বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই পরিচালক, ফেডারেশন বলা ভালো টেকনিশিয়ান কাজিয়া চলেই আসছে। কখনও কখনও সেটার নগ্ন রূপ বেশি করে দেখা যাচ্ছে। এবার ক্যামেরাম্যান গিল্ডের তরফে স্বপন মজুমদার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই প্রমাণ সহ জবাব দিয়ে কী বললেন পরিচালক-অভিনেতা?
আরও পড়ুন: কনসার্টের মাঝে হুমড়ি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে পড়তে বাঁচলেন এপি ধিলোঁ! নিমেষে ভাইরাল ভিডিয়ো
কী ঘটেছে?
সম্প্রতি ক্যামেরাম্যান গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মজুমদার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন। জানান পরিচালক, অভিনেতা নাকি মিথ্যে প্রচার করছেন। টলিউডের বাইরে থেকে ক্যামেরাম্যান, বা ডিওপি আনালে এখানকার কোনও ক্যামেরাম্যানকে টিমে নিতেই হয় সেটা নাকি সঠিক নয়। এমন অভিযোগ উঠতেই শনিবার, ৭ ডিসেম্বর একগাদা প্রমাণ সহ সোশ্যাল মিডিয়াতেই জবাব দিলেন পরমব্রত।
মোট ৪টি ঘটনার প্রমাণ তিনি এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পেশ করেন। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, 'গতকাল ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনেমাটোগ্রাফারস অ্যাসোসিয়েশন (সহজ করে বললে কলকাতা ইন্ডাস্ট্রির ক্যামেরাম্যান গিল্ড)-এর সাধারণ সম্পাদক শ্রী স্বপন মজুমদার আমাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েএকটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন। প্রসঙ্গটা একটু পরিষ্কার করি। ৩ ডিসেম্বর DAEI এর তরফ থেকে যে প্রেস কনফারেন্স করা হয়, সেখানে আমি বলেছিলাম যে টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে যদি বাইরে থেকে কোনো ক্যামেরাম্যান/ DOP কে নিয়ে আসা হয়, তাহলে গিল্ডের (বকলমে ফেডারেশনের) নির্দেশে আমাদের প্রয়োজন না হলেও কলকাতা থেকে একজন ক্যামেরাম্যান বা ডিওপিকে নিয়োগ করতে হয এবং ক্যামেরা বিভাগে অতিরিক্ত লোকজন নিতে হয় | টালিগঞ্জের বহু বেনিয়ম নিয়ে সেদিনকে আমরা নানান তথ্য মিডিয়ার সামনে রাখি। তার মধ্যে এটিও ছিল। স্বপন বাবু বাকিগুলো নিয়ে কিছু বলেননি, এই বিশেষ কথাটা যে সম্পূর্ণ মিথ্যে এইটা স্পষ্টভাবে দাবি করেছেন। এও বলেছেন, আমি যদি আমার কথার স্বপক্ষে প্রমাণ দিতে পারি তাহলে একদিনের মধ্যে উনি গিল্ডের সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নেবেন, এমনকি ইন্ডাস্ট্রি থেকেও বিদায় নেবেন। সেদিনকার সমস্ত তথ্য যদিও সাধারণভাবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়, যেহেতু অভিযোগটা আমার দিকেই উঠেছে, তাই আমি এটার উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছি। উনি প্রমাণ চেয়েছেন। আমি সেটাই দিচ্ছি। প্রত্যেকটা প্রমাণ এইপোস্টের সঙ্গে ছবি হিসেবে আলাদা করে অ্যাটাচ করে দিয়েছি। প্রমানের এবং এটাচ করা ছবি বা স্ক্রিনশটের ক্রম একই।'
প্রমাণ দেওয়ার পর পরমব্রত লেখেন, 'স্বপনদা, দীর্ঘদিন ধরে তোমায় চিনি। সারা জীবন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একজন দক্ষ চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে তুমি সুনামের সঙ্গে কাজ করেছ। আজকে যাদের চাপে পড়ে তুমি ফেসবুকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে এইভাবে জনসমক্ষে অপদস্থ হলে, মাথায় রেখো তারা কেউ কেউ কিন্তু সারা জীবনে কোনদিন সিনেমায় হাতে কলমে কাজ করেননি । তারা সিনেমার কেউ নন! তারা তোমার মত শয়ে শয়ে কর্মী /শিল্পীকে প্রতিদিন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কী হাল হচ্ছে তা তোমার থেকে ভালো কেউ জানে না। কার্ড নিয়ে নানান প্রমাণ দিলাম ঠিকই, কিন্তু এটাও মাথায় রেখো ভারতবর্ষের আইন অনুসারে কার্ড থাকা বা না থাকা দিয়ে কিছু এসে যায় না। এ ব্যাপারে কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার পরিষ্কার রায় আছে। কার্ড থাকলে একজন কলাকুশলী অ্যাসোসিয়েশনের সুবিধাগুলো পান মাত্র। কিন্তু কাউকে বৈধ কোনো কাজ করা থেকে আটকানো ভারতীয় আইনে অপরাধ। এই সহজ কথাটা আমরা কিছুতেই তোমাদের বা ফেডারেশনের হর্তাকর্তাদের বোঝাতে পারছি না। কথায় বোঝাতে না পেরে বাধ্য হয়ে সেই কম্পিটিশন কমিশনের-এর কাছেই আইনি সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হয়েছি। তুমি বলেছ প্রমাণ দেখালে তুমি একদিনে ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিদায় নেবে। কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি আমি বা ডিরেক্টারস অ্যাসোসিয়েশনের কেউ এক মুহূর্তের জন্য চায় না তুমি এই কাজটা করো। আমরা চাই তুমি সারা জীবন এখানে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাও। কিন্তু তোমার মত আমি ইন্ডাস্ট্রির বাকি টেকনিশিয়ানদেরও বলছি, কাদের হাতে প্রতিদিন তোমরা ব্যবহৃত হচ্ছো এবং তার ফলে এভাবে আত্মসম্মান খোয়াচ্ছ সেটা একবার নিজেরা ভেবে দেখো।'