আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ক্রমেই তীব্র হচ্ছে আন্দোলন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ একজোট হয়ে প্রতিবাদে সুর চড়াচ্ছেন এই নারকীয় ঘটনার বিরুদ্ধে। বিদ্রোহের আঁচ কলকাতা ছাড়িয়ে আছড়ে পড়েছে শহরতলিতেও।
১৪ই অগস্ট রাত দখলের ডাক দিয়েছে মেয়েরা। সেই বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে তথা ‘অভয়া’র মৃত্যুর প্রতিবাদে এবার সরব হলেন ‘পারিয়া’ পরিচালক তথা অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়। তিনি ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন, ‘এটা যেন সত্যি হয়...সাঁ সাঁ শব্দ করে সাইলেন্সার হীন যে বাইকটা পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো সেটার চালক একজন মহিলা। যে দু তিনজন বন্ধু গালিগালাজ করতে করতে হালকা বেসামাল হয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তারাও সবাই মেয়ে।পানশালায় ছেলেটির পোল ডান্স দেখে যারা চিৎকার করছে, সিটি দিচ্ছে তাদের মধ্যে একজনও ছেলে নেই। অন্ধকার গলির মুখে জটলা করে যে কজন মদ খেয়ে হল্লা করছে, তারা সবাই মেয়ে। লরি থামিয়ে ঘুষের দশ টাকা নিচ্ছে একজন মহিলা কন্সটেবল। ফুটপাতে শুয়ে থাকা মেয়েটা একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় একটা বিড়ি ধরাল। সিনেমা শেষ হতে অনেক রাত হয়েছে তাই প্রেমিককে বাড়ি পৌঁছতে এসেছে প্রেমিকা। যে চারজন আজ রাতে ডাকাতি করতে বেরিয়েছে কালো মাংকি ক্যাপ পড়ে তারা সবাই মেয়ে। স্যানিটারি ন্যাপকিন কুচিয়ে ছিঁড়ে জানলা দিয়ে ওড়াচ্ছে ছোটো দুই বোন, হাওয়ায় ভাসছে, ছড়িয়ে পড়ছে শহরের দিকে। ছেলের ফিরতে রাত হয়ছে তাই মা রাস্তার মোড় অবধি খালি পায়চারি করছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তিনটে মহিলা পুলিশের আজ সারারাত ডিউটি পড়েছে সোনাগাছিতে,পরশু একটা ছেলে বেশ্যা খুন হয়েছে ওখানে। একটা মেয়ের গলা পাচ্ছি কারুর নাম ধরে রাস্তায় খিস্তি দিচ্ছে। আর আমি ঘরে লুকিয়ে আছি, যেন সিগারেট অবধি কিনতে বেরোতে না হয়।আমি তো কাপুরুষ,ভীতু,ধান্দাবাজ,ধর্ষকদের প্রতিনিধি। আমায় যেন রাতে কোথাও বেরোতে না হয়। কারন রাত এখন শুধু মেয়েদের। শহরে মধ্যরাত শাসন করে শুধু মেয়েরা।’
কিন্তু তথাগতর এই স্বপ্ন কি সত্যি সম্ভব? যা কিছু ছেলেরা করে এসেছে, অনায়সে সেই সবকিছু মেয়েরা করতে পারবে? তথাগতর অন্তত সেইটুকুই চাওয়া। তিনি চান, এবার পুরুষ চমকাবে। নারীরা রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেবেন।
আরজি কর কাণ্ডে হাসপাতালের প্রাক্তন পুরুষ অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তথাগত। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘আরজি কর-কাণ্ডে পুরুষ অধ্যক্ষ কত সহজে বলে দিলেন, অত রাতে ফাঁকা ঘরে তরুণী চিকিৎসক বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন কেন? তিনি একবারও দায় নিয়ে বললেন না, তাঁর হাসপাতালের বিশ্রামাগার নারীদের জন্য নিরাপদ নয়।’
মেয়েরা কেমন পোশাক পরবে,তা একান্তভাবেই মেয়েদের সিদ্ধান্ত। ছেলেদের শাসন করতে হবে, যাতে তারা মেয়েদের উপর কু-দৃৃষ্টি না দেয়, তবেই তো সবার জন্য একটা সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে।