তিনি পায়েল কাপাডিয়া, এই মুহূর্তে তাঁকে নিয়েই চর্চা চলছে গোটা দেশে। কান চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান গ্রাঁ পিঁ পুরস্কার জিতেছে পায়েলের ছবি ‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’। এদিকে এই চর্চার মাঝেই জানা গিয়েছে পায়েল পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (FTII)-এর একজন প্রাক্তন ছাত্রী। FTII-এ পড়ার সময় যাঁর নামে একদিন FIR দায়ের করা হয়েছিল। যে পায়েল কিনা তৎকালীন ইনস্টিটিউটের চেয়ারপার্সন অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহানের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন।
বর্তমানে কান চলচ্চিত্র উৎসবে FTII-এর সেই প্রাক্তনী ছাত্রীই যখন দেশকে সম্মানিত করেছেন, তখন কী বলছেন অভিনেতা-রাজনীতিবিদ গজেন্দ্র চৌহান?
নাহ, পায়েলের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি গজেন্দ্র চৌহান। মঙ্গলবার কান বিজয়ী পায়েল কাপাডিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন গজেন্দ্র। তিনি PTI-কে বলেন, ‘পায়েলকে অভিনন্দন, গর্ব হচ্ছে এটা ভেবে যে আমি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান থাকাকালীন পায়েল সেখানে পড়াশোনা করত।’ সেসময় গজেন্দ্র চৌহানকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, একদিন তাঁর নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন এই পায়েল কাপাডিয়া। তিনি এখন সেই পায়েল সম্পর্কে তিনি কী বলতে চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে 'মহাভারত' অভিনেতা বলেন, ‘পায়েল কখনও আমার সম্পর্কে কিছু বলেননি। তাহলে আমি কী বলতে পারি?’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে গজেন্দ্র চৌহানকে পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন পদে নিয়োগ করা হয়। সেসময় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন বেশকিছু ছাত্রছাত্রী। প্রায় ৪মাস ব্যাপী বিক্ষোভ চলেছিল। অভিযোগ ছিল সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন এই পায়েল কাপাডিয়া। সেকারণেই সেসময় পায়েলে বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল FTII।
এখানেই শেষ নয়, জানা যায়, বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের ১৩৯ দিনের ধর্মঘট চলাকালীন তৎকালীন FTII-এর ডিরেক্টর প্রশান্ত পাঠরাবেকে কিছু অ্যাকাডেমিক ইস্যুতে তাঁর অফিসে আটকে রেখেছিলেন কিছু ছাত্রছাত্রী। এর ফলে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে কিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত চেয়ারপার্সনের দায়িত্বে ছিলেন গজেন্দ্র চৌহান।
যদিও মঙ্গলবার গজেন্দ্র চৌহান জানান, ‘ওই প্রতিবাদ আমার বিরুদ্ধে ছিল না, ওই পরিচালক ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ছিল। ভারত সরকার আমাকে নিয়োগ করেছিল। আমি FTII-তে প্রচুর কাজ করেছি এবং মিডিয়া কখনও এ সম্পর্কে কোনও প্রতিবেদন করেনি।তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এফটিআইআই চেয়ারপার্সনকে মনোনীত করে। বর্তমানে এই পদে রয়েছেন অভিনেতা আর মাধবন।’
চৌহানের কথায়, তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি বা তিনি পদত্যাগও করেননি। তাঁর কথায়,'আমাকে কখনো বরখাস্ত করা হয়নি, আমি আমার মেয়াদ শেষ করেছি। কেউ বলেছেন গজেন্দ্র চৌহান পদত্যাগ করেছেন, তবে আমি পদত্যাগ করিনি।'
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালে, পায়েল কাপাডিয়া সহ ৩৫ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৯, ৩২৩, ৩৫৩ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে কিছু জামিন অযোগ্য, বেআইনি সমাবেশ, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন এবং দাঙ্গা সম্পর্কিত ছিল। এমনকি কাপাডিয়ার তথ্যচিত্র 'আ নাইট অব নোয়িং নাথিং'-এ FTII-এর বিক্ষোভের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল।
পায়েল কাপাডিয়ার ছবি ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’-গত ৩০ বছরে কানের মূল প্রতিযোগিতার অংশ হিসাবে নির্বাচিত ভারতের প্রথম ছবি। এর আগে ১৯৯৪ সালে শাজি এন করুণের ১৯৯৪ সালের মালায়ালাম চলচ্চিত্র ‘স্বহাম’ নির্বাচিত হয়েছিল।