সিরিজ: ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর
অভিনয়ে: টোটা রায়চৌধুরী, কল্পন মিত্র, অনির্বাণ চক্রবর্তী, ঋদ্ধি সেন, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ গুপ্ত
পরিচালক: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
রেটিং: ৩/৫
ফেলুদা মানেই বাঙালির ইমোশন। এমন অনেক বাঙালি রয়েছেন, যারা হয়তো এক-একটা ফেলুদার গল্প প্রায় গুলে খেয়ে ফেলেছে। পড়া ধরার মতো ব্যাপার, জিজ্ঞাসা করলেই গড়গড়িয়ে বলে দেবে! সেই কিংবদন্তি চরিত্রকেই মুঠোফোনে বন্দি করেছন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এর আগে দার্জিলিং জমজমাটে গল্পের সেভাবে অদল-বদল ঘটাননি সিরিজ বানাতে গিয়ে। আর তাই, সেই ভাবনা থেকেই দেখতে বসা ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’। আর তারপরই গণ্ডগোল!
দার্জিলিং জমজমাটের পথে হাঁটেননি এবারে সৃজিত। বরং ভূস্বর্গ ভয়ঙ্করের চিত্রনাট্যের সঙ্গে সত্যজিতের লেখার মিল হয়তো ৭০ শতাংশ। বাকিটা পরিচালক মশাই নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে যোগ করেছেন। ফেলুদাতে ভারত-পাক সম্পর্কের জটিলতা, জঙ্গিহানা, র (RAW) যারা মেনে নিতে পারবেন, তাঁদের বোধকরি অতটাও খারাপ লাগবে না। বা গল্পের অন্যতম চরিত্র বিজয় মল্লিককে নিয়ে যে ড্রাগসের ব্যাপার-স্যাপার দেখানো হয়েছে। প্রথমেই খারাপগুলো বলে লেখা শুরু করার একটাই কারণ, যাতে দর্শকরা অন্তত মানসিকভাবে এই ব্যাপারগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকেন।
গল্প আশা করি সবারই জানা, তাও একটু ছুঁয়ে যাওয়া যাক। ফেলুদা আর লামোহনবাবু আর অবশ্যই তোপসে ছুটি কাটাতে কাশ্মীরে। সেখানেই আলাপ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সিদ্ধেশ্বর মল্লিক ও তাঁর সহকারী সুশান্তের সঙ্গে। তারপরই জড়িয়ে পড়া এই পরিবারের সঙ্গে। সিদ্ধেশ্বরবাবু শেষ বয়সে এসে নিজের দেওয়া কিছু ফাঁসির আদেশ নিয়ে সন্দিহান। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তারের সাহায্যে আত্মা নামান ফাঁসির আদেশ দেওয়া আসামীদের। অর্থাৎ করেন প্ল্যানচেট। জানতে চান, তাঁর বিচার ঠিক না ভুল। এরপরই একটা খুন, একটা খুনের চেষ্টা, একটা হিরের আংটি চুরি, বারবার ফেলুদার উপর হামলা, আর সঙ্গে সবশেষে রহস্যভেদ!
সিরিজে এক পর্যায়ে এসে ফেলুদার ‘হাইলি ম্যাগনিফিসেন্ট’ সমস্ত কেসের কোলাজ দেখিয়েছেন সৃজিত। আর সেখানেই কেটে দেওয়া দু নম্বর ফেরত দিয়ে দিতে হয়েছে। মগনলাল মেঘরাজ, ঘুরঘুটিয়া, পুরীর সেই ভণ্ড জ্যোতিষী, পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে থ্রি মাস্কেটিয়াস… একের পর এক যখন ভেসে আসে, তখন মনটা প্রশ্ন করে, ‘কেন আর ফেলুদা সিরিজ বানাবেন না সৃজিত’!
ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর সিরিজের প্রধান সমস্যা হল, টেনে বাড়তে গিয়ে টানটান উত্তেজনা যেন একটু হলেও কমেছে। একটুখানি একঘেয়ে লাগলেও লাগতে পারে। তবে ফেলুদা হিসেবে টোটা রায় চৌধুরী আবারও মন ছুঁয়েছেন। শুধু পাহাড়ি রাস্তায় পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওভাবে টানটান হয়ে না হাঁটলেই পারতেন! বাদবাকি তাঁর কথা বলা, তাকানো, বন্দুক ধরা, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া সবই দশে দশ। তোপসে হিসেবে যথাযথ কল্পন। লালমোহনবাবুর চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তী মাঝে মাঝে একেন বাবুর কথা মনে করিয়ে দিলেও, মন্দ লাগেনি অভিনয়। বিশেষ করে উল্লেখের দাবি রাখেন ঋদ্ধি সেন ও রজতাভ দত্ত।
কাশ্মীর নিয়ে ফেলুদা থুরি টোটাই বলেছেন, ‘Gar firdaus, bar ruhe zamin ast, hamin asto, hamin asto, hamin ast’। অর্থাৎ পৃথিবীতে কোথাও যদি স্বর্গ বাস্তবে থেকে থাকে, সেটা এখানে… কাশ্মীরে। আর সেই অসাধারণ সৌন্দর্য খুব সুন্দরভাবে ক্যাপচার করা হয়েছে। ডাল লেক, বরফে ঢাকা পাহাড়, চিনার গাছ, মুগল বাগান, নদী, সবই আছে। শুধু চোখে লেগেছে, ব্যবহার হওয়া নীল রঙের আস্তরণটা। সত্যিই কি ওটার কোনো প্রয়োজন ছিল?