দিন কয়েক আগে হাসপাতালের বিছানা থেকে এক উঠতি শিল্পীর বিরুদ্ধে ‘রাগ চুরি’ করার গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন কবীর সুমন। সুমন ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন বছর খানেক আগে একটি রাগ তৈরি করেছিলেন তিনি। নাম রেখেছিলেন 'আহির বৈরাগী'। সুভদ্রকল্যাণ রাণা নামের এক তরুণ শিল্পী সেটিকে নিজের রাগ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। যদিও প্রবীণ শিল্পীর এই দাবিকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিলেন মার্গ সংগীতের এই তরুণ সাধক।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে সুভদ্রকল্যাণ জানান, 'রাগ সংগীতের চর্চা যাঁরা করেন, তাঁরা এটা ভালোভাবেই জানেন এমন অনেক রাগ আছে যাদের স্বরসংগতি বা স্বরবিন্যাস এক, কিন্তু স্বরপ্রয়োগের তারতম্য আলাদা'। তিনি আরও যোগ করেন, 'আহির বৈরাগী রাগটি কবীর সুমনের তৈরি, সেই নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু এর সঙ্গে আমার তৈরি রাগ ‘ধৈবতী’র কোনও সম্পর্ক নেই। বছর পাঁচেক আগে দিল্লিতে সর্বভারতীয় রাগ সংগীতের প্রতিযোগিতায় আমি বাজিয়েছিলাম…. মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে। গত বছর ডিসেম্বর নাগাদ ফেসবুকে সুমন বাবুর পোস্টে আমি দেখতে পাই বৈরাগীতে ধৈবত লাগিয়েছেন উনি। সেই ভাবনাটি আমি জানতে চেয়েছিলাম যেহেতু অনুরূপ একটি ভাবনা আমি আগেই ভেবেছিলাম। কিন্তু ওঁনার ধৈবত লাগানোর পদ্ধতি, সেটা আমার থেকে শতগুণ আলাদা। সেখানে কোনও মিল নেই'।
আক্ষেপের সুরে পন্ডিত বিক্রম ঘোষের এই কৃতী ছাত্র জানান, 'আমি যখন 'আহির-বৈরাগী' বাজিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করি, ওঁনার সৃষ্টি-কৃতিত্বের উল্লেখ যথাযথ এবং পরিপূর্ণ সম্মান সহযোগে করেছি। কিন্তু পরে ফেসবুক লাইভে কবীর সুমন আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করবার জেরেই কিছুটা দুঃখিত হয়েই আমি ভিডিয়োটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে দিই। কিন্তু আবারও সম্প্রতি উনি লাগাতার আমাকে ফেসবুকে আক্রমণ করে চলেছেন, বলছেন আমি নাকি ওঁনার রাগ চুরি করেছি'।
কবীর সুমনের মতো প্রবীণ শিল্পী কী কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কেন এমন গুরুতর অভিযোগ আনলেন? প্রশ্ন শুনে সুভদ্রকল্যাণের সপাট জবাব- ‘রাগ সংগীতের জগতে কোনওদিন আমি কোনও শিল্পীকে এই ভাষায় কথা বলতে শুনিনি। আমি সত্যি চমকে গিয়েছি একজন সংগীত শিল্পীর মুখের এমন ভাষা….রাগ সংগীতের প্রত্যেক কিংবদন্তি শিল্পী আমাদের গুরু। কোনও শিল্পী যদি এমন ভাষা ব্যবহার করেন তাঁর চেয়ে ৫২ বছরের ছোট এক উদীয়মান শিল্পীর বিরুদ্ধে, তাহলে আমার সত্যি কিছু বলবার নেই’।
ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট লিখে কবীর সুমন অভিযোগ এনেছিলেন সুভদ্রকল্যাণের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (গতকাল) রাতে কবীর সুমনের প্রতিটি অভিযোগের জবাব ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন এই তরুণ শিল্পী।
সেখানে সুভদ্রকল্যাণের আক্ষেপ, কবীর সুমন ‘জগদ্বিখ্যাত অসীম প্রভাবশালী ব্যক্তি বলেই’ সকলে ওঁনার অভিযোগকে সঠিক বলে মেনে নিয়েছে এবং তাঁকে ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রাথমিক অধিকার’ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘আমার বিরুদ্ধে ওনার রাগ চুরির অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্য, হাস্যকর ও নিন্দনীয়ও বটে’। এই বিতর্ক কোথায় গিয়ে শেষ হয় এখন সেটাই দেখবার।