বাংলা গানের অন্যতম কিংবদন্তি হলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তিনি তাঁর গানের জাদু দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন সকলকে। কণ্ঠ দিয়েছেন একাধিক কালজয়ী গানকে। বাংলা গানের স্বর্ণযুগের এই শিল্পী গত বছরের ১৫ জানুয়ারি সুরোলোকে চলে যান। বার্ধক্যজনিত রোগে বহুদিন ধরেই ভুগছিলেন তিনি। এমনকি করোনাতেও আক্রান্ত হন। একই সঙ্গে কোমরের হাড় ভাঙে তাঁর। অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে শরীর আরও খারাপ হয়ে যায়। ২০২২-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গান গেয়েছেন তিনি। কেবল বাংলা নয়, অন্যান্য ভাষাতেও গান গেয়েছেন তিনি। তিনি যেমন আধুনিক গান গেয়েছেন তেমনই গেয়েছেন ধ্রুপদী সঙ্গীতও। ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁর থেকে সঙ্গীত শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। তবে প্রাথমিক ভাবে তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয়েছিল দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। সেই গানের কথা এবং সুর দিয়েছিলেন গিরিন চক্রবর্তী।
১৯৫০ সালে মুম্বই পাড়ি দেন গায়িকা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে। দুজনের মধ্যে তৈরি হয় দারুণ বন্ধুত্ব। দুজনে ডুয়েট গানও গেয়েছেন। এছাড়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শচীন দেব বর্মন, সলিল চৌধুরী, প্রমুখ সঙ্গীর পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। তাঁর গাওয়া, এই মধু রাতে, এই পথ যদি না শেষ হয়ে শুধু গানের দিন, ইত্যাদি গানগুলো দারুণ জনপ্রিয় হয়। শুধু জনপ্রিয় নয়, বাঙালির মননে, আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। একাধিক রোম্যান্টিক গান উপহার দেন তিনি।
২০১১ সালে পান বঙ্গবিভূষণ। ২০২২ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী দিতে চাওয়া হলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তবুও আজীবন এত খ্যাতি, পরিচিতি পাওয়া সত্বেও ভীষণ সাধারণ জীবন যাপন করেছেন গায়িকা। স্নিগ্ধ, নম্র থেকেছেন। আজ তাঁর চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হল, শূন্যতা রয়েই গিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর স্মৃতি, এবং গানও।