বিহারের ভূমিপুত্র সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে গতকালই বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল মহারাষ্ট্র ও বিহার সরকার। শুক্রবার রাতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এই মামলায় নিজের নীরবতা ভেঙে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করলেও বিশেষ লাভ হয়নি তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল। এদিন স্বাভাবিকভাবেই মুম্বই পুলিশের হয়ে ব্যাট ধরলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান, কাঠগড়ায় দাঁড় করান রাজ্যের বিরোধী শিবির বিজেপিকে। সুশান্তের মৃত্যুকে হাতিয়ার করে কেউ যেন বিহার ও মহারাষ্ট্রের সম্পর্কে চিড় না ধরায় সেকথাও বলতে শোনা গিয়েছিল মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে বারবার মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে পাটনা পুলিশের পথ আটকানোর অভিযোগ উঠে আসছে। এর আগে পাটনা পুলিশের তদন্তকারী দলকে সুশান্তের ব্যাঙ্ক সেস্টমেন্ট দিতে টালবাহানা করেছিল মুম্বই পুলিশ। এবার ময়নাতদন্তের রিপোর্টও দেওয়া হল না বিহার পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের।
সূত্রের খবর শনিবার সকালে কুপার হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন বিহার পুলিশের তদন্তকারী দল। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সুশান্তের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট চান তাঁরা। কিন্তু তাঁদের হাতে সেই রিপোর্ট দেওয়া হয়নি,জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, হাসপাতালের তরফে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়ায় হয় মুম্বই পুলিশের কিছু প্রোটোকল রয়েছে সেই অনুযায়ী অন্য রাজ্যের পুলিশের হাতে এই রিপোর্ট দেওয়া যাবে না। গত কয়েকদিন ধরেই দেখা গিয়েছে মুম্বইয়ে তদন্তের জন্য অটো কিংবা প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার করতে হচ্ছে পাটনা পুলিশকে। তাঁদের কোনওরকম সহযোগিতা করেনি মুম্বই পুলিশ। এরমাঝেই শুক্রবার রাতে সাংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি পাটনা পুলিশের তদন্তকারী দলকে।সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় উঠে এসেছে মুম্বই পুলিশকে পাটনা পুলিশের আধিকারিকদের কার্যত জোর করে পুলিশ ভ্যানে তুলে তড়িঘড়ি রওনা দেয়।
এই ছবি থেকেও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বিহারের প্রিন্সিপাল অ্যাডিশ্যানাল অ্যাডভোকেট জেনারেল ললিত কিশোর বলেন, ‘যখন কোনও রাজ্যের পুলিশ অপর রাজ্যে যায় তদন্তের জন্য তখন সেই নির্দিষ্ট সরকার এবং আধিকারিকরা সহযোগিতা করে। এই মামলায় খুব দুর্ভাগ্যজনক যে মুম্বই পুলিশ সহযোগিতা করছে না’।
সুশান্তের মৃত্যুর পর পেরিয়ে গিয়েছে দেড় মাস। তবে গত কয়েকদিনে এই মৃত্যু তদন্তের অভিমুখ বেশ খানিকটা পাল্টে গিয়েছে। মুম্বই পুলিশের পাশাপাশি এখন এই মামলার তদন্ত করছে পাটনা পুলিশও। গত শনিবারই সুশান্তের বাবা কেকে সিং পাটনার রাজীব নগর থানায় রিয়া চক্রবর্তী, তাঁর পুরো পরিবার ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে সুশান্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়াসহ একাধিক ধারায় এফআইআর দায়ের করেছেন। যদিও এই মামলা পাটনা পুলিশের এক্তিয়ার বহিভূর্ত,কারণ সেটি তাঁদের জুরিসডিকশনের ( আইনগত অধিকারক্ষেত্র) মধ্যে পরে না। এমনই দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করেছেন রিয়া চক্রবর্তী। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই পিটিশনের পাল্টা দুটি পৃথক ক্যাভিয়েট দায়ের করেছেন সুশান্তের বাবা কে সিং এবং বিহার সরকার। অন্যদিকে শুক্রবার উদ্ধব ঠাকরে সরকারও এই মামলার তদন্ত যাতে মুম্বই পুুলিশের হাতেই থাকে সেই নিয়ে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছে সুপ্রিম কোর্টে।