রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পুজোর ছবি নিয়ে জট কিছুতেই কাটছে না! পরিচালক রাহুলের পাশে টলিউডের পরিচালকমহল, অন্যদিকে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ফেডারেশন। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে কিনা সেই নিয়ে টালবাহানা কিছুতেই শেষ নেই। বরং আৎও প্রকট পরিচালক-ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব।
শনিবার সকালে নির্দিষ্ট কলটাইমে শ্যুটিং সেটে হাজির হন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মেকআপ ভ্যানে ঠায় বসে রইলেন বুম্বাদা, এলেন না মেকআপ শিল্পী! কারণ ততক্ষণে ফেডারেশনের মেসেজ পৌঁছে গিয়েছে টেকনিশিয়ানদের ফোনে। ‘ফেডারেশনকে শেষ করে দিতে, আমাদের রুজি-রুটিকে বিপন্ন করে, গুপী শ্যুটিংকে স্বীকৃতি’ দেওয়ার ষড়যন্ত্রে নেমেছে কিছু পরিচালক-প্রযোজক। কড়া ভাষায় জানায় ফেডারেশন।
ওদিকে পরিচালকরাও সংঙ্ঘবদ্ধ এর প্রতিবাদে। ফেডারেশনের ‘দাদাগিরি’র বিরুদ্ধে এদিন একজোট রাজ চক্রবর্তী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়রা। তরুণ পরিচালক রাহুলের হয়ে লড়াইয়ের সামিল সকলে। ডিরেক্টরস গিল্ড যেখানে রাহুলের উপর থেকে তিন মাসের ব্যান তুলে নিয়েছে সেখানে ফেডারেশনের আপত্তি কোথায়? প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল সাংসদ দেব।
এদিন সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঘাটালের সাংসদ বলে, 'আমরা সবাই চাই কাজ হোক, কাজ আটকে থাকুক, এটা কেউ চায় না। আমরা সবাই এই কাজ বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে, কারণ এটা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি। এই যে কারণ ছাড়া কাজটা বন্ধ রাখা হল, সেটা দুঃখজনক। এমনিই কাজ কমে যাচ্ছে। আগে মুম্বই থেকে যে পরিমাণ কাজ কলকাতায় আসত, তা ৯০ শতাংশ কমে গেছে। খাদানে আমি ৪০০-৫০০জনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। কেউ বলতে পারবে না যে কারুর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি। কিন্তু এভাবে যদি বিনা কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যদি বলা হয় যে আমরা টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে, তাহলে তা ভুল ন্যারোটিভ তৈরি করে বাংলা সম্পর্কে'।
রাজ চক্রবর্তীর হয়ে সওয়াল করে দেব বলেন, কেন রাজের হিন্দি ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং এখানে করতে দেওয়া হল না? ফেডারেশনের নিয়মের জাঁতাকলে পড়েই বাংলাদেশের নামী স্ট্রিমিং প্ল্যাফর্ম চরকির ১২টা ওয়েবসিরিজের কাজ হারিয়েছে বাংলা বলে জানান দেব।
অভিনেতা-প্রযোজক বলেন,'সবার বাড়িতে যেন রান্না হয়, সবাই যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলাই একজন ভালো প্রেসিডেন্টের কাজ। এই কর্মবিরতি আমি সমর্থন করি না। কোনওদিন লড়াই করে কোনও যুদ্ধের শেষ হয়নি, গায়ের জোরে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না, এটা আমি নয় ইতিহাস বলছে। সেখানে একটা আলোচনা দরকার। কীভাবে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি, সেটা আলোচনার'।
দেব স্পষ্ট বলেন, বাংলায় হাতেগোনা প্রযোজকরা নিয়মিত ছবি বানান। তাঁদের ছবির কাজ আটকে দেওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রসঙ্গত, রাহুলের এই ছবি প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছে এসভিএফ। দেব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানান, ‘টেকনিশিয়ানরা সবার আগে আয় করে আর সবশেষে প্রযোজক আয় করে আর বেশিরভাগ সময় আয় করেও না। প্রযোজকের ঘরে টাকা ঢুকতে অনেক সময় লাগে। আমি এখনও বাঘাযতীনের টাকা পাইনি’।
এরপর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ‘অপমান’ নিয়ে মুখ খোলেন তাঁর ‘কাছের মানুষ’ দেব। বুম্বাদা সেটে বসে থেকেছেন, অথচ তাঁর মেকআপের লোক নেই। এমন দৃশ্যেরও আজ সাক্ষী থাকল টলিউড! দেবের কথায়, ‘যাকে ইন্ডাস্ট্রি বলে হয় সেই নিজের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারছে না। যিনি দুই দিন আগে মহানায়ক সম্মান পেলেন তিনি শ্যুটিং করতে পারছেন না। এরচেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে। আমরা সবাই তাঁকে সম্মান করি, বুম্বাদা সবসময় টেকনিশিয়ানদের পাশে দাঁড়িয়েছে, অথচ আজ তাঁরই শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী যাকে সম্মান দিচ্ছেন, ফেডারেশন তাঁরই শ্যুটিং বন্ধ করে দিচ্ছে। এটা খুবই অসম্মানজনক’।
৪৫ বছর ধরে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে যে মানুষটা বাঁচিয়ে রেখেছে, আজ সেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হল! ভেবেই উঠতে পারছেন না দেব। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘আজ যেটা হল, সেটা ভুল। আমি ফেডারেশনের কাছে অনুরোধ করব, এটা ভাবতে।’
ওদিকে পরিচালকরা এদিন স্পষ্ট জানিয়েছে একদিনের মধ্যে ফেডারেশন যদি সিদ্ধান্ত বদল না করে অর্থাৎ সোমবার যদি রাহুলের ছবির শ্যুটিংয়ে টেকনিশিয়ানরা না আসে, তাহলে ওইদিন থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার পালটা হুঁশিয়ারি পরিচালকদের। অর্থাৎ টলিপাড়ার কোথাউ কোনও শ্যুটিংয়ে যোগ দেবেন না কোনও পরিচালক। পরিচালক ‘ক্যাপ্টেন অফ দ্য শিপ’, ডুবন্ত জাহাজ বাঁচাতে তাঁকে সবার আগে প্রযোজন, একথা এদিন মনে করালেন টলিউড পরিচালকরা।