সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকেই জনগণ কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে তাঁর বান্ধবী তথা লিভ ইন পার্টনার রিয়া চক্রবর্তীকে। সুশান্তের পরিবারের তরফে রিয়ার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের আদালতেও নিয়মিত বিচার চলছে রিয়ার। এই মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তেমনই রিয়াকে নিয়ে ক্রমাগত ঘটে চলা এই মিডিয়া ট্রায়াল অনেককে মনে করাচ্ছে অতীতের এক ধুলো জমা অধ্যায়ের। বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রেখাকেও তাঁর স্বামীর আত্মহত্যার পর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল, সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি ছিল না ঠিকই-তবে বলিউডের বহু ব্যক্তিত্বই পাশে দাঁড়াননি রেখার।
রবিবার সঙ্গীতশিল্পী চিন্ময়ী শ্রীপদা একটি পোস্ট শেয়ার করে নেন ইনস্টাগ্রামে। যেখানে তিনি রেখার জীবনীর বেশ কিছু অংশ তুলে ধরেন। ইয়াস্সের উসমানের লেখা ‘রেখা : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তে বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে সেই অধ্যায়ের কথা যখন তাঁর স্বামী মুকেশ আগারওয়ালের আত্মহত্যার পর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল রেখার ঘাড়ে। রেখাকে ডাইনি বলে সম্বোধন করেছিলেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পাশে দাঁড়াননি রেখার বলিউডের সহকর্মীরাও।
আজকের প্রজন্মের অনেকেই রেখার জীবনের এই অধ্যায় সম্পর্কে পরিচিত নন। জীবনে একবারই বিয়ে করেছিলেন বলিউডের এভারগ্রিন বিউটি রেখা। তবে দাম্পত্য সুখ খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি নায়িকার জীবনে।১৯৯০ সালের মার্চ মাসে ব্যবসায়ী মুকেশ আগারওয়ালকে বিয়ে করেছিলেন রেখা। বিয়ের সাত মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৯০ এর ২রা অক্টোবর আত্মহত্যা করেন রেখার স্বামী। সেই সময় লন্ডনে ছিলেন তাঁরা দুজনেই। রেখার ওড়নায় ফাঁস লাগিয়েই আত্মহত্যা করেছিলেন মুকেশ। অবসাদগ্রস্ত ছিলেন মুকেশ,দাবি করেন রেখার জীবনীকার। বিয়ের পরেই মুকেশের অবস্থার কথা জানতে পেরেছিলেন রেখা। যদিও পরিবার সেই দাবি মেনে নেয়নি।
৩০ বছর আগেও জাতীয় স্তরে রেখাকে যেন একটা ডাইনি খোঁজার কাজ শুরু হয়। সারাদেশের লোকেরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে, সংবাদমাধ্যমে ‘নরখাদক’ হিসাবে তুলে ধরা হয় রেখাকে।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দিয়ে মুকেশের শোকস্তব্ধ মা বলেছিলেন ‘ওই ডাইনিটা আমার ছেলেকে খেয়ে ফেলল। ভগবান ওকে কোনওদিন ক্ষমা করবে না’। জাতীয় স্তরের প্রত্যেক সংবাদমাধ্যমে শিরোনামে ছিল এই লাইন। অনিল গুপ্তা দাবি করেন, 'আমার দাদা রেখাকে সত্যি ভালোবেসেছিল। ওর জন্য ভালোবাসার অর্থ ছিল- কর না হয় মর। রেখা ওর সঙ্গে যা করল সেটা ও সহ্য করতে পারেনি। এবার ওঁনার (রেখার) কী চাই? আমাদের অর্থ?
পরিচালক সুভাষ ঘাই ও অভিনেতা অনুপম খের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন রেখার।ঘাই বলেছিলেন, ‘রেখা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মুখে কালি লেপে দিল। যা কোনওদিন মুছে ফেলা যাবে না। এবং এরপর থেকে কোনও সম্মানীয় পরিবার কোনও নায়িকাকে নিজেদের ঘরের বউয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার আগে দু’বার ভাববে। …দর্শক কীভাবে এরকম মহিলাকে ভারতের নারী বা ন্যায়ের দেবী হিসেবে মেনে নেবে?’ অনুপম খেরের মন্তব্য ছিল-‘তিনি একজন জাতীয় খলনায়িকাতে পরিণত হয়েছেন। ব্যক্তিগত ও পেশাগত, দুই জীবনেই প্রভাব পড়বে রেখার। আমি জানি না কখনও সামনাসামনি দেখা হলে আমার প্রতিক্রিয়া কী হবে।’
মুকেশের আত্মহত্যা নিয়ে সত্য, অর্ধ-সত্য নানা গল্প সেই সময় পরিবেশিত হয়েছিল মিডিয়ায়। ‘দ্য ব্ল্যাক উইডো',‘মুকেশের আত্মহত্যার পেছনে ভয়াবহ সত্য’।রেখাই খুন করেছেন মুকেশকে- এমন দাবি তুলে ছিলেন অনেকেই।
যদিও রিয়া এবং রেখার মামলায় মিডিয়া ট্রায়ালের বিষয়টিতে মিল থাকলেও বেশ কিছু ফারাকও রয়েছে। মুকেশ সুইসাইড নোট রেখে গিয়েছিলেন, সেখানে স্পষ্টই লেখা ছিল ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। রেখার বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি কিংবা এনসিবির তদন্ত বসেনি। গ্রেফতারও হননি রেখা, আপতত মাদকচক্রে জড়িত থাকার অপরাধে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর হাতে গ্রেফতার রিয়া বন্দি বাইকুল্লা জেলে।
তবে রিয়ার মিডিয়া ট্রায়ালের বিষয়টি নিয়ে বারবার আপত্তি উঠছে সমাজের বিভিন্নমহল থেকে। বম্বে হাইকোর্টও এই মর্মে সংবাদকে ‘সংযম বজায় রাখবার’ নির্দেশ দিয়েছে। সুশান্ত মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে, বা তদন্তের জন্য ক্ষতিকারক এমন কোনও তথ্য বা সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকবার কথা জানিয়েছে হাইকোর্ট।