সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার তদন্তে নেমে প্রয়াত অভিনেতার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের প্রতিটি দিক খুঁটিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসাররা। সুশান্তের আত্মহত্যার পর থেকে ইতিমধ্যেই ১৪ জনের বয়ান রেকর্ড করেছে মুম্বই পুলিশ। এই মৃত্যুর তদন্তে শুরু থেকেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার দিনভর বান্দ্রা পুলিশ থানায় জেরা করা হয় রিয়া চক্রবর্তীকে। প্রায় দশ ঘন্টা ধরে চলে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব।
সূত্রের খবর, পুলিশ দেওয়া বয়ানে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন রিয়া। পিঙ্কভিলা সূত্রে খবর সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে নভেম্বরে বিয়ের কথা মেনে নিয়েছেন রিয়া। পাশাপাশি সেই কারণেই নতুন ফ্ল্যাটও দেখছিলেন তিনি,যেমনটা আগেও জানিয়েছেন তাঁর ব্রোকার। এদিন রিয়ার গোটা ফোন স্ক্যান করে মুম্বই পুলিশ। তাঁর ফোনের সমস্ত ছবি, ভিডিয়ো কল রেকর্ডের তথ্যা সংগ্রহ করছে মুম্বই পুলিশ। সুশান্তের সঙ্গে তাঁর বান্দ্রার কার্টার রোডের অ্যাপার্টমেন্টেই থাকতেন রিয়া। তবে সুশান্তের আত্মহত্যার দিন কয়েক আগেই তিনি সেখান থেকে চলে যান।কিন্তু কেন ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি? তবে কি সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল? রিয়া জানান, সুশান্তের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল তাঁর। সুশান্তের ফ্ল্যাট মেট তথা ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার সিদ্ধার্থ পিঠানিকে নিয়ে।রিয়ার আপত্তি জানিয়েছিলেন সেই ফ্ল্যাটে সিদ্ধার্থের উপস্থিতি ঘিরে। সুশান্তকে বলেছিলেন সিদ্ধার্থকে বলতে ফ্ল্যাট খালি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু সুশান্ত রাজি না হওয়ায় সেখান থেকে চলে যান রিয়া। তবে তাঁর পরেও সুশান্তের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। সেই সমস্ত টেক্সট মেসেজ পুলিশকে দেখান রিয়া।
শনিবার রাতে ঘুমতে যাওয়ার আগে প্রথমে মহেশ শেট্টিকে ফোন করেন সুশান্ত, এরপর রিয়ার নম্বর ডায়েল করেন। কিন্তু দুজনের সঙ্গেই কথা হয়নি। সকালে উঠে সুশান্ত দেখেন মহেশ তাঁকে পাল্টা ফোন করেছেন,সুশান্ত ফের তাকে ফোন করেন কিন্তু যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মহেশের কাছে ফোন না পৌঁছালেও সুশান্তের ফোনে শেষ ডায়েল করা নম্বর তাঁর বেস্ট ফ্রেন্ড মহেশ শেট্টি, পিঙ্কভিলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
সুশান্তের ডিপ্রেশনে থাকার বিষয় নিয়েও পুলিশকে প্রচুর তথ্য দিয়েছেন রিয়া। পুলিশ তাঁর কাছে শেষ কয়েকমাসে সুশান্তের আচরণে কোনও পরিবর্তন এসেছিল কিনা জানতে চায়।সেই নিয়ে রিয়া পুলিশকে সুশান্তের ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে থাকবার বিষয় নিয়ে বেশকিছু প্রমাণ দিয়েছে। এমনকি অবসাদ কাটাতে সুশান্ত মেডিটেশন,যোগার সহায়তা নিচ্ছিলেন সেকথা বলেন রিয়া। তিনি জানান, এমন অনেক দিন থাকত যখন সুশান্ত মারত্মকভাবে ভেঙে পড়ত,এমনকি ওষুধ খাওয়াও বন্ধ করে দিন। অনেক জোরাজুরি করলেও নাকি শেষের দিকে ওষুধ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুশান্ত।
রিয়া আরও জানান, যখন তিনি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন গোটা ঘটনা তিনি ফোন করে সুশান্তের দিদিকে (মিতু সিং) জানিয়েছিলেন। এমনকি সুশান্তের সঙ্গে এসে থাকারও অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সুশান্তের মৃত্যুর পর প্রয়াত অভিনেতার পরিবারের তরফে তাঁর শেষকৃত্যে রিয়ার উপস্থিতি ঘিরে আপত্তি জানানো হয়।
সোমবার কুপার হাসপাতালের মর্গে সুশান্তকে শেষবিদায় জানাতে গিয়েছিলেন রিয়া।তবে ভিলে পার্লের পবন হংস শ্মশানে দেখা যায়নি রিয়াকে।