আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে তিনি শুরু থেকেই ছিলেন, ছিলেন মিছিলেও। আর সেই প্রতিবাদী ভাষাই বারবার উঠে আসছে অভিনেতা নাট্য ব্যক্তিত্ব সুজন নীল মুখোপাধ্যায়ের নাটকে। পঞ্চমীতে মঞ্চস্থ হয়েছে তাঁর নতুন নাটক 'মৃতার ডায়েরি'। আর সেই 'মৃতার ডায়েরি' নাটকটি দেখতে দেখতেই ছবি এঁকে ফেলেন আরেক চিত্রশিল্পী সমীর আইচ। সেই ছবিতেও ছিল প্রতিবাদের ভাষা। আর সেই ছবি তাই নাটক দেখার পর ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নেন এক দর্শক বন্ধু। আর সেই টাকাই পৌঁছে দেওয়া হল প্রতিবাদী ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে। আর সেকথাই নিজের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সকলকে জানিয়েছেন সুজন নীল।
নাটকের মঞ্চে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ থেকে সমীর আইচের আঁকা সেই ছবি, সেটা দর্শক বন্ধু অমিত বাবুর কেনার মুহূর্ত সবই লেন্সবন্দি করে সকলের জন্য ফেসবুকের পাতায় তুলে ধরেছেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। পোস্টের ক্যাপশানে তিনি লিখেছেন, ‘সমীর আইচ ছবিটি আঁকলেন। নিবেদিতার " মৃতার ডায়েরি" চলাকালীন...।সেই ছবি নাটক শেষে আন্দোলনকারী দের ফান্ডের জন্য। নিয়ে নিলেন এক দর্শক বন্ধু ( অমিত বাবু)... থিয়েটার বেঁচে থাক।’
আরও পড়ুন-'ভেবেছিলাম, বয়স বাড়লে শান্তি পাব…', তবে জন্মদিনেও কেন ঠিক খুশি হতে পারছেন না শিলাজিৎ!
আরও পড়ুন-গর্ভের সন্তান আসার পর শুধুই দূর-ছাই করেছেন একসময়ের আদরের পুটুকে, আজ সেই ভুলেরই…: পরীমনি
ষষ্ঠীর দিন জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন সুজন নীল। পাশাপাশি অ্যাকাডেমিতে গিয়ে নতুন নাটকের একটা নাটকও দেখে এসেছেন। সেই নাটকেও একইভাবে ছিল প্রতিবাদের ভাষা। এখানেই শেষ নয়, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ২৫ অক্টোবরও অ্যাকাডেমিতে আরও একবার মঞ্চস্থ হতে চলেছে সুজন নীলের 'মৃতার ডায়েরি'। ওইদিন সেই নাটকও দেখতে যাওয়ার জন্য আহ্বান করেছেন অভিনেতা, নাট্য ব্যক্তিত্ব।
সুজন নীল আরও একটা পোস্টে তাই জানিয়েছে লেখেন, 'গতকাল অনশন মঞ্চে গেলাম..। তার আগে টেন্থ প্ল্যানেট নাট্য দলের ম্যাকবেথ দেখলাম একাডেমিতে..। তরুণ প্রজন্মের বলিষ্ঠ কাজ। ক্ষমতা আর রক্ত কিভাবে জড়িয়ে প্রতিবেশীর মতো সহবাস করে নতুন করে শিক্ষা পেলাম..….। পরিচালক শরণ্য ও লেডি ম্যাকবেথ মেরি কে সংগ্ৰামী অভিনন্দন। সবাই এই নতুন ম্যাকবেথ কে চিনুন... বিরোধী শূন্য করে কিভাবে ক্ষমতায় থাকতে হয় , শিখুন..,আমার কথা ফালতু মনে হলেও, আমি বা আমার চেতনা নাট্য দল গতকালের মৃতার ডায়েরি নাটক চলাকালীন সমীর আইচ চিত্রিত ছবির বিক্রয় মূল্য ১০,০০০ টাকা,আজ আন্দোলন কারীদের অনশন মঞ্চে পৌঁছে দিয়েছে ..।
সেই বিষটি ফেসবুকে সকলের জন্য তুলে ধরে অভিনেতা লেখেন, 'তার প্রমাণ রইলো, কিছু পার্টি কর্মীদের জন্য...( সব ধান্ধা নয়, আবেগটাই আসল বা সৎ প্রতিবাদ)। আবার সমীর দা আঁকবেন, নিবেদিতা (ধর্ষিতা) মৃত হয়েও জেগে উঠে বন্ধুদের নাড়িয়ে দেবেন..। ২৫ অক্টোবর একাডেমি সন্ধ্যা ৫:৩০। ৩ টি প্রতিবাদ...একসাথে। আর হবে না, এই প্রতিবাদের সিম্ফনি... প্রথম ও শেষ বার। বিঃদ্রঃ বিচার চাই ব্যাচটি শেষ হয়ে গেছিলো...এক ডাক্তার তরুণ বন্ধু আমায় তার নিজের ব্যাচটি খুলে পরিয়ে দিলেন.... আমি নিতে চাইনি। কিন্তু ওর চাপের কাছে হার স্বীকার করলাম... মনে হলো... তার যন্ত্রণা বুকে থাক... বুকে রইলো..। ২৫ অক্টোবর দেখা হোক।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে ধর্ষণের শিকার হন নাটকে উঠে এসেছে সেই ইতালীয় অভিনেত্রীর জীবন। যিনি ১৯৭৫ সালে একটা ডায়েরিও লিখেছিলেন। 'মৃতার ডায়েরি' নাটকের প্রেক্ষাপট ছিল সেটাই। তারই জীবনকে প্রেক্ষাপটে রেখেই বিশ্বের সমস্ত উঠে এসেছে আরজি করের সেই নৃশংস ঘটনা। একবার কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে সে আর ফিরে আসে না। তবে যদি তিনি ফিরতে পারতেন তিনি কী কী দেখতেন, আদালতে কী কী প্রশ্ন তুলতেন সে সব উঠে আসবে এই নাটকে।