দেখতে দেখতে চার বছরে পা রাখল শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ও রাজ চক্রবর্তীর প্রথম সন্তান ইউভান। ছেলের জীবনের এই বিশেষ দিনে রাজ নিজের প্রোফাইল থেকে একটি ভালোবাসায় ভরা পোস্ট শেয়ার করে নেন। তাঁর ও ইউভানের একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, 'শুভ জন্মদিন ইউভান, অনেক ভালোবাসা নিও।' তবে রাজ্যের এই উত্তাল পরিস্থিতিতে নানা কারণে রাজ-শুভশ্রীকে ট্রোল্ড হয়ে হয়েছে। নিজের সেইসব অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে ছেলের জন্মদিনে খুদে ইউভানকে দিলেন বাবা রাজ বিশেষ বার্তা।
আনন্দবাজার অনলাইন মারফত ছেলের চার বছরের জন্মদিনের খোলা চিঠির একেবারে শুরুতেই কলকাতার উত্তাল পরিস্থিতি থেকে 'মিছিল নগরী'র উত্থান সবটা নিয়ে রাজ বললেন, 'তোমার এ বারের জন্মদিনে শহর, সমাজ, সময় উত্তাল। তুমি আর তোমার বোন বড় হয়ে জানতে পারবে ২০২৪-এ এক তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর বিচার চেয়ে গোটা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিল এক বৃহত্তর আন্দোলনে। একসময়ে কলকাতা মিছিল নগরী হিসাবে পরিচিত ছিল বিশ্বের কাছে। সেই কলকাতা আবার জেগে উঠেছে নতুন করে। কলকাতায় এমন আন্দোলন আগে দেখিনি। মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলা দেখেছি। গুজরাতের দাঙ্গা দেখেছি। বাবরি মসজিদের পতন দেখেছি অযোধ্যায়। সংসদে দুঃসাহসিক আক্রমণ দেখেছি জঙ্গিদের। দেখেছি গোটা বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের দাপট। কিন্তু কলকাতা এমন হয়ে যাবে ভাবিনি।'
আরও পড়ুন: দাদা ইউভানের জন্মদিনে ইয়ালিনির মুখ প্রকাশ্যে! রাজ না শুভশ্রী, কার মতো দেখতে খুদে
তারপরেই ছেলেকে জানান মায়ের অস্থিরতার কথা। উত্তাল এই পরিস্থিতিতে একদম ভালো নেই শুভশ্রী। রাজের কথায়, 'আমি এক রকম করে নিজেকে সামলে নিলেও, তোমার মায়ের মধ্যে হতাশা আর বিষাদ ভিড় করছে। ওঁকে দেখে বুঝতে পারি, ও পারলে রোজ রাস্তায় নামে। ওঁর চোখেমুখে রাগ। তোমার মাকে এখন সামলে রাখার চেষ্টা করছি আমি। বলছি, শুভ, শান্ত হও।'
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে নানা তারকাদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল, ট্রোল্ডও হতে হয়েছিল যথেষ্ঠ। সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েনি রাজ-শুভশ্রীও। নানা ভাবে তাঁদেরও স্যোশাল মিডিয়ায় হেনস্থা হতে হয়েছে। তবুও সব অগ্রাহ্য করে পথে নেমেছেন তাঁরা, তিলোত্তমার প্রতি সুবিচারের জন্য আওয়াজ তুলেছেন। এই গণআন্দোলনে তাঁদের ভূমিকাটা ঠিক কী, তা ছেলে ইউভানকে খুব সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, সেই শত শত ট্রোলের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন রাজ, লিখলেন, ' ১১ অগস্টের পরে আর কোনও কিছুই সমাজমাধ্যমে লিখিনি আমি। জানো, মানুষ আমাদের যেমন ভালোবাসে, আবার ভুলও বোঝে। অনেক কিছু লেখে। সব কিছু দেখিয়ে, বলে আমরা বোঝাতে পারি না। সবাই আমাদের ভালো চায় না ইউভান। জানি, স্বাভাবিক। তবে সব বিষয়ে যে প্রতিক্রিয়া জানাতেই হবে এমনটাও নয়। ভাবছ তোমার জন্মদিনের চিঠিতে বাবা সময়ের প্রসঙ্গ তুলছে কেন? মনে হতেই পারে। তুমি আর তোমার বোন বড় হয়ে যখন জানতে চাইবে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আমাদের কী ভূমিকা ছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর এখানে দিয়ে রাখলাম।'
আরও পড়ুন: ‘নিজের জন্য রুখে দাঁড়াতে হয়…’, অহংকারী বলে অপমান! অনন্যাকে কড়া জবাব সিদ্ধান্তের
সন্তানের চরিত্র গঠনের জন্য বাবা-মায়ের ভূমিকা ঠিক কতটা? ছোট থেকে ন্যায় অন্যায়ের বোধ জাগানো, 'অনুমতি' মতো শব্দের সঙ্গে শিশুদের পরিচিয় করানো কতটা জরুরি সে কথাও বলেন রাজ। পরিচালক লেখেন, 'তুমি বড় হলে জানবে তোমার মাকে। যে মায়ের ইশারায় তুমি সেই কোন ছোট্ট বয়স থেকে বুঝতে শিখেছ কোনটা ‘ঠিক’ আর কোনটা ‘ভুল’। তুমি জানো, তোমাকেও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। বেশি ক্ষণ রাত জাগতে হলে মাকে জানাতে হয়৷ যদি মা অনুমতি দেয়, তবেই রাত জাগতে পারো। তোমাদের জন্য রয়েছে আমাদের অঢেল ভালোবাসা। কিন্তু তার সঙ্গেই রয়েছে 'নিয়ম', 'অনুমতি'র মতো শব্দগুলো। আমি জানি বড় হয়ে তুমি বুঝতে পারবে, কেন তোমাকে টেলিভিশন দেখার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়, কেন তোমার সামনে কোনও মোবাইল ফোন রাখি না আমরা। শুনতে পাই আজকের পৃথিবীতে ছেলেমেয়ে মানুষ করা নাকি খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। আমার মনে হয় বিষয়টা কঠিন নয়, বিষয়টা নজরদারির। আমার সন্তান কোথায় যাচ্ছে? কী দেখছে? কাদের সঙ্গে মিশছে? সর্ব ক্ষণ খেয়াল রাখা জরুরি।'
এ সমাজে বার বার মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হতে হয়। তাঁদের কাজে বড় বাঁধা হয়ে ওঠে দিন-রাত আর সমাজের কিছু লোলুপ চোখ। সেখানে সকলে সমান অধিকার নিয়ে যাতে বাঁচতে পারে, তার শিক্ষাটা প্রতিটি পরিবার থেকে শিশুদের দেওয়া উচিত। তাহলে হয়তো ধর্ষণের মতো কুৎসিত, ঘৃণ্য অপরাধকে গোড়া থেকে নির্মূল করা সম্ভব হবে। আর সেই সাম্যের বার্তা এবার রাজের কথাতেও। তাই ছেলের জন্মদিনে তিনি ইউভানকে বললেন, 'ইউভান, আজ তোমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার পরে বাড়িতে দেখছিলাম আমার মাকে জড়িয়ে ধরে একনাগাড়ে তোমার বোন ইয়ালিনি আদর করে যাচ্ছে। মনে হল আমি ভাগ্যবান। একসঙ্গে কন্যা আর পুত্রসন্তানের বাবা হয়েছি। উল্টো দিকে আমার আর তোমার মায়ের দায়িত্ব অনেক। তোমাদের দু’জনকেই সমাজে ছেলে ও মেয়ের সাম্য ও একে অপরকে সম্মান করতে শেখাতে হবে। আমার মনে হয়, তা হলে তোমাদের এই পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিতে আর অসুবিধে হবে না।'