ মৃত্যুর ৫৯ দিন পরেও মুম্বই পুলিশ এই মামলায় কোনও এফআইআর দায়ের করেনি। সুশান্তের ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট বলছে ‘ঝুলে পড়বার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু’ হয়েছে অভিনেতার।
সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড রিয়া এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, সুশান্তের সঙ্গে প্রতারণা (আর্থিক ও মানসিক) এবং তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মতো অভিযোগ এনে গত ২৫শে জুলাই পাটনার রাজীব নগর থানায় এফআইআর দায়ের করেন কেকে সিং। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ (আত্মহত্যায় প্ররোচনা), ৩৪১,৩৪২,৩৮০,৪০৬, ৪২০-ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়।
রিয়া আদলতে জানিয়েছেন, ৮ই জুন পর্যন্ত গত এক বছর ধরে সুশান্তের সঙ্গে লিভ ইন রিলেশনশিপে ছিলেন তিনি। ৮ই জুন নিজের বাড়িতে শিফট করেন তিনি।
সুশান্তের পরিবারের তরফে বিহার পুলিশে দায়ের এফআইআরকে চ্যালেঞ্জ করে গত ২৯ শে জুলাই সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করেছিলেন রিয়া।রিয়ার আইনজীবী শ্যাম দিভান মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে জানান, পাটনা পুলিশ যে এফআইআর দায়ের করেছে, তার সঙ্গে পাটনায় হওয়া কোনও অপরাধের যোগ নেই। এফআইআর দায়েরে ৩৮ দিনের বেশি দেরি হয়েছে। তাতে রাজ্যের প্রভাব আছে এবং পক্ষপাতিত্ব আছে। বিহারে এফআইআর দায়েরের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আছে।’ এই দাবি একবাক্যে মেনে নেন মহারাষ্ট্র সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভিও। তাঁর কথায়, ‘মহারাষ্ট্র পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, একটাও নয়। কেউ যদি সেটা নিয়ে টানতে চায়, তাহলে আমরা তা করতে পারি। আমরা সবাই জানি, যে রাজ্য শীঘ্রই ভোট আছে, সেই রাজ্য কেন এরকম করছে। ভোটের পর আপনি এই মামলার বিষয়ে কিছু শুনতে পাবেন না।’
যদিও সুশান্তের পরিবার ও বিহার সরকারের দাবি এই মামলার তদন্তের অধিকার রয়েছে বিহার পুলিশের। নীতিশ কুমার সরকার এদিনও লিখিত জবাবে জানিয়েছে, এই মামলার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে কেকে সিং, মৃতের ৭৪ বছর বয়সী বাবা। তিনি পাটনার বাসিন্দা। এই বৃদ্ধই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুশান্তের মৃত্যুতে।পাশাপাশি মুম্বই পুলিশ এখনও এই মামলার কোনও এফআইআর রিপোর্টও দায়ের করেনি। বিহার পুলিশের কাছেই এই মামলার প্রথম ও একমাত্র এফআইআর ছিল, এরপর সেটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।