প্রয়াত বলি-অভিনেতা সঞ্জীব কুমার যে অকৃতদার ছিলেন এ তথ্য সবারই জানা। তবে অনেকেই জানেন না একাধিকবার তাঁর ছাদনাতলায় বসার নহবৎ এলেও শেষপর্যন্ত 'বিবাহিত' শব্দটি তাঁর নামের পাশে সেঁটে ওঠেনি। তবে বাজারে সবথেকে প্রচলিত 'সীতা অউর গীতা' ছবিতে তাঁর নায়িকা হেমা মালিনীর সঙ্গে প্রেম কাহিনি। তবে একসময় তাঁদের মধ্যে প্রেম জমে উঠলেও বলাই বাহুল্য শেষপর্যন্ত সেই প্রেম টেকেনি।
এই প্রসঙ্গে এতদিন বিস্তর প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও কোনওদিন টুঁ শব্দ বের করেননি হেমা। তবে কিছুদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর জীবনী 'অ্যান অ্যাক্টর্স অ্যাক্টর'। সেই বইতাই বিশদে হেমা এবং সঞ্জীবের প্রেম এবং তাঁদের সম্পর্কের ভাঙার বিভিন্ন অজানা সব কারন নিয়ে বিস্তারিত একটি লেখা লিখেছেন লেখক জুটি হানিফ জাভেরি এবং সুমন্ত বাত্রা। সেই বই থেকেই ফাঁস হল 'সীতা উর গীতা' ছবির শ্যুটিং চলাকালীনই পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন এই দু'জন। বিশেষ করে ছবির 'হাওয়া কে সাথ সাথ' গানটির শ্যুট চলাকালীন একটি বড়সড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন সঞ্জীব ও হেমা দু'জনেই। সেই ঘটনার পরেই তাঁরা পরস্পর পরস্পরের জন্য ব্যস্ত জয়ে ওঠেন। নিজের থেকেও বেশি অপর পক্ষের শরীরের খোঁজ খবর রাখতে শুরু করেন তাঁরা। এমনভাবেই শুরু হয়েছিল তাঁদের মন দেওয়া নেওয়ার পর্ব।
ব্যাপার এতদূর গড়াল যে সঞ্জীবের বাড়িতেও হেমাকে পছন্দ হয়ে গেছিল। তবে সঞ্জীবের মা চাইতেন হেমা যেন বিয়ের পর বাড়িতেই থাকেন। মাথায় ঘোমটা দিয়ে, বুকে আঁচল জড়িয়ে শাশুড়ির পা ছুঁয়ে চলেন। সহজ কথায়, সঞ্জীবকে বিয়ে করার পর অভিনয় জীবনকে বিদায় জানাতে হাত হেমাকে। তেমন প্রস্তাবই 'ড্রিম গার্ল'-কে দেওয়া হয়েছিল সঞ্জীব কুমারের পরিবারের তরফে। স্বাভাবিকভাবেই এহেন প্রস্তাব শুনে ক্ষুণ্ন হয়েছিলেন হেমা মালিনী এবং তাঁর মা দু'জনেই। এরপর তাঁদের বাড়িতে মা'কে সঙ্গে করে নিয়ে এসে হেমাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন সঞ্জীব। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার হয়ে গেছে। সম্পর্ক থেকে মন উঠে গেছিল হেমার। সরাসরি সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন 'বসন্তী'।
তবে ১৯৯১ সালে জুনিয়র জি পত্রিকার জন্য ভাবনা সৌম্যা-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে হেমা সরাসরি জানিয়েছিলেন তাঁর পক্ষে নিজের কাজ, কেরিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে তথাকথিত 'ঘরের আদর্শ বউ' হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। সঞ্জীব চাইত তাঁর স্ত্রী যেন স্রেফ তাঁর মায়ের দেখভাল করে, সেবায় নিয়োজিত হয়! তবে এসব বলেও আমি বলব সঞ্জীব কুমারকে বিচার করতে না। কারণ সেই সময়টাও অন্যরকম ছিল। বেশিরভাগ মানুষের চিন্তাধারাও আজকের মত এতটাও উদার ছিল না'।