নাম দেবশিস হালদার। আরজি করের ঘটনায় আন্দোলনের অন্যতম মুখ তিনি। হুগলির খামারগাছির বাসিন্দা দেবাশিস। পড়াশোনায় বরবরই প্রথম সারিতেই ছিলেন। মাধ্যমিকে অষ্টম, আর উচ্চ-মাধ্যমিকে একাদশ স্থান অর্জন করেছিলেন দেবাশিস, নিটেও সাফল্য পেয়েছিলেন। বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ছেন, সেখানকার অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত তিনি।
আর আরজি কর নিয়ে আন্দোলনে শুরু থেকেই সামনে এসে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দেবাশিস হালদার। তবে শুধু তিনিই নন, এই আন্দোলনে শুরু থেকেই দেবাশিসের পাশে আরও একজন রয়েছেন, তিনি হলেন ডক্টর স্নিগ্ধা হাজরা। যিনি আবার এই মুহূর্তে ধর্মতলায় অন্যান্য ডাক্তারদের সঙ্গে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন স্নিগ্ধা। টানা অনশনে অসুস্থও হয়ে পড়েছেন স্নিগ্ধা। তাঁর ব্লাড প্রেশারও ভীষণই লো হয়ে গিয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। এবার হয়ত ভাবছেন দেবশিসের কথা বলতে বলতে হঠাৎ কেনই বা স্নিগ্ধার কথা বলছি?
বলছি, কারণ, এক্ষেত্রে দেবশিস ও স্নিগ্ধার লড়াইয়ের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে তাঁদের ভালোবাসা, প্রেম। হ্যাঁ, এখানেও আন্দোলন, লড়াইয়ের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে স্নিগ্ধা ও দেবশিসের ভালোবাসা। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেন তাঁরা। আর মহাসপ্তমীতে ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে ভাইরাল হয়েছে দুই চিকিৎসক দেবাশিস-স্নিগ্ধার একটি মুহূর্ত। যেখানে অনশনরত স্নিগ্ধার হাত ধরে ভরসা যোগাতে দেখা যাচ্ছে দেবাশিসকে।
কঠিন এই সময়ে তাঁদের সুন্দর ও ভরসা যোগানো মুহূর্তটি লেন্সবন্দি করেছেন তাঁদের এক সহকর্মী আসফাকুল্লা নাইয়া। তাঁর তোলা সেই ছবি পোস্ট করে অরিন্দম দে নামে এক ব্যক্তি নিজের ফেসবুকের পাতায় লেখেন, ‘শুধু তোমাকেই ভালোবেসে, ঝড়ের সামনে দাঁড়িয়েছি একা ছেঁড়া পতাকার বেশে। শুধু তোমাকেই ভালোবেসে, তোমাকেই ভালবাসবো ভেবেছি শত যুদ্ধের শেষে।’ ফের লেখেন, ‘শত মন খারাপের মধ্যেও মন ভালো করে দেওয়া একটা ছবি। বিপ্লব এবং প্রেম দীর্ঘজীবী হোক।’ তাঁর সেই পোস্ট শেয়ার করেন আসফাকুল্লা নাইয়া।
আসফাকুল্লা নাইয়া ফের লেখেন, ‘আমি অনেক প্রেম দেখেছি। আমি অনেক বিশ্বাস দেখেছি। আমি অনেক প্রতিবাদ দেখেছি। কিন্তু প্রেম বিশ্বাস, প্রতিবাদ সবগুলির মেলবন্ধন এখানে দেখছি।’ ইতিমধ্যেই তাঁর এই পোস্ট ভাইরাল। মিরচি অগ্নি থেকে শুরু করে শ্রীলেখা মিত্র অনেকেই এই পোস্ট শেয়ার করেছেন। শ্রীলেখা মিত্র এই পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, 'টাচউড, ভাগ্যিস তোমাদের মতো মানুষ আজও আছে।' পোস্ট শেয়ার করে বন্ধু, সহকর্মীদের প্রতি ভালোবাসা জানিয়েছেন আন্দোলনের আরও এক মুখ, অভিনেতা, চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দাও।
প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই আরজি কর নিয়ে আনন্দোলনে অন্য়ান্য ডাক্তারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে চলেছেন দেবশিস-স্নিগ্ধা। মহাষষ্ঠীতে চিকিৎসক স্নিগ্ধা হাজরা যখন ধর্মতলার অনশন মঞ্চে, তখন স্লোগান দিতে দিতে সকলের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে যেতে দেখা গিয়েছিল দেবাশিস হালদারকে।
এদিকে জুনিয়র ডাক্তাররা যখন আন্দোলনে অনড়। ঠিক তখনই অনশন তুলে নিতে বারবার পুলিশ প্রশাসনের তরফে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ১০ অক্টোবর অনশনরত প্রত্যেক চিকিৎসককে আলাদাভাবে আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে হেয়ারস্ট্রিট থানা। প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজের ৩ জন, NRS মেডিক্য়াল কলেজের ১জন, SSKM মেডিক্য়ালের কলেজের ১ জন এবং KPC মেডিক্য়াল কলেজের ১ জন জুনিয়র ডাক্তার। পরে এই অনশনে যোগ দেন অনিকেত মাহাতো।