বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > Remembering Sushant Singh Rajput: তারার মাঝে সুশান্ত সিং রাজপুত: মন খারাপের দুই বছর

Remembering Sushant Singh Rajput: তারার মাঝে সুশান্ত সিং রাজপুত: মন খারাপের দুই বছর

সুশান্ত সিং রাজপুত।

সাফল্য কীভাবে জীবনে সামলাতে হয়? আপাত দৃষ্টিতে খুব নিরীহ একটি প্রশ্ন। কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব। তাই কয়েকশো ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, প্রতিটা মুহূর্তে মানুষের চাওয়া পাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে সাধারণ থাকা নেহাৎ সহজ নয়। তার উপর সাফল্য ক্ষণিকের।

রণবীর ভট্টাচার্য

ঠিক দুই বছর আগের কথা। কোভিডের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে ভারত, তখনও ঠাওর হয়নি অতিমারির রূপ কী হতে পারে। এরকমই এক সময়ে বাজ পড়ল রুপোলি পর্দার দুনিয়ায়, সুশান্ত সিং রাজপুত আর নেই। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় রোজ দাবি ওঠে সুবিচারের। অনেকেই মানতে পারেননি আত্মহত্যার তত্ব, ষড়যন্ত্রের তত্বের উপর একের পর এক টুইট, পোস্ট দেখেছে সবাই। তারপর সিবিআই থেকে নারকোটিক্স বিভাগ, তদন্ত চলছে এখনও। কিন্তু সারা ভারতের মানুষ হাপুস নয়নে তাকিয়ে আছে সুশান্তের ছবির দিকে— ৩৪ বছর বয়সী শিক্ষিত, মার্জিত, ছোট শহর থেকে উঠে আসা সুশান্তের জন্য মন কেমন করেছে সবারই। সুশান্তর সিং রাজপুতের শেষ সিনেমা দেখেছে সবাই, সেখানে সিনেমা কেমন হয়েছে বড় কথা নয়, বড় পর্দায় শেষবারের জন্য সুশান্তকে দেখে ভারাক্রান্ত হয়েছে সবারই। তবে এই হঠাৎ চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে সমাজের কাছে অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন সুশান্ত। সেগুলো ভীষণ প্রাসঙ্গিক, এই নিয়ে তর্ক হতে পারে না।

সাফল্য কীভাবে জীবনে সামলাতে হয়? আপাত দৃষ্টিতে খুব নিরীহ একটি প্রশ্ন। কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব। তাই কয়েকশো ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, প্রতিটা মুহূর্তে মানুষের চাওয়া পাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে সাধারণ থাকা নেহাৎ সহজ নয়। তার উপর সাফল্য ক্ষণিকের।সচিন তেন্ডুলকর বা উত্তম কুমার বা মেসি হওয়া সহজ নয়, আর তাদের জীবনেও ব্যর্থতা এসেছে তাদেরও। সাফল্যের সাথে মানুষকে আঁকড়ে ধরে একাকিত্বও! সুশান্ত শেষের কয়েকদিন সুস্থ ছিলেন কিনা বা তার হাতে কাজ ছিল কিনা, সেটা তদন্ত যোগ্য। কিন্তু একটা বাস্তব মানতেই হবে, যেই মানুষটি তিন বোনের এক ভাই হয়ে বড় হয়েছেন, সাফল্যের সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন, সেই মানুষটি অদ্ভুত বাঁধা পড়েছেন মুম্বইয়ের বিলাসবহুল ম্যানসনে। যেটা হয়ত মানুষ সাফল্য বলে মনে করে, সেটা হয়ত বড্ড বেশি একমাত্রিক সাফল্য।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কজন ভাবেন এখন? সুশান্ত কি নিজের অবস্থা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন কাউকে? বললেও কি সাড়া পেয়েছিলেন নিকট বন্ধু বা বান্ধবীর থেকে? প্রশ্নগুলো এখনও ঘুরে ফিরে বারবার আসে। কোভিডে যেমন লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন, সুশান্ত ও সম্ভবত বলিউডের মাধ্যাকর্ষণ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন সেই রকম। সুশান্ত সিং রাজপুতের চলে যাওয়ার পর আলোচনা হয়েছে রুপোলি পর্দার স্বজনপোষণ নিয়ে। স্বজনপোষণ খুব তুলনামূলক একটি শব্দ, যার দাক্ষিণ্য অনেক মানুষই পেয়ে থাকেন জীবনে। কিছু ক্ষেত্রে জানা যায় আবার কিছু ক্ষেত্রে ঘোলাটে রয়ে যায়। ইংরেজিতে অনেকেই বলে থাকেন ‘life is not fair’— স্বজনপোষণ নিয়ে সেরকম ভাবা যেতেই পারে যেখানে জীবনের রেসে অনেক ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী এগিয়ে থেকে শুরু করার সুযোগ পান। কিন্তু তাই বলে দোষ দেওয়া সুবিবেচকের কথা নয়। অভিষেক বচ্চন, অর্জুন তেন্ডুলকর বা ঋষি কাপুররা কি কোন দোষ করেছেন? এই সুস্থ আলোচনা হতেই পারে আরো সামনের দিনে। তবে সুশান্ত যদি পর্দার ধোনির মত জীবনেও ছয় মেরে জীবন শেষ করতেন, তাহলে হয়তো আজকের দিনে এই মন খারাপ হতো না অনেকের। তবুও সুশান্তের মত প্রতিভারা জন্মাবেন বারবার আর লিখে যাবেন সেই ১০০টি ইচ্ছেপূরণের কথা।

বন্ধ করুন