সঙ্গীতের জগতে নক্ষত্রপতন। দীর্ঘ রোগভোগের পর চলে গেলেন গজল সঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব পঙ্কজ উদাস। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তাঁর সঙ্গীত জীবনের বিস্তার চার দশকেরও বেশি সময়। এদিন মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে বেলা ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় শিল্পীর।
পরিবারের তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে পঙ্কজ উদাসের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত ভারী মনের সঙ্গে জানাচ্ছি, পদ্মশ্রী পঙ্কজ উদাস প্রয়াত হয়েছেন, ২৬শে ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন’। গায়কের কন্যা নায়াব উদাস ইনস্টাগ্রামে বাবার মৃত্যুর খবর ভাগ করে নেন।
ভারতীয় সঙ্গীত জগতের আকাশের আরও এক তারা খসে পড়ল সোমবার। হিন্দি সিনেমা এবং ইন্ডি-পপের জগতে তাঁর অবদান ভোলার নয়। লাইভ অনুষ্ঠান হোক বা অ্যালবাম কিংবা ছবির গান, আশি ও নব্বইয়ের দশকে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তিনি। ‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিল কর রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি প্যার করো’, নিকলো না বেনাকাব’— পঙ্কজ উদাসের গাওয়া এই সব গজল আজও ভুলতে পারেনি শ্রোতা-দর্শকরা। ‘নশা’, ‘পয়মানা’, ‘হসরত’, ‘হামসফর’-এর মতো জনপ্রিয় অ্যালবাম রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। জগজিৎ সিং-কে বলা হয়, গজল সম্রাট। আর সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে ‘গজল কিং’ পঙ্কজ উদাস।
রাজকোটের কাছে অবস্থিত চারখাদি নামের এক ছোট্ট শহরে ১৯৫১ সালের ২৭শে মে জন্ম পঙ্কজ উদাসের। জমিদার পরিবারের ছেলে তিনি। বাবা, কেশুভাই উদাস সরকারি চাকরিজীবী হলেও দিলরুবা বাজাতেন। ছোট থেকেই সঙ্গীতের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা তাঁর। ছেলেকে রাজকোটের সঙ্গীত অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করান পঙ্কজ উদাসের বাবা। শুরুতে তবলার তালিম নিলেও পরবর্তীত গুলাম কাদির খান সাহেবের কাছে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। পরে মুম্বইয়ে এসে গোয়ালিয়ার ঘরনার শিল্পী নবরঙ্গ নাগপুরকরের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন।
১৯৮০ সালে প্রকাশিত ‘আহত’ ছিল তাঁর ডেবিউ গজল অ্যালবাম। পরের বছর মুক্তি পায় মুকারার, ১৯৮২ সালে তারান্নুম, ১৯৮৩ সালে মেহফিল… একের পর এক হিট অ্যালবাম আশির দশকে উপহার দিয়েছেন তিনি। নাম ছবিতে ‘চিঠটি আয়ি হ্যায়’ গেয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন পঙ্কজ উদাস। নব্বইয়ের দশকে ‘ঘায়েল’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট (মাহিয়া তেরি কসম) গেয়েছিলেন প্রয়াত শিল্পী, মোহরা ছবিতে সাধনা সরগমের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘না কজরেকি ধার’ গেয়েছিলেন। তবে আজকের প্রজন্ম তাঁকে সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে ইন্ডি-পপের জন্যই।
সঙ্গীত জগতে অবদানের জন্য অজস্র সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন প্রয়াত শিল্পী। ২০০৬ সালে ভারত সরকারের তরফে চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন গায়ক।
পঙ্কজ উদাসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া সঙ্গীতের দুনিয়ায়। সোনু নিগম ইনস্টাগ্রামে শোকপ্রকাশ করে লেখেন, ‘আমার ছেলেবেলার অন্যতম জরুরি অংশ, আজ হারিয়ে ফেললাম। পঙ্কজ উদাসজি আপনাকে খুব মিস করব। আমার হৃদয় কাঁদছে। পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ, ওম শান্তি’।