সুশান্ত সিং রাজপুত মামলার মূল অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে মুম্বই পুলিশের ‘সখ্যতা’ নিয়ে এর আগে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার রাতে ফের সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে সামনে এল। এদিন সান্তাক্রুজের ডিআরডিও গেস্ট হাউজে লাগাতার সাড়ে দশ ঘন্টা ধরে সিবিআইয়ের ম্যারাথন জেরার মুখে পড়েন রিয়া চক্রবর্তী। ঘড়ির কাঁটা রাত ৯টা বাজতেই সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল রিয়াকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়, জানিয়ে দেওয়া হয় ফের হাজিরা দিতে হবে।
ডিআরডিও গেস্ট হাউজ থেকে নিজের ইনোভা গাড়িতে করে রিয়া রওনা দেন ভাই শৌভিক চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে। সংবাদমাধ্যমের উপচে পড়া ভিড় এবং বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি না ফিরে রিয়া পৌঁছে যান সোজা সান্তাক্রুজ পুলিশ থানায়। সেখানে কী কারণে রিয়া পৌঁছেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ভিতরে ঢোকবার চেষ্টা করলে গেট বন্ধ করে দেয় মুম্বই পুলিশ। ক্যামেরা জুম ইন করে স্পষ্টই দেখা যায় সান্তাক্রুজ থানার আইও-র সামনে বসে রয়েছেন রিয়া ও তাঁর ভাই শৌভিক। কিছু কাগজেও সই করতে দেখা যায় রিয়াকে। সেখানে মিনিট ২০ থাকবার পর মুম্বই পুলিশ এসকর্ট করে বার করে নিয়ে যায় রিয়া চক্রবর্তীকে। এবং রিয়ার গাড়ির পিছনে একটি মুম্বই পুলিশের ভ্যান তাঁকে বাকি রাস্তা এসকর্ট করে বাড়ি অবধি পৌঁছে যায়।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে রিয়া এদিন পৌঁছেছিলেন থানায়। তাঁর প্রাইভেসি নষ্ট করছে নির্দিষ্ট কিছু সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন রিয়া।
এদিন রিয়ার জুহুর অবসানের সামনেও সংবাদমাধ্যমের ভিড় উপচে পড়ছিল। রিয়াকে গেটের ভিতর পর্যন্ত সুরক্ষা সহকারে পৌঁছে গিয়ে আসে সান্তাক্রুজ থানার চার অফিসার। সেখানেও সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রিয়াকে। যদিও কোনওরকম প্রতিক্রিয়া দেননি রিয়া।
রিয়াকে সুরক্ষা সহকারে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে মুম্বই পুলিশ, জাতীয় টেলিভিশনে এই ছবি থেকে বিস্ময় আর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সুশান্ত ভক্তরা। #ShameonMumbaiPolice টুইটার ইন্ডিয়ায় তৃতীয় নম্বরে ট্রেন্ড করেছে। এক ঘন্টাতেই প্রায় ২৫ হাজার টুইট শেয়ার করেছেন নেটিজেনরা। অনেকেরই প্রশ্ন কেন ফেব্রুয়ারি মাসে সুশান্তের পরিবারের তরফে অভিযোগ পেয়েও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি মুম্বই পুলিশ? তাহলে হয়ত এভাবে চলে যেতে হত না সুশান্তকে।
এর আগে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায় রিয়া চক্রবর্তীর কল ডিলেটস রেকর্ড। যেখানে দেখা গিয়েছে বান্দ্রা জোন-৯ এর ডিসিপি অভিষেক ত্রিমুখের সঙ্গে সুশান্তের মৃত্যুর পর চারবার ফোনে কথা হয়েছে রিয়ার, একবার রিয়াকে মেসেজও করেন মুম্বইয়ের এই ডিসিপি। রিয়ার সাফাই কেস সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এসেছিল ফোন।
সুশান্তের মৃত্যুর কয়েকঘন্টার মধ্যে এই মামলাকে আত্মহত্যা বলে চিহ্নিত করে দেওয়ার পর মুম্বই পুলিশ যেভাবে এফআইআর ছাড়াই ৫৬ জনের বয়ান রেকর্ড করেছে তা অনেকের কাছেই ভিত্তিহীন বলে মনে হয়েছে। সুশান্তের পরিবারের তরফে বিহার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করবার পর পাটনার এসপি বিনয় তিওয়ারি মুম্বই পৌঁছালে তাঁকেও করোনা আবহের 'অজুহাত' দেখিয়ে কোয়ারেন্টাইন করে বিএমসি। সেই নিয়েও অভিযোগের আঙুল উঠে মুম্বই পুলিশের দিকে। শীর্ষ আদালতও মুম্বই পুলিশকে ভর্ত্সনা করে একজন কর্তব্যরত আইপিএসকে কোয়ারেন্টাইন করবার জন্য।
দীর্ঘ ৬৬ দিনেও সুশান্ত মামলার তদন্তে এফআইআর দায়ের করতে ব্যর্থ হয় মুম্বই পুলিশ। এরপর গত ৫ অগস্ট বিহার সরকারের সুপারিশ মেনে মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় কেন্দ্র। এই সিদ্ধান্তেরও সুপ্রিম কোর্টে বিরোধিতা করে মহারাষ্ট্র সরকার। যদিও গত ১৯ অগস্ট দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্ত জারি রাখবে সিবিআই। খারিজ করে দেয় এই মামলার মূল অভিযুক্ত রিয়া চক্রবর্তীর পিটিশন।
এই মামলার তদন্তে ইতিমধ্যেই সুশান্তের মৃত্যুরহস্যের তদন্তে সরাসরি যুক্ত মুম্বই পুলিশের দুই অফিসার ইনস্পেক্টর ভূষণ বালনেকর এবং সাব ইনস্পেক্টর বৈভব জগতপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ডাকা হতে পারে মুম্বই পুলিশের একাধিক সিনিয়ার উচ্চপদস্থ অফিসারকেও, খবর সিবিআই সূত্রে।