চলতি মাসেই বড় পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত নতুন ছবি ‘সন্তান’। তার আগে চলছে ছবির প্রচার। কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন ‘খাদান’ এই ছবির প্রচারের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এর মাঝেই পরিচালক জানান, তাঁর ছবি নিয়ে নাকি নেগেটিভ পাবলিসিটি হচ্ছে। একটি ভিডিয়োর মাধ্যমেও তিনি তা জানিয়েছিলেন। এবার এক সাক্ষাৎকারে আবারও তা নিয়ে সরব হলে রাজ, সঙ্গে থাকলেন স্ত্রী শুভশ্রীও।
রাজের ছবি এলেই নাকি নেতিবাচক মন্তব্য শুরু হয় যায়? আনন্দ প্লাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথায় সম্মতি জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘যায় তো, নেগেটিভ পাবলিসিটি করানো হয়।’ কিন্তু কারা করান এই কাজ? রাজের মতে, 'যাদের কাজ এই সবের মধ্য দিয়ে টিকে থাকা। বাঙালি কাঠি নিয়ে ঘোরে। আমরা কারও ভালো না খারাপের সেলিব্রেশন করি। স্বামীর কথার রেশ টেনে শুভশ্রী বলেন, ‘বুঝতে পারছেন, আমরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যে, টাকা খরচ করে আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়।’
আরও পড়ুন: নীলাম্বরী শ্বেতা, টুইনিং করলেন রুবেল! রবিবার রাতেই হয়ে গেল আশীর্বাদ, বিয়েটা কবে
রাজ জানান, তাঁর ছবি 'বাবলি'র রেটিং কমানোর জন্যও নাকি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘কারও সিনেমা ভালো হলে, ভালো চললে আমার আনন্দ হয়। এই মানসিকতা সকলের না-ও থাকতে পারে।’
তবে শুভশ্রীর মতে, তাঁদের ছবি ট্রেলার ‘সুপারহিট’। নায়িকার কথায়, ‘মিঠুনদা, ঋত্বিকদা, অনসূয়াদির সংলাপ থেকে ছোট ছোট রিলস বানিয়েছেন উৎসাহীরা। সেগুলো ভাইরাল হয়েছে।’ রাজ জানান, ট্রেলার দেখে নাকি অনেকের চোখে জল এসে গিয়েছিল। পরিচালকের মতে, 'সন্তান নামটা অনেকের ক্লিশে মনে হতে পারে। কিন্তু বাবা-ছেলের গল্পের নাম আর কিছু হতে পারত না। দেখবেন, মুক্তির এক-দু'দিন পর থেকে ছবিটা নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। বিরাট ভাবে এই ছবির প্রচার করে লাভ নেই। আমরাও স্টেজ লাগিয়ে নাচতে শুরু করে দিলে তো হবে না।'
আরও পড়ুন: চর্চিত প্রেমিকের বাড়ির বিয়েতে কৃতি, প্রেমে কি তাহলে শিলমোহর? কে এই কবীর, যাকে মন দিয়েছেন নায়িকা
তবে রাজের এই ইঙ্গিত যে কোন দিকে তা বেশ স্পষ্ট। যদিও সেই প্রসঙ্গে পরিচালকের মত, 'ইঙ্গিতের প্রশ্নই নেই। কনটেন্ট অনুযায়ী প্রচার হওয়া উচিত। 'সন্তান' মুক্তির পর ওয়ার্ড অব মাউথ প্রচার হবে। আমি আর শুভ শো করলে লাভ সোশ্যাল মিডিয়ার হবে।' নায়িকাও স্বামীর সুরেই সুর মিলিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, ভিডিয়োগুলো ভাইরাল হবে। কিন্তু আমাদের ছবির লাভ হবে না।’
তবে ছবির ট্রেলার দেখে অনেকে দাবি করেছে যে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ঘরানার ছবি বানাচ্ছেন রাজ। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজের মত, ‘নন্দিতাদি-শিবুর সাকসেস রেট এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। আমি যদি ওঁদের মতো ছবি বানিয়ে সাফল্য পাই তো ভাল। ওঁরা যে ভাবে নিজেদের ভাঙছে, সেটা প্রশংসার যোগ্য।’
তবে 'সন্তান'-এর মূল উপজীব্য যে বিষয়বস্তু, তা নিয়ে নব্বইয়ের দশকেও বেশ কিছু ছবি হয়েছে। তাহলে সন্তান দর্শকদের হলে টানতে কতটা সক্ষম হবে? এ প্রসঙ্গে রাজ একটা ঘটনা তুলে ধরেন। বিধায়ক তাঁর এলাকা ব্যারাকপুরের এক বৃদ্ধার কাহিনী বলেন। রাজ বলেন, ‘ব্যারাকপুরের রাস্তায় ঘুরছিলেন, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি বাড়ির হদিস দিতে পারছিলেন না। সিসিটিভি ট্রেস করা হলে, ব্যারাকপুর এলাকার বাইরে একটা বাড়ির খোঁজ পাই আমরা। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ওই মহিলার ছেলে গাড়ি করে এসে মাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে।’ রাজের কথার সূত্র ধরে, শুভশ্রী বলেন, ‘তাই নব্বইয়ের দশকে যেতে হবে। না, এই ঘটনা এখনও ঘটছে।’
রাজের মতে, এখনকার ছেলেমেয়েদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এত বেশি যে, তারা বাবা-মায়ের দেখাশোনা করার সময় বের করতে পারেন না। বড়জোর ফোন করে খোঁজ নেয়। কিন্তু বাবা মায়েরা চান ছেলেমেয়েরা একটু সময়। পরিচালক তাঁর ছবির মাধ্যমে সন্তানের উপরে বাবা-মার যে দাবি আছে, সেটা নিয়েই বলতে চেয়েছেন।
তবে অনেক ছেলে-মেয়ে অনেক সময় দাবি করেন যে, চেয়েও হয়তো তাঁরা বাবা-মাকে দেখতে পারে না। তবে শুভশ্রীর মতে, 'এই 'চেয়েও দেখতে পারে না' কথাটাতেই আমার আপত্তি। যদি উল্টো দিক থেকে ভাবি, সন্তানের জন্মের পরই বাবা-মা তাকে আলাদা রাখল বা বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দিল। বাবা-মায়েরও নিজস্ব জীবন, কেরিয়ার আছে। সেই সন্তান কিন্তু প্রশ্ন তুলবে। বাবা-মা যখন সন্তানের দায়িত্ব নেয়, তখন সন্তানকেও পাল্টা দায়িত্ব নিতে হবে। এটা একটা না বলা চুক্তি। প্রত্যেকটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে প্রত্যাশার উপর।'
এই ছবিতেও নায়িকা সেই মতই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে অনেকের মতে রাজের ছবি মানেই শুভশ্রী। এই প্রসঙ্গে পরিচালকের মত, ‘এত ভাল অভিনেত্রীকে কাস্ট করতে চাওয়াটাই তো স্বাভাবিক।’ তবে এই দাবি খানিক নস্যাৎ করে শুভশ্রী বলেন, ‘আবার প্রলয়-এ কৌশানী (মুখোপাধ্যায়) ছিল। রাজের হিন্দি প্রজেক্টেও কিন্তু আমি নেই।’ রাজ স্ত্রীয়ের কথার সূত্র ধরে বলেন, 'আসলে নিজের লোক থাকলে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধে হয়। 'সন্তান'-এ শুভর চরিত্রটা ছোট। কিন্তু ও তা-ও রাজি হয়েছে।'
তবে বর্তমানে দুই সন্তানের মা শুভশ্রী, তাঁর কাঁধে দায়িত্বও অনেকটা। কিন্তু সবটা সামলে নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে তুলে ধরা কতটা চ্যালেঞ্জিং? প্রশ্নে অকপট শুভশ্রী বলেন, ‘কাজের প্রতি যদি ভালোবাসা থাকে, তা হলে মনে হয় না অতিরিক্ত কিছু করছি। যখন বাচ্চাদের সঙ্গে থাকি, তখন আমি কাজের জায়গা মিস করি না। কাজ থাকলে ওদের উপর নজর রাখি, কিন্তু মনটা পুরোপুরি কাজে দিই। টানা শুটিংয়ের পর ছুটি নিই। তবে পরিবারের সকলে খুব সাপোর্ট করে।’
কিন্তু কেবল শুভশ্রীতো নন, রাজও তাঁদের বাবা। সেই দায়িত্ব কতটা পালন করতে সময় পান বিধায়ক-পরিচালক? রাজের কথায়, ‘সময় বার করে নিতে হয়। অবশ্যই শুভশ্রী বেশি সময় দেয়।’ তবে স্বামীর দায়িত্বের কথা জানিয়ে শুভশ্রী বলেন, ‘আমি শুধু অভিনয় করি। রাজের কাজের চাপ আমার চেয়ে বেশি।’ তখন রাজ জানান যে, একটা শ্যুটিংয়ের জন্য নায়িকা দু'দিনের জন্য মুম্বই গিয়েছিলেন। তখন পুরো সময়টা বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কাটিয়েছেন পরিচালক।
শুভশ্রীর কথায়, ‘আগেকার দিনে ধারণা ছিল, সন্তানদের দেখাশোনার সব দায়িত্ব একা মায়ের। বাবা শুধু টাকাটা দেবে। এখন বাবারাও বাড়ির কাজ করে, বাচ্চাদেরও দেখে। রাজ তো বটেই, এটা আমি অনেক বাড়িতেই দেখেছি।’
তবে এই সামাল দেওয়া খুব একটা সহজ কথা নয়। ভালোবাসার পাশাপাশি বকুনি দেন অনেকে। কিন্তু অভিনেত্রী এক্ষেত্রে ঠিক কি করেন? এই প্রসঙ্গে শুভশ্রী বলেন, ‘ছোটটাকে কী আর বলব! ইউভানকে মাঝেমাঝে একটু বকা দিতে হয়।’ রাজ তখন রসিকতা করে বলেন, ‘ছোটটা আমাদের বকুনি দেয়। তবে কিছুর দরকার পড়ে না, শুধু মাকে তাকাতে হয়। বাচ্চারা কেন, মা তাকালে বাড়িসুদ্ধ সকলের হয়ে যায়! ছোটটাও মায়ের মতো গুন্ডা টাইপ হবে।’ শুভশ্রীও মজার ছলেই বলেন, 'ইউভান কিছু করলেই বলবে মায়ের মতো হয়েছে! তবে ইউভান ওর বাবার মতো ক্যারিশ্যাটিক, ভদ্র।
প্রসঙ্গত, ছ'বছরের দাম্পত্ত জীবন কাটাচ্ছেন রাজ-শুভশ্রী। তবে এখনও তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন শুরুর সময়ের মতোই। শুভশ্রীর কথায়, ‘বুঝতেই পারিনি এতগুলো বছর কখন কেটে গেল। এই তো সে দিনের ঘটনা।’ রাজের কথায়, 'আসলে আমাদের ফোকাসটা গোড়া থেকেই স্পষ্ট। দু'জনেই বাড়ি, পরিবারকে প্রায়োরিটি দিই। সব কিছুর মাঝে নিজেদের সম্পর্কটাকেও গুরুত্ব দিই। সব সম্পর্কেই এফট দিতে হয়, সেটা স্বামী-স্ত্রী হোক, কী 'সন্তান'।'