সালটা ২০১৫। ওপেন টি বায়োস্কোপ নামক একটা ছবি মুক্তি পেল। আর এই ছবিটি এক সঙ্গে অনেক কিছু দিল। প্রথম দর্শকদের একটা ভালো ছবি। টলিউডকে আগামীর উঠতি তারকা। এবং অবশ্যই এই ছবির শিল্পীদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল নিখাদ বন্ধুত্ব। যাঁরা পর্দায় বন্ধুত্ব জমিয়েছিলেন, বাস্তবেও তাঁরা হয়ে উঠলেন ভীষণ বন্ধু। কিন্তু এই সব কিছুর মাঝে ঘটে গিয়েছিল আরও একটা জিনিস। সবার অলক্ষ্যে! ঋদ্ধি-সুরঙ্গনার প্রেম।
ওঁদের প্রথম দেখা সিনেমার সেটে হয়েছিল। যা হয়, একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পরিচিতি গড়ে ওঠে। সেটাই বন্ধুত্বের আকার পায়। এবং অবশেষে... না প্রেমটা ঘটেনি তখন। কেন? কারণ তখন নায়িকা অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। আর নায়ক? তিনিও তাই। যদি তিনি ভিতর ভিতর বেশ টের পাচ্ছিলেন যে তাঁর মন অন্য কোথাও আটকে পড়েছে। তারপর? আর কী! যা হওয়ার ঠিক তাই হল। সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে প্রেমে পড়লেন ওঁরা।
আর তাঁদের প্রেমের জন্মদিন কবে জানেন? পয়লা বৈশাখ! সেই কারণেই তো এই বিশেষ দিনের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট মাধ্যমে জানান ঋদ্ধি। লেখেন, 'প্রথম দেখা আট বছর আগে l তবে এই অন্তহীন শেষের জন্মভূমিতে ‘আজটাই প্রথম’। ১৫ এপ্রিল। এই আট বছর ধরে প্রতি মুহূর্তে একটা করে শুরুর খোঁজ করে চলেছি।'
ঋদ্ধি আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানান তাঁদের এই ৮ বছরের প্রেমের পথ চলার উদযাপন করেন থিয়েটারের মঞ্চেই। পয়লা বৈশাখের দিন ঋদ্ধির শো ছিল। সেদিন প্রথমবারের জন্য মঞ্চস্থ হয় আজকের সাজাহান। সেখানে অভিনেত্রী যান। অভিনেতার কথা অনুযায়ী তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে এভাবেই সময় কাটান, কখনও নাটকের মঞ্চে তো কখনও সেটে, কিংবা বাড়িতেই।
২০১৩ সালে ঋদ্ধি সুরঙ্গনার আলাপ। ওপেন টি বায়োস্কোপ ছবির জন্য। লুক টেস্টের সময় নাকি তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে ভীষণ অনিচ্ছা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর তাঁদের ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু প্রেম হয় ২০১৫-তেই। যখন ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল। অভিনেতা এই বিষয়ে জানান, 'সুরঙ্গনার জীবনে তখন অন্য কেউ এসেছিল। ও অন্য সম্পর্কে জড়াতে অনুভব করি যে আমার একটা কষ্ট হচ্ছে। সেই সময়ই বুঝি ওর প্রতি আমার একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছে।' কিন্তু ভাগ্যক্রমে সুরঙ্গনার সেই সম্পর্ক টেকেনি। আর সেটায় খানিক লাভ হল যেন ঋদ্ধির। অভিনেতার কথা অনুযায়ী, 'ওর সামনে দুঃখপ্রকাশ করলাম ঠিকই। তবে মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম।' তাঁদের এই সম্পর্ক গড়ে উঠতে খুবই সাহায্য করেছিলেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কীভাবে মনের কথা জানিয়েছিলেন ঋদ্ধি? অভিনেতার কথা অনুযায়ী, তিনি নাকি একটি বিশাল বড় চিঠি লিখেছিলেন তারপর ছবির মতোই তিনি সেটা বইয়ে ভরে দিয়ে এসেছিলেন অভিনেত্রীকে। ঋদ্ধির কথা অনুযায়ী, তাঁরা যখন ক্লাস টুয়েলভে পড়েন তখন বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করানোর পর অভিনেত্রী তাঁকে হ্যাঁ বলেছিলেন।
কোন মন্ত্রে আজকের দিনে দাঁড়িয়েও তাঁদের এই সম্পর্ক টিকে গেল? অভিনেতার জানান তাঁদের মধ্যে কোনও ইগোর লড়াই নেই, নেই ভুল বোঝাবুঝি। তাঁরা যে যেমন সেইভাবেই আরেকজন মেনে নিয়েছেন। কেউ কাউকে পাল্টাতে চান না। সব থেকে বড় কথা তাঁরা একে অন্যকে ভীষণ শ্রদ্ধা করেন। এবং তার থেকে বেশি ভালো বন্ধু।
দেখতে দেখতে সম্পর্কের এত বছর পার, এবার কি তবে বিয়ে করতে চলেছেন? উত্তর ঋদ্ধি বলেন, সুরঙ্গনা তাঁকে জানিয়েছেন, 'বিয়ের মানে কী? একটা এনজেগমেন্ট রিং, সই, মালাবদল? এতে কী প্রমাণ হয়? আমরা যে একসঙ্গে আছি, এটাই কি যথেষ্ট নয়?' আর অভিনেতা তাঁর বেটার হাফকে সমর্থন করে বলেন, 'আমরা তো একইসঙ্গে থাকি। এত বছর ধরে একসঙ্গে আছি। সম্পর্কটা তো অফিসিয়াল।'