সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্তে রহস্য ক্রমেই ঘনাচ্ছে। শুরু থেকেই এই মামলায় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে দুটি নাম-রিয়া চক্রবর্তী ও সিদ্ধার্থ পিঠানি। শেষ এক বছরে সুশান্তের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন এই দুজনেই। একজন সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড, অন্যজন সুশান্তের ফ্ল্যাট মেইট ও ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার।
রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে সুশান্তের প্রেম সম্পর্কের গুঞ্জন অভিনেতার মৃত্যুর প্রায় এক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। গত বছর মার্চ-এপ্রিল থেকে এই সম্পর্কের কথা সামনে আসে। ২০১৯-এর এপ্রিল মাসেই সুশান্তের ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার হিসাবে কাজে যোগ দেন সিদ্ধার্থ পিঠানি। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে সে কথা নিজের মুখে জানিয়েছেন সিদ্ধার্থ।
সুশান্ত এবং রিয়া কোনওদিনই নিজেদের প্রেম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দেয়নি। সুশান্তের মৃত্যুর একমাসের মাথায় ১৪ই জুলাই রিয়া নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড বলে দাবি করেন এবং সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা পিটিশনে রিয়া বলেছেন গত এক বছর ধরে লিভ ইন রিলেশনশিপে ছিলেন তিনি এবং ৮ই জুন ২০২০, সুশান্তের মৃত্যুর আগে সুশান্তের বান্দ্রার কার্টার রোডের অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়েন তিনি।
সুশান্তের মৃত্যুর পর একাধিক বার বান্দ্রা পুলিশ থানার চক্কর কাটতে দেখা গেছে সিদ্ধার্থ পিঠানিকে। ১৪জুন সুশান্তের মৃত্যুর সময় ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন সিদ্ধার্থ।যদিও আপতত মুম্বই ছেড়ে হয়দরাবাদে ফিরে গিয়েছে সিদ্ধার্থ।
শেষ নয় গত সপ্তাহেই নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ডি-অ্যাক্টিভেট করে দেন সিদ্ধার্থ পিঠানি। সুশান্তের মৃত্যুর দিন তিনেক পর যে অ্যাকাউন্ট থেকে একটি সুদীর্ঘ আবেগঘন পোস্ট করেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি ফের চালু হয়েছে সেই প্রোফাইল কিন্তু পুরোদস্তুর বদলে গিয়েছে সেই প্রোফাইল। সেটি উল্লেখ করা হয়েছে কেবলমাত্র সুশান্তের একটি ফ্যান অ্যাকাউন্ট হিসাবে,তা ভীষণ রকমভাবে আশ্চর্যজনক। শুধু তাই নয় সুশান্তের পুরোনো যাবতীয় পোস্ট, গান গাওয়ার ভিডিয়ো-সব কিছু ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে এই অ্যাকাউন্ট থেকে। এমনকি সেখানে পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছে এই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নাকি কোনও বিশেষ ব্যক্তির কোনও যোগাযোগ নেই!
অথচ সুশান্ত ভক্তদের নজর এড়ায়নি এই ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইল এখনও ট্যাগ করা হয়েছে রিয়া চক্রবর্তীর একাধিক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে। হ্যাঁ, রিয়ার ইনস্টাগ্রামের অধিকাংশ ছবি, ভিডিয়ো সবই তুলে দিয়েছেন সিদ্ধার্থ। সুতরাং সুশান্তের ফ্ল্যাট মেইটের সঙ্গে রিয়ার কোনওরকম বন্ধুত্ব ছিল না সেই তত্ত্ব কোনওভাবেই মানতে না-রাজ তাঁরা।
শুধু রিয়াই নন সিদ্ধার্থ পিঠানির এই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি যেটি বর্তমানে শুধুই ফ্যান অ্যাকাউন্ট বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি নিজের অফিসিয়্যাল ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ট্যাগ করেছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। এই অ্যাকাউন্ট ফলোও করতেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তাই এটি যে নেহাত ফ্যান অ্যাকাউন্ট তা অন্তত বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
সুশান্তের মৃত্যুর পর সিদ্ধার্থ পিঠানির ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। নেপথ্যে এই ছবিটি। যেখানে সুশান্তের হাউজ হেল্প দীপেশের সঙ্গে সুশান্তের মৃত্যুর ঠিক ৩ দিন আগে এই পোস্টটি করেন সিদ্ধার্থ। যার ক্যাপশনে লেখা ছিল ফোটনের অনুপস্থিতি। আসলে অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের একঘনিষ্ঠ সাধক সুশান্তের ইনস্টা বায়োতে জ্বলজ্বল করছে ‘ফোটন ইন-এ ডবল স্লিট’। নিজের বহু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ফোটন শব্দের ব্যবহার করতেন প্রয়াত অভিনেতা। তাই সুশান্ত ভক্তরা সুশান্তের মৃত্যুর আগে সিদ্ধার্থ পিঠানির এই শেষ পোস্টকে সন্দেহজনক ও রহস্যজনক বলেই দাবি করেছেন।
সিদ্ধার্থ পিঠানিকে ঘিরে প্রশ্ন তুলেছে সুশান্তের পরিবারের আইনজীবী সঞ্জয় সিংও। তাঁর মতে সিদ্ধার্থ সপ্তাহখানেক আগে পর্যন্ত রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলছিল সুশান্তের পরিবারের সামনে অথচ এখন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে সে দাবি করছে সুশান্তের পরিবার তাঁর উপর চাপ দিচ্ছে রিয়ার বিরুদ্ধে বয়ান দিতে। মুম্বই পুলিশকে ই-মেল মারফত এই নিয়ে অভিযোগও জানিয়েছেন সিদ্ধার্থ। যার কপি সুপ্রিম কোর্টে দায়ের নিজের পিটিশনে প্রমাণ হিসাবে যুক্ত করেছেন রিয়া চক্রবর্তী। ই-মেলে সিদ্ধার্থ লেখেন, গত ২২ জুলাই সুশান্তের পরিবারের তরফে একটি ফোন পান তিনি। সেই কনফারেন্স কলে সুশান্তের দিদি মিতু সিং এবং জামাইবাবু সিনিয়র আইপিএস অফিসার ওপি সিং এবং সুপ্রিম কোর্টের এই সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন। তাঁরা সকলে রিয়ার বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ার কথা বলেছেন। কীভাবে বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টে থাকবার সময় রিয়া প্রভাবিত করেছিলেন সুশান্তকে সে কথা জানানোর কথা বলে সুশান্তের পরিবার।