সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর স্বজনপোষণের অভিযোগে জেরবার হয়েছিল বলউড। সেই হাওয়া এসে পৌঁছেছিল টলিপাড়াতেও। টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ব'কলমে যাঁকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ বলে মনে করা হয়, খোদ সেই বুম্বাদার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছিলেন শ্রীলেখা মিত্র। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একাধিক অভিযোগের সঙ্গে শ্রীলেখা বলেছিলেন বুম্বাদাই সেসময় ইন্ডাস্ট্রি চালাতেন, তাঁর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি নায়িকার চরিত্র পাননি, কারণ প্রসেনজিতের সঙ্গে তখন ঋতুপর্ণার প্রেম।
শ্রীলেখার অভিযোগ নিয়ে সেসময় মুখ খুলতে চাননি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তবে এবার তিনি মুখ খুললেন। সম্প্রতি ZEE ২৪ ঘণ্টাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নানান বিষয়ে কথা বলেছেন প্রসেনজিৎ। সেখানে উঠে এসেছে শ্রীলেখার অভিযোগের প্রসঙ্গও। বুম্বাদার কথায়, 'শ্রীলেখার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা বোধহয় অভিমান!' বলেন, ‘ও অসম্ভব ভালো অভিনেত্রী, ওকে রেসপেক্ট করি, ও সেটা জানে। ও আমায় রেসপেক্ট করে, এটা হয়তও কোনও অভিমান থেকে বলেছে। আমার ওর প্রতি কোনও রাগ, দুঃখ নেই, ও শক্তিশালী অভিনেত্রী।’

প্রসেনজিৎ-শ্রীলেখা
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘১৪ বছর যখন ঋতু আর আমি একসঙ্গে কাজ করিনি, তখন রচনা আমার সঙ্গে ৩৫টা ছবি করেছে। অর্পিতাও সুপারহিট ছবি দিয়েছে, পরে ও অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তেই সরে যায়। এছাড়া ইন্দ্রাণী হালদার আমার সঙ্গে ২৫টা ছবি করেছে। তারও আগে শতাব্দী-আমিও হিট জুটি ছিল। তবে হ্যাঁ, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটিকে মানুষ ভালোবাসা দিয়েছেন, মনে রেখেছেন। সেটা একটা ম্যাজিক। এরপর ১৪ বছর পর যখন আমরা ফিরলাম, তখনও প্রমাণ হয়েছে এই জুটিতে ম্যাজিক আছে। এটা বাদ দিলে বাকিদের সঙ্গেও কাজ করেছি। পরের দিকে আমার থেকে অনেক ছোট কোয়েল, স্বস্তিকা, পাওলি, সকলের সঙ্গেই কাজ করেছি। আমার জীবনে কলকাতা বোম্বে মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন নায়িকা রয়েছেন।’
৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করছেন, নিন্দুকেরা বলেন, অনেক প্রতিভাকেই নাকি উঠতে দেননি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এবিষয়ে উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমে মৃদু হাসেন, তারপর বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমিও শুনেছি। তবে কারোর কি সত্যিই ক্ষমতা থাকে প্রতিভা থাকলে তাঁকে উঠতে না দেওয়ার। মাঝখানে আমি যখন দেড়-দুবছর কাজ করিনি, তখন তো অনেকের ছবিই হিট করেছিল।’ প্রসেনজিতের কথায়, ‘কেউ যদি সাকসেস দেয়, দর্শকের যদি ভালো লাগে, হলে যদি লোক আসে, তাহলে এটা আটকানোর ক্ষমতা কি পৃথিবীতে কোনও মানুষের আছে? এটা একমাত্র ঈশ্বরের আছে। আমি কি হলের বাইরে দাঁড়িয়ে বলব, ওঁর ছবি দেখবেন না। আমি যতই চালনা করার চেষ্টা করি না কেন, আমার ৪টে ছবি যদি না চলে, তখন আরেক প্রতিভা সামনে আসতে বাধ্য।’

প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা
কথা প্রসঙ্গে নিজের ছেলের উদাহরণ টেলে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘ধরুন আমি ঠিক করলাম মিশুক (প্রসেনজিতের ছেলে)কে খুব বড় করে লঞ্চ করব, সেটা করার পর দেখলাম, ও মানুষের কাছে গ্রহণীয় হল না (যদিও আমি সেটা চাই না) , এমন উদাহরণ কিন্তু এদেশে অনেক আছে। এটা একেবারেই দর্শকদের হাতে। আর এটা কি মনে হয়, যদি আমি ব্যবসা না দিতাম, তাহলে প্রযোজকরা আমায় নিতেন?’
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আজ আমি একটা জায়গায় পৌঁছনোর পর যদি কোনও পরিচালককে চালনা করার চেষ্টা করি, তাহলে সেটা কী হবে?’ প্রশ্ন আসে, কোন নায়িকাকে নেওয়া হবে, আর কাকে নেওয়া হবে না। এতে বুম্বাদার সাফ জবাব, তাতে ছবিতে কিচ্ছু এসে যায় না, কারণ ওখানে প্রসেনজিৎ আছে।