মঙ্গলবার সকালে প্রয়াত হলেন বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টের প্রাণপুরুষ নারায়ণ দেবনাথ। বহু দশক ধরে বাঙালি পাঠকের শীতের দুপুরগুলো রঙিন হয়ে উঠত যে সাদা-কালো চরিত্রগুলোর হাত ধরে, সেই চরিত্রের স্রষ্টা শীতের সকালে বিদায় নিলেন। দশকের পর দশক কমিকসের পাতলা বই আকারে প্রকাশিত হওয়ার পরে নারায়ণ দেবনাথের কাজের সংকলন নতুন করে বই আকারে প্রকাশ হয়। কেমন ছিল বই প্রকাশের প্রথম দিনগুলো?
প্রকাশক নিমাই গড়াইয়ের প্রকাশনা সংস্থা থেকেই নারায়ণ দেবনাথ সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। সে সময়কার কথা নিমাইবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ওঁকে জেঠু বলে ডাকতাম। যখন জেঠুকে গিয়ে বলি, এমন একটা বই করতে চাই, উনি শুনে হেসেছিলেন। বলেছিলেন, কমিকস নিয়ে আবার বই হয় নাকি!’
পঞ্চাশের দশক থেকে টানা কাজ করে গিয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ। বাঙালি পাঠকের মন থেকে কখনও তিনি বিস্মৃত হননি। তবু গত ৭-৮ বছরে তাঁর কাজ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণার পরিমাণ বেড়েছে, চর্চা বেড়েছে। নিমাইবাবুর কথায়, ‘বাংলায় কমিকস নিয়ে যে আলাদা করে বই হতে পারে, এটা নারায়ণবাবুর আগে ভাবা সম্ভব ছিল না।’
‘বহু কাল আগে অন্য এক প্রকাশনা সংস্থা বিমল ঘোষ (মৌমাছি)-এর লেখা নিয়ে রবি-ছবি নামে একটি গ্রাফিক নভেল প্রকাশ করে। তার ছবি এঁকেছিলেন নারায়ণ দেবনাথ। সেই বইয়ের একটি কপি নারায়ণবাবুর বাড়িতে ছিল। সহস্র পোকায় কাটা। ছিন্নভিন্ন। সেই বইটি দিয়ে বলেছিলেন, দেখো তো এটা ঠিক করা যায় কি না।’ বলছেন নিমাইবাবু। তাঁর কথায়, ‘সেটি কম্পিউটারে স্ক্যান করে পোকায় খাওয়া, ক্ষয়ে যাওয়া অংশ মেরামত করা হয়। তার পরে সেটিকে নতুন করে ছাপিয়ে ওঁকে দেওয়া হয়। তখনই উনি বই প্রকাশে রাজি হন।’
শেষ দেখা হয়েছিল তাও বছর তিনেক আগে। কেমন ছিল সেই দেখা? নিমাইবাবু বলছেন, ‘মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলেন জেঠু। কাজ করার ক্ষমতা কমে গিয়েছিল। কিন্তু আরও একটি কাজের অভাব বোধ করতেন খুব। বাজার যাওয়া। খুব ভালোবাসতেন বাজার করতে।’
ভালোবাসতেন খেতেও। মাছ ছিল খুব প্রিয়। আর ভালোবাসতেন মিষ্টি খেতে। তেমনই বলছেন নিমাই গড়াই। ‘কালোজাম ছিল প্রিয় মিষ্টি। মাছ আর মিষ্টির কথা বারবার ওঁর আঁকা গল্পেও ফিরে এসেছে। নিজের পছন্দের পদগুলির প্রতি পাঠকদের ভালোবাসাও বাড়িয়ে দিয়েছেন জেঠু।’