গোটা বিশ্ব তাঁর সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানায়, সন্ত্রাসবাদের চোখ রাঙানিকে সেই কোন ছোট বয়স থেকে চোখে চোখ রেখে মোকাবিলা করে চলেছেন তিনি। কথা হচ্ছে ২৩ বছরের সমাজকর্মী, বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপক মালালা ইউসুফজাই-র। এবার ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা হিসাবে পাওয়া গেল মালালাকে। নারী শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি মালালা, গত বছর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে চর্চিত এই গ্র্যাজুয়েটকে এবার দেখা গেল ভোগ (Vogue) ম্যাগাজিনের জুলাই ইস্যুর কাভারগার্ল হিসাবে।
লাল-সাদা-নীল তিনরঙের পোশাকে সেজে ভোগ-এর প্রচ্ছদ কন্যা হলেন মালালা। একদম নিখাদ পাকিস্তানি কন্যার সাজেই পাওয়া গেল মামালাকে,পরনে সালোয়ার কামিজ, মাথা ওড়না দিয়ে ঢাকা- কোনওকিছুতেই নিজের শিকড়ের টান ভোলেন না অক্সফোর্ডের এই কীর্তি ছাত্রী। ম্যাগাজিনের এডিটার এডওয়ার্ড মালালার এই শ্যুটের ঝলক প্রকাশ্যে এনে জানান, ‘আমি যাঁদের মন থেকে অনুসরণ করে চলি, সেই তালিকায় একদম উপরে রয়েছেন মালালা ইউসুফজাই’।
ভোগ ম্যাগাজিনের এই বিশেষ এডিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মালালাও অনেক কথা বলেছেন। বলেছেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি চুটিয়ে উপভোগ করেছেন। কখনও তিনি ম্যাকডোনাল্ডে ঢুঁ মেরেছেন কিংবা খেলেছেন পোকার। কলেজজীবনে বেশকিছুটা সময় নিজের মতো কাটিয়েছেন জানান মালালা। একথাও বলেন, বার্কিংহাম স্কুলে পড়াশোনার সময় খ্যাতি তাঁর বড় বিড়ম্বনা ছিল। তিনি বলেছেন, লোকজন আমাকে দেখলেই জানতে চাইতেন এমা ওয়াটসন, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অথবা বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তগুলো কেমন ছিল। মালালা যোগ করেন, ‘আমি ভেবে পাই না কী বলব, বিশ্রী এক ব্যাপার কারণ স্কুলের বাইরে আমাকে অনেকে ছাত্রী বা বন্ধু হিসেবে দেখে থাকে। আমি সবাইকে একটা কথাই বলতে চাই প্রত্যেকের সংস্কৃতির মধ্যে থেকেও নিজস্ব কণ্ঠস্বর প্রকাশ করতে পারলে তবেই বৈষম্যহীন পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব’।
অক্সফোর্ড থেকে দর্শন, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন মালালা।
২০১২ সালে তালিবানির চোখ রাঙানিকে পাত্তা না দিয়ে খুলে নারী শিক্ষার প্রচার চালানোয় ১২ বছরের 'বেয়াদপ' মেয়েটার মাথায় স্কুলে ফেরার পথেই সরাসরি মাথায় গুলি করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা। কিন্তু ফিনিক্স পাখির মতোই নতুন জীবনীশক্তিতে ফিরে এসেছেন মালালা। গোটা বিশ্বকে তিনি শিখিয়েছেন, 'একজন শিক্ষার্থী, একজন শিক্ষক, একটা বই, একটা কলম এই বিশ্বকে বদলে দিতে পারে'। পিছিয়ে পড়া বিশ্বে নারীশিক্ষা নিয়ে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছেন, তবে আজও নিজের জন্মভূতিতে ফেরা হয়নি। কিন্তু জঙ্গিদের চোখ রাঙানির তোয়াক্কা আজও তিনি করেন না।