ভারভারা রাও রচিত ‘কসাই’ কবিতা অবলম্বনে নাটক পরিবেশন করে রাণাঘাটে আক্রান্ত নাট্যকর্মী। অভিযোগের তির শাসকদল তৃণমূলের দিকে। মাঝরাতে নাট্যকর্মী নিরুপম ভট্টাচার্যের বাড়িতে ঢুকে তাঁকে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, আলোচনার আছিলায় ঘরে ঢুকে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অনান্য সদস্য়দের নিগ্রহ করেছে তৃণমূল কর্মীরা, অবিলম্বে নাটক বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনা পুলিশকে জানালে, শুরুতে অসহোযোগিতা করেছে পুলিশ, অভিযোগ নাট্য কর্মীর। অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন নাট্য সংগঠন এবং একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন নিরুপম ভট্টাচার্য।
তাঁর অভিযোগ, পরিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ রানাঘাটে তাঁর বাড়িতে আসেন কিছু ব্যক্তি। আলোচনার নামে নাটক সম্পর্কে নানান জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। নিরুপমের কথায়, ‘ওঁরা বলে রানাঘাটে এসব নাটক করা যাবে না’। এরপর আচমকাই শুরু শারীরিক নির্যাতন।
কেন ওই নাটক ঘিরে বিতর্ক? ভারভারা রাও রচিত ‘কসাই’ কবিতা অবলম্বনে যে নাটক উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কথা উঠে এসেছে। নিরুপমের কথায়, ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে বলেই ভয় ধরে গিয়েছে শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের। তাই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ২টো পর্যন্ত মারধর করা হয়েছে’। নাট্য পরিচালক ‘বিজেপির লোক’ এমন দাবিও করেছে ‘তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী’ বলেন নিরুপম।
নাট্যকর্মীর উপর এই হামলার তীব্র নিন্দ করেছেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শাসকদলকে সরাসরি বিঁধে জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেতা লেখেন, ‘…চুরির টাকা দিয়ে করা কার্নিভালে ED’র তলব করা নায়ক নায়িকাদের নিয়ে হাঁটতে গেলে সরিয়ে দিতে হয় ন্যায়ের লড়াইয়ে নামা চাকরিপ্রার্থীদের। কারণ? কার্নিভালের মাঝে সত্যের উপস্থিতিও কি পরিবেশ দূষণ ঘটায় ? নিরুপম ভট্টাচার্যের দোষ কি? সে সৎ ভাবে থিয়েটার করে, নিজের মতো করে থিয়েটারকে বদলানোর স্বপ্ন দেখে, সে তার নাটকে সত্যি কথা বলে। সেই জন্যই শাসকের কালো হাত টেনে ধরে তার কলার, ভেঙে দিতে চায় ডাকঘর। কারণ ডাকঘরের বদলে আরও একটা ক্লাবঘর হলে সুবিধে অনেক, জমানো যাবে আরও কিছু চুরির টাকা, অশিক্ষা আর আর ডিজে বক্স চালিয়ে নাচ। আর সংস্কৃতি বরাদ্দ থাকবে শুধু তাদের জন্যে, যারা মহানায়ক উত্তম কুমার সম্মান আর কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রথম দিনে নীল সাদা রঙের সামিয়ানার তলায় থাকবেন। না হলেই মার, চোখ রাঙানি , আসলে রাজনীতি বরাবরই স্বাধীন মনের শিল্পীদের রগড়ে দিতে চায়’।
যদিও তৃণমূলের দাবি, সবটাই রঙ চড়িয়ে বলা হচ্ছে। এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। রানাঘাট সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে গোটা বিষয়টা।’ রানাঘাটের পুলিশ সুপার কে কান্নানের কথায়, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’