খলিস্তানিপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার পর থেকেই কানাডা এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ এনে ছিলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তারপর থেকেই দিল্লির সঙ্গে আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক ট্রুডোর দেশের।
এর মাঝেই গত রবিবার ব্রাম্পটনে ‘হিন্দু সভা মন্দির’-এ পুজো দিতে গিয়ে খলিস্থানি হামলাকারীদের হাতে আক্রান্ত হন কানাডার হিন্দুরা,যাতে ক্ষুব্ধ ভারত। এই কূটনৈতিক সম্পর্কের আঁচ এবার সংস্কৃতি জগতেও। কানাডায় বসবসাকারী বাঙালি সংখ্যায় নেহাত কম নন। প্রতিবছরই দুর্গাপুজো-দীপাবলির মরসুমে সে দেশে গানের অনুষ্ঠান করতে হাজির হন কলকাতার শিল্পীরা। কিন্তু এই বছর কানাডার ভিসা পেতে কালঘাম ছুটেছে রাঘব চট্টোপাধ্যায়, জয়তি চক্রবর্তীদের। কিন্তু হাতে এসেছে কেবল হতাশা।
হয় কানাডা সরকার ভিসা বাতিল করছে, কিংবা এত দেরিতে ভিসা ইস্যু হচ্ছে যে তা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই নিয়ে ক্ষোভ টলিপাড়ায়। গত ১৯ই অক্টোবর কানাডায় পারফর্ম করার কথা ছিল রাঘব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে মার্কিন মুলুক থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরে অবস্থিত কানাডায় যাওয়া হয়নি রাঘবের। বাতিল করতে হয়েছে গানের কনসার্ট।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত ৯ই অক্টোবর গানের ট্যুরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে গিয়েছিলেন রাঘব। সে দেশের ভিসা নিয়ে কোনও জটিলতা তৈরি হয়নি। রাঘব আগেও বহুবার কানাডায় পারফর্ম করেছেন, সে দেশের টুরিস্ট ভিসার ৬ বছরের মেয়াদ চলতি বছরের শুরুতে শেষ হয় তাঁর। নতুন করে ভিসার আবেদন জানালেও সাড়া পাননি। কলকাতায় বায়োমেট্রিকের কাজ শেষ হয়েছিল সময়েই। তবে জবাব আসেনি কানাডার হাই কমিশনের তরফে। অগত্যা খালি হাতেই উড়ে যান আমেরিকায়। ভেবেছিলেন নিউ ইয়র্ক থেকে কানাডার ভিসা সংগ্রহের শেষ চেষ্টা করবেন।
আমেরিকায় কনসার্ট শেষ করে নিউ ইয়র্কের হোটেলে তিনদিন বন্দি ছিলেন রাঘব। অবশেষে ১৭ই অক্টোবর রাতে দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরেন। কারণ টিকিটের দাম চড়চড়িয়ে বাড়ছিল। দিল্লি ফেরার পর তাঁর কাছে ফোন আসে, ১৮ই অক্টোবর রাতে তাঁর ভিসায় স্ট্যাম্প দিয়েছে কানাডা সরকার। কিন্তু ততক্ষণে আর কনসার্ট করার মতো সুযোগ বা সময় তাঁর হাতে ছিল না।
তবলচি শুভজিত গুহা আফসোসের সুরে জানিয়েছেন করোনা পূর্ববতীকালে কনাডার ভিসা পাওয়া ছিল ছেলের হাতের মোয়া। দু-সপ্তাহের মধ্যেই শিল্পীদের ভিসা দিয়ে দিত সে দেশের সরকার। তিনি জানিয়েছেন, গত বছর ডিসেম্বরে কানাডার ভিসার আবেদন করেছিলেন তিনি মে এবং সেপ্টেম্বর মাসে কনসার্ট করার ইচ্ছে প্রকাশ করে। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর ভিসার আবেদন খারিজ করে কানাডা সরকার। তাঁর দাবি, একইরকমভাবে কানাডার ভিসা পাননি জয়তি চক্রবর্তী-শ্রীকান্ত আচার্যর মতো শিল্পীরাও।
ভিসা নিয়ে এই গণ্ডোগোল কি ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির ফল? তেমনটা মানতে না-রাজ অনজনি ধানুকা। ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাশোসিয়েশনের (পূর্ব) চেয়ারম্যান বলেন, করোনার আগে কানাডার ভিসায় স্ট্যাম্প পড়তে ১৫ সপ্তাহ সময় লাগত। এখন সেই মেয়াদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৮ সপ্তাহ। এর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের কোনও যোগ নেই।