অল ইন্ডিয়া রেডিও এখন শুধু ইতিহাস! হ্যাঁ, রেডিওর সোনালি ঐতিহ্যর দিন ফুরালো। 5G জমানায় অল ইন্ডিয়া রেডিও নামটা ভারতীয়দের কাছে অনেকটাই গুরুত্ব হারিয়েছে। তবুও কোথাউ গিয়ে একটা আবেগ জুড়ে রয়েছে এই নামের সঙ্গে। রাত ১২টা বেজে ৫ মিনিট হোক বা ভোর পাঁচটা, ‘দিজ ইজ অল ইন্ডিয়া রেডিও’ শুনে ঘড়ির কাঁটা মেলায় এমন ভারতীয়র সংখ্যায় কমতি নেই আজও। তবে এবার সেই আবেগের ঐতিহ্য বদলে ফেলল প্রসার ভারতী।
সুদীর্ঘ নব্বই বছরের প্রথায় বুধবার ইতি টানল প্রসার ভারতী। আকাশবাণীর ডিরেক্টর জেনারেল বসুধা গুপ্তা বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন রেডিওর কোনও অনুষ্ঠানেই আর ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ (All India Radio) শব্দবন্ধের প্রয়োগ করা যাবে না। পরিবর্তে সব ভাষাতেই ব্যবহৃত হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া নাম ‘আকাশবাণী’। ব্রিটিশ সাম্রজ্যবাদের বোঝা ঝেড়ে ফেলতেই এমন সিদ্ধান্ত, জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রসার ভারতীর বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে , ব্রিটিশ আমলে চালু করা এই নামের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেই জন্যই ইংরাজি ভাষা সরিয়ে ‘আকাশবাণী’ নামটি ব্যবহার করা হবে।
প্রসার ভারতীর সিইও গৌরব দ্বিবেদী জানিয়েছেন, সরকার দ্বারা অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে সেটি কার্যকর করা হয়নি। এবার থেকে আমরা সেটি কার্যকর করছি মাত্র।
অল ইন্ডিয়া রেডিও ১৯২৭ সালে বেসরকারি রেডিও ক্লাবের উদ্যোগে ভারতে সর্বপ্রথম বেতার সম্প্রচার শুরু করে। সাধারণ জনগণকে তথ্য, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য ১৯৩৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারিভাবে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু হয় কলকাতায়।পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে এর নাম পরিবর্তন করে আকাশবাণী করা হয়। ‘আকাশবাণী’ নাম রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাল ১৯৩৯।
দেশের জনসংখ্যার ৯৯.১৯% আকাশবাণীর পরিষেবার আওতায়, দেশের ৯২% এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে এই বেতার পরিষেবা। দেশজুড়ে আকাশবাণীর ৪৭০টি সম্প্রচার কেন্দ্র রয়েছে। ২৩টি ভাষায়, ১৭৯ রকম উপভাষায় সম্প্রচারিত হত আকাশবাণীর অনুষ্ঠান।
AIR-এর নাম পরিবর্তন নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম রাজনৈতিক মহল। দীর্ঘমেয়াদি ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার মধ্যে হিন্দি আগ্রাসন গন্ধ পাচ্ছেন তামিল নেতা এস রামাদোস। তাঁর যুক্ত আকাশবাণী নামের মাধ্যমে রেডিও সম্প্রচারে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তামিল ভাষার কোনও শব্দ কেন আকাশবাণীর বদলে ব্যবহার করা হল না। অন্যদিকে প্রাক্তন মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারির কথায়, এই পরিবর্তন একদম অপ্রয়োজনীয়।