২০২১ সালের ৭ই অগস্ট। টোকিও অলিম্পিকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ভারতকে প্রথম সোনা এনে দিয়ে ইতিহাস লিখেছিলেন নীরজ চোপড়া। অ্যাথলেটিক্সে ভারত অলিম্পিক পদক জিততে পারে, সেই আশাই এর আগে কোনওদিন করেনি ভারতবাসী। স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন নীরজ, তিন বছর পর ফের নীরজের সামনে ছিল ইতিহাস লেখবার হাতছানি।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গোটা দেশের চোখে ঘুম নেই। জ্যাভলিনের ফাইনালে দেশকে প্যারিস অলিম্পিকের প্রথম সোনা এনে দেবেন নীরজ, বিনেশের পদক হাতছাড়া হওয়ার দুঃস্বপ্ন ঘোচাবেন, এমন আশা ছিল। তিন বছর পর 'সোনার ছেলে' নীরজের হাতে উঠল রুপো। বন্ধু আরশাদ নাদিমের অনবদ্য পারফরম্যান্সের সামনে বৃহস্পতিবার হার মানলেন চোট সমস্যায় জর্জরিত নীরজ। তা সত্ত্বেও নীরজের কীর্তি কিন্তু ম্লান হল না একবিন্দু। পরপর অলিম্পিকে সোনা ও রুপো জয়, বিরাট প্রাপ্তি। নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ নীরজ চোপড়া।
বৃহস্পতিবার প্যারিসের স্টেডিয়ামে নীরজের জন্য গলা ফাটাতে পৌঁছেছিলেন অভিষেক বচ্চন। ফাইনালে ৮৯.৪৫ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন ছুঁড়ে রুপো জয়ের পর জাতীয় পতাকা শরীরে জড়িয়ে দর্শকাসনের কাছে এগিয়ে আসেন নীরজ। সঙ্গে সঙ্গে নীরজকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেন জুনিয়র বচ্চন। গাল ধরে আদরের পর নীরজকে জড়িয়ে ধরেন অভিষেক। ততক্ষণে নীরজের ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি।
সেই হাসির ফাঁকে হয়ত কিছুটা আফসোসও সঙ্গে ছিল। স্টেডিয়ামে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত না-বাজায় কিছুটা হলেও মন খারাপ নীরজের। নিজের সেরাটা উজার করে দিতে গিয়ে ৬টার মধ্যে ৫টা ফাউল থ্রো করেছেন নীরজ, আসলে দ্বিতীয় থ্রো-তে 'অতিমানবিক' খেলা দেখালেন আরশাদ নাদিম। নাদিমের ৯২.৯৭ মিটার-এর থ্রো স্পর্শ করাটা কার্যত অসম্ভব ছিল আজ পর্যন্ত কোনওদিন ৯০ মিটারের বেশি জ্যাভলিন থ্রো করতে না-পারা নীরাজের পক্ষে।
এদিন অভিষেক বচ্চন ও নীরজের আদুরে আলাপের মিষ্টি মুহূর্ত শেয়ার করেন এক্স হ্যান্ডেলে নীরজকে শুভেচ্ছা জানান স্পোর্টস প্রেসেন্টার তথা বুমরাহ ঘরণী সঞ্জনা গণেশান। তিনি লেখেন, ‘অভিষেক বচ্চনের একটা সুন্দর উদ্য়োগ। নীরজ তোমার জন্য গোটা দেশ গর্বিত! তুমি অনবদ্য, অনেক অভিনন্দন ভারতে প্যারিসে প্রথম রুপো এনে দেওয়ার জন্য’।
সত্যি তো নীরজ চোপড়াকে নিয়ে তো গর্ব হওয়ার কী কথা! দেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসাবে দেশকে অ্যাথলেটিক্সে সোনা ও রুপো এনে দিয়েছিলেন তিনি। পরপর দুটো অলিম্পিকে পদক জেতার নজির গড়ার তালিকাতেও ঢুকে পড়েছেন হরিয়ানার এই ভূমিপুত্র।
নীরজের এই সাফল্য গর্বিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টেলিফোনে নীরজকে তিনি বলেন, 'এখন মন থেকে সোনার কথা ভুলে যাও। এই সাফল্য কম নয়। দুবার অলিম্পিক্স পদক জয় কিন্তু মুখের কথা নয়, খুব কম লোকই আছে যারা এরকম পদক জিতেছে। পরের বার যখন দেখা হবে তোমার সঙ্গে তখন তোমার চোট নিয়ে আলোচনা করবে, যে কীভাবে ঠিক করা যায়। আমরাই বা আর কী কী করতে পারি তোমার জন্য। তোমায় অনেক অনেক শুভেচ্ছা নীরজ। ’
সোনা হাতছাড় হলেও নীরজের লড়াই থামছে না। টোকিওর পর তাঁর পাখির চোখ ছিল প্যারিস, আর এখন থেকেই লস অ্যাঞ্জেলসের ভাবনা মাথায় ঘুরছে নীরজের। দ্রুত চোট সারিয়ে অনুশীলনে ফিরতে চান। আগামি অলিম্পিক্সে দেশের জন্য সেরাটা উজার করে দেবেন তিনি, নিশ্চিত থাকুক গোটা ভারত।