ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছিল 'রং দে বসন্তী'। ছবির গল্প থেকে সুরে মজেছিল আসমুদ্রহিমাচল ভারত। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়ার এত বছর পরেও এই ছবি ও তার গান আজও সমানভাবে জনপ্রিয় দর্শক ও শ্রোতাদের মধ্যে। তবে জানেন কি, 'রং দে বসন্তী'-র সুরকার হিসেবে পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার প্রথম পছন্দ কিন্তু মোটেই ছিলেন না এ আর রহমান!
একথা জানিয়েছেন স্বয়ং রাকেশ। বিখ্যাত ব্রিটিশ রক ব্যান্ড 'জেনেসিস'-এর অন্যতম সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা পিটার গ্যাব্রিয়েল-কে 'রং দে বসন্তী'-র সুরকার হিসেবে মনোনীত করেছিলেন রাকেশ। কথাবার্তাও প্রায় পাকা হওয়ার দিকেও এগিয়েছিল। তবে শেষমুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছিল পিটার নয়, বরং এ আর রহমান-ই পারবেন এই ছবির জন্য লাগসই সুর তৈরি করতে। সেইমতো রহমানের কাছে গিয়ে এ ছবির প্রস্তাব তিনি পাড়েন। বাকিটা ইতিহাস।
এ প্রসঙ্গে নিজের আত্মজীবনী 'দ্য স্ট্রেঞ্জার ইন দ্য মিরর'-এ রাকেশ লিখেছেন 'রং দে বসন্তী'-র গানের জনপ্রিয়তা সেইসময় আকাশ ছুঁয়েছিল। লোকের মুখে মুখে ফিরত ছবির সব গান। 'রহমানকে তাঁর মিউজিক স্টুডিওতে বসে কাজ করতে দেখাটাই বিরাট এক অভিজ্ঞতা। ওঁর মতো একজন খ্যাতনামা সুরকার যেভাবে আমার ছবির জন্য সুর ও গান তৈরি করছিলেন সেই গোটা বিষয়টা সামনে থেকে দেখা আমার জীবনের অন্যতম আনন্দের ব্যাপারের মধ্যে একটি ছিল!', লিখেছেন রাকেশ। এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন যে একটি ছবি তৈরির ব্যাপারে রহমানের চিন্তাভাবনা ভীষণ সহজ এবং পরিষ্কার। রহমান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে যখন একটি ছবি তৈরি হয় সেই ছবির অভিনয় থেকে সম্পাদনা, সুর থেকে গান সবাই যেন স্রেফ একটি গল্পের কথাই বলে। অর্থাৎ ছবির মূল বিষয়বস্তু থেকে কেউ যেন সরে না আসে। ছবির সবকটি অংশ যেন সেই একই লক্ষ্যের দিকে এগোয়। এবং এক্ষেত্রে পরিচালকের কাজ হল ছবির সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি শিল্পীকে সেই লক্ষ্যের ব্যাপারে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া।
'রং দে বসন্তী' ছবিতে সুর দেওয়ার প্রসঙ্গে এ আর রহমান জানিয়েছেন যে পরিচালক চেয়েছিলেন তাঁর ছবির গল্পে যে 'ডার্ক' বিষয়টি রয়েছে তা যেন সুরে প্রকাশ পাওয়ার পাশাপাশি মানুষের হৃদয় ছুঁতে পারে। বহু বছর পরেও এই ছবির গানের সঙ্গে যেন মানুষ একাত্ম হতে পারে। তাই চিরাচরিত পথে না হেঁটে একটু অন্যভাবে চেষ্টা করেছিলাম। যেমন 'লুকা ছুপি' গানের সংলাপে এবং সুরে মৃত্যুকে শোক হিসেবে না দেখিয়ে মুক্তি হিসেবে দাখিল করতে চেয়েছিলাম। পাশাপাশি গানের সংলাপে রূঢ় বাস্তবের ছবিটা প্রকাশ না করে সেই কথাই প্রতীকী এবং রূপক অর্থে ব্যবহার করেছিলাম।'