কোন ইনস্টিটিউশন এ নয়, 'পঞ্চায়েত' সিরিজের বিনোদ ওরফে অশোক পাঠকের অভিনয়ের হাতে খড়ি হয়েছিল ক্লাস নাইনে তুলো বিক্রি করতে গিয়ে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, অন্তত অভিনেতা তো তাই দাবি। 'পঞ্চায়েত'-এর বিনোদ কীভাবে পাল্টে দিল অশোকের জীবন? সেই গল্পই অভিনেতা শেয়ার করলেন নিজে।
জোশ টকের মঞ্চে অভিনেতা জানান, অভাবের সংসার তাই ক্লাস নাইন থেকেই কাকার দেখাদেখি তুলোর ব্যবসা শুরু করতে হয়েছিল তাঁকে। মে-জুন মাসের প্রখর রোদে সাইকেল চালিয়ে তিনি ফরিদাবাদ থেকে নানা জায়গায় তুলো বিক্রি করতে যেতেন। আর সেখানে গিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে ওষুধ বিক্রেতাদের কাছে তুলো কেনার কথা বলতেন। অশোক বলেন, 'আমার অসহায় মুখ দেখে অনেকেই তুলো কিনে নিতেন। এমনকি যাদের প্রয়োজন নেই সেরকম লোকজনও মাঝে মধ্যে আমার থেকে তুলো কিনতেন। ভাবতেন একটা বাচ্চা ছেলে রোদে ঘুরে তুলো বিক্রি করছে। আর আমিও সেটাকে কাজে লাগাতাম, আমার মনে হয় সেখান থেকেই আমার অভিনয়ের হাতেখড়ি।"
আরও পড়ুন: উইকএন্ডে ‘পঞ্চায়েত ৩’ দেখবেন ভাবছেন? দেখার আগে জেনে নিন কেমন হল
অশোক জানান, স্নাতকের সময় থেকে তাঁর জীবন নেয় নতুন মোড়। ছোট থেকে গান-বাজনা এবং অভিনয় প্রতি তাঁর শখ ছিল। চোখে ছিল একরাশ স্বপ্ন, তাঁর বিশ্বাস ছিল একদিন তিনি বড় কিছু করবেন। একদিন ঠিক তাঁকে সবাই চিনবে। তারপর কলেজ জীবনেই এল প্রথম সুযোগ। কলেজের প্রফেসররা তাঁকে একটি নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব দেন। তারপর আসতে আসতে নাটকে নির্দেশকের কাজ করে তিনি ৪০,০০০ টাকা জমান। সেই টাকা নিয়ে পা রাখেন মুম্বইতে। সেই সময় অবশ্য তাঁর বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে মজা করতেন। অভিনেতা বলেন, "আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলত, ও নায়ক হবে মুম্বই গিয়ে, তাছাড়া কটাক্ষ করতেও ছাড়ত না। তাঁরা বলেছিল, তোকে দেখতে ভালো না, কে সিনেমায় কাজ দেবে তোকে?"
কিন্তু সবার কথাকে ছাপিয়ে প্রথম অডিশনেই বাজিমাত করেন তিনি। অল্প পারিশ্রমিক হলেও, প্রথম কাজের সুযোগ পান। তারপর আরও নানা জায়গায় অডিশন দিতে থাকেন। একমাসের মধ্যেই একটি বিজ্ঞাপণে কাজের সুযোগ আসে। দু'দিনের কাজ ছিল। এক এক দিনের কাজের জন্য তিনি পেয়েছিলেন ৭০,০০০ টাকা। এই প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, "প্রথমে আমার নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না, ভেবেছিলাম আমার বন্ধু মনে হয় আমার সঙ্গে মজা করছে। তাই বারবার তাঁর থেকে জানতে চাইছিলাম কত টাকা ৭০,০০০ নাকি ১৭,০০০? আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একমাসেই হয়ে গিয়েছিল প্রায় এক লাখ টাকা। টাকার অংকটা দেখে আমার বাবাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ তিনিও তার কর্মজীবনে একসঙ্গে এতগুলো টাকা কখনও রোজগার করে উঠতে পারেননি।"
আরও পড়ুন: 'পঞ্চায়েত'-এর নির্মাতাদের সঙ্গে বিবাদ জিতেন্দ্রর? কী বললেন নায়ক
পঞ্চায়েতে প্রসঙ্গে অশোক বলেন,"আমার কাছে 'পঞ্চায়েত'-এর কাজটাও আর পাঁচটা কাজের মতই ছিল। আমি কেবল সততার সঙ্গে আমার কাজটুকু করেছিলাম। কিন্তু তারপর যখন সিরিজ মুক্তি পেল এবং সবাই এই চরিত্রটাকে এত ভালোবাসা দিল, সেটা আমাকে খুব অবাক করেছিল। কারণ এই চরিত্রটা থেকে আমি সেই প্রত্যাশাই করিনি। ১২ বছর আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি কিন্তু যে চরিত্রটাকে নিয়ে সেভাবে ভাবনা চিন্তাই করিনি, সেটা যখন সকলের কাছ থেকে এত প্রশংসিত হল, তখন আমার একটা উপলদ্ধি হয়, ছোট বড় যেরকমই সুযোগ আসুক না কেন সেটাতে নিজেকে ঢেলে দেওয়ার মধ্যেই সার্থকতা। এই চরিত্রটা দেখে সেই সময় আমাকে অনেকেই ম্যাসেজ করতেন। আর সেই ম্যাসেজ পড়ে পড়ে আমি কাঁদতাম।"