সুরালোকে পাড়ি দিলেন প্রথিতযশা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বনানী ঘোষ। বুধবার কলকাতায় প্রয়াত হন বনানী দেবী। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া সঙ্গীত জগতে।
অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংয়ে জন্ম বনানী ঘোষের, যদিও এপার বাংলাতেই তাঁর বেড়ে ওঠা, সঙ্গীতশিক্ষার শুরু। বাবা প্রফুল্ল কৃষ্ণ ঘোষ একাধারে সঙ্গীতজ্ঞ, অন্যধারে কবি। ছোট থেকেই গানের জগতেই বড় হওয়া তাঁর। মাত্র চার বয়সে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম শুরু, এরপর শান্তিনিকেতনে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখেন। গুরু কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অদ্ভূত মিল ছিল ‘রুবি’ বানানী ঘোষের কন্ঠের। কাছের মানুষদের কাছে ‘রুবি’ নামেই পরিচিত ছিলেন প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী।গুণমুগ্ধদের অনেক সময়ই চমকে দিতেন এই গুরু-শিষ্যা। সেই কথা নিজের মুখেও মেনে নিয়েছেন বনানী ঘোষ। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘যাঁর কাছে এত একান্তে বসে দিনের পর দিন সঙ্গীত আহরণ করেছি, তাঁর প্রভাব কি ছিটেফোঁটা হলেও পড়বে না আমার মধ্যে? সেটা কিন্তু স্বেচ্ছাকৃত নয়, সেটা কিন্তু নকল করার উদ্দেশ্যে নয়— সেটা তাকে একান্তে পাবার ফলশ্রুতি’।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। এরপর ১৯৭০ সালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের হাত ধরেই রবীন্দ্রসঙ্গীতে জগতে পা রাখেন। 'হাত ধরে' আকাশবাণীর জন্য বানানী ঘোষকে অডিশন দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন কণিকা বন্দোপাধ্য়ায়। রেডিওর প্রথম অনুষ্ঠানের গানও নির্বাচন করে দিয়েছিলেন- ‘বিমল আনন্দে’ এবং ‘তোমার দুয়ার খোলার ধ্বনি’। অতুলপ্রসাদী, রজনীকান্ত-সহ অন্যান্য গানেও তাঁর সুরেলা কন্ঠ মুগ্ধ করেছে শ্রোতা-দর্শকদের।
'এখনো তারে চোখে দেখিনি', 'সখী ওই বুঝি বাঁশি বাজে', 'আরো আঘাত সইবে আমার', 'অন্তর মম বিকশিত করো', 'বসন্ত প্রভাতে এক মালতীর ফুল', 'তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না', ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’-এর মতো অজস্র রবীন্দ্র সঙ্গীত তাঁর কন্ঠে আজও জনপ্রিয়।
বাংলা ছেড়ে একটা সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন বনানী ঘোষ, ফ্লোরিডায় বসবাস করেছেন দীর্ঘদিন। সেখানেও বানানী দেবীর রবীন্দ্র-চর্চার ধারা ছিল অব্যাহত ৷ তাঁর সঙ্গীত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'অন্তরা'য় গান শিখেছে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। আন্তর্জাতিক আঙিনায় রবিঠাকুরের সৃষ্টিকে ছড়িয়ে দিতে বিদেশে রবীন্দ্র মেলা উৎসবেরও আয়োজন করেছেন বানানী ঘোষ। ১৯৮২ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির রোচেস্টারে বনানী ঘোষের পরিচালনায় মঞ্চস্থ 'ভানুসিংহের পদাবলী' বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে৷ তাঁর মৃত্যুতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হল দুই বাংলার রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে।