শনিবার সকালে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সল্টলেকে চলা জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর হঠাৎ হাজির হওয়া নিয়ে প্রশংসা করেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তবে রবিবার সকালে, অনেকগুলো প্রশ্ন তুললেন তিনি শনিবারের গোটা দিনের ঘটনাবলী নিয়ে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, দিন শেষে কার হয়ে কথা বললেন এই অভিনেতা!
আরজি কর নিয়ে প্রথম থেকেই সরব পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। বেশ কিছু মিছিলেও হেঁটেছেন তিনি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী যখন মেয়েদের নাইট ডিউটি করা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেন, তখন প্রতিবাদ করেছিলেন। রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকা ডাক্তারদের ছবি শেয়ার করে পরম লিখলেন, ‘অত্যন্ত ভদ্রভাবে, কোনোরকম শালীনতা বা ভব্যতার সীমা না অতিক্রম করেও যে দৃঢ় ভাবে নিজেদের দাবির কথা বলা যায়, তার প্রত্যক্ষ প্রমান হয়ে থাকবে গতকাল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতীক্ষা! উল্টো দিকের মানুষটিকে সম্মান জানিয়েও নিজেদের সম্মান ও সুরক্ষার জন্যে তাদের যে লড়াই, সেটি নিজেদের দাবিগুলির প্রতি তাদের বিশ্বাস, এবং বৃহৎ পরিণত মনস্কতার পরিচয়! কুর্নিশ তাদের!’
এরপর মমতার জন্য লেখেন, ‘অন্যদিকে , এই ঘটনার আগে , ধর্ণা মঞ্চে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর পৌঁছে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ জানানোর মতো, অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ ! দেশের অন্য কোনো রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে শাসকের এরকম ভঙ্গি দেখা গেছে বলে আমার স্মৃতিতে বা জ্ঞাতসারে নেই | খুব কম প্রশাসনই এতটা সময় ধরে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলন চলতে থাকা বরদাস্ত করে ! সাধারণত তাদের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো আন্দোলনকে আরো অনেক আগেই রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে দমিয়ে দিতে তারা চেষ্টা করে...উত্তর ভারতে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা কৃষক আন্দোলন তার জ্বলন্ত উদাহরণ ! এরকম উদাহরণই বেশি … এক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসন তা করেনি , এই কথা অনস্বীকার্য!’
এরপরই কিছু প্রশ্ন তুললেন অভিনেতা। যা এখন মনের কথা বহু সাধারণ মানুষেরই। অভিনেতা জানতে চান, ‘এই পদক্ষেপ আরেকটু আগে নেওয়া যেত না? ডাক্তাররা অভয়ার মৃত্যুকে সামনে রেখে অনেক বড়ো আন্দোলনে নেমেছেন... সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে ঘূণ ও ভয় মুক্ত করার লড়াই … রাত দখলের লড়াই একটা ছোট এক রাতের অবস্থান নয়! লিঙ্গ বৈষম্যের মানসিকতা ও রাজনীতির মুলে আঘাত হানার এক ভীষণ দরকারি চেষ্টা …আগ বাড়িয়ে দলীয় রাজনীতির রঙে না রাঙিয়ে, এনাদের সঙ্গে আরো আগে এনগেজ করা যেত না?সমস্যা গুলি সমাধানের চেষ্টা আগে শুরু হতো, শাসকের মানবিক মুখ আরো আগে মানুষ দেখতে পেতো!’
‘সব থেকে বড়ো কথা, এই যে বার বার কাজে ফিরতে বলা হচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের, সেটা অনেক আগেই হয়তো তারা স্বেচ্ছায় করতেন, তাদের কথা গুলো শোনা হলে! অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা যে পরিষেবা পাচ্ছেন না, তার দায় তাহলে কার ? ডাক্তারদের একার?’, আরও লেখেন পরমব্রত।
অভিনেতার দ্বিতীয় প্রশ্নও বেশ যুক্তিসঙ্গত। অন্তত শনিবারের গোটা দিনের ‘রাজনৈতিক মাস্টারস্ট্রোক’ যে এভাবে শেষ হবে, তা হয়তো অনেকেরই ছিল কল্পনার অতীত। পরমব্রতর দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দু পক্ষের আলোচনা একটি নেগোশিয়েশন, সেখানে কিন্তু রাষ্ট্র এবং আন্দোলনকারী, দু পক্ষেরই সমান অধিকার! লাইভ স্ট্রিমিং যদি বা নাও হয়, ভিডিয়ো রেকর্ড করতে চাওয়াটা সম্পূর্ণ ন্যায্য! তাছাড়া তারপরেও তো তাঁরা সব মেনে নিয়ে মিটিং করতেই চেয়েছেন! আধ ঘন্টা সময়! তখন আর করা হলো না কেন?’