অনেকেই বলে থাকেন আজকাল নাকি মানুষ আর থিয়েটার দেখতে তেমন পছন্দ করেন না। দর্শক কমছে বিনোদনের এই মাধ্যমের। কিন্তু সেই কথা যে সম্পূর্ণ সত্য নয়, সেটাই আরও অভিনেতা ঋদ্ধি সেন তাঁর পোস্টের মাধ্যমে সকলের কাছে তুলে ধরলেন। গতকাল গিরিশ মঞ্চে অত দর্শক দেখে তিনি নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। বুধবার, ২৩ নভেম্বর গিরিশ মঞ্চে চেতনার ৫০ বছরের থিয়েটার উৎসবের শেষ দিন ছিল, আর এদিন ব্যাপক জনসমাগম দেখে ভীষণই আনন্দিতবোধ করেন ঋদ্ধি।
গোটা বিষয় নিয়ে তিনি নিজের মনের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে ফেলেন। আর সেই পোস্টই সকলের মন কাড়ল। ঋদ্ধি একটি ছবি পোস্ট করেন এই অনুষ্ঠানের। সেখানে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, 'এই ছবিটা গিরিশ মঞ্চে রাত ১০.৩০টা নাগাদ তোলা। কাল চেতনার ৫০ বছরের থিয়েটার উৎসবের শেষ দিন ছিল। প্রযোজনা মেফিস্টো। শো হাউজফুল হয়েছে। ৭০০ দর্শক ৬ টার মধ্যেই নিজেদের আসন গ্রহণ করেন কিন্তু আচমকাই গোটা প্রেক্ষাগৃহ ধোঁয়ায় ভরে যায়। এসি ভেন্টে আগুন লাগার ফলে যে এই ধোঁয়া বের হচ্ছিল বলে জানা যায়। এরপর সমস্ত দর্শকদের হল থেকে বাইরে যেতে অনুরোধ করা হয়। ঘটনাস্থলে আসে দমকল, পুলিশ, হাই টেনশন কেবিলের লোক। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।'
কিন্তু যে বিভ্রাট দেখা দিয়েছিল সেটা শো চলাকালীন একজন দর্শককেও এতটুকু বিচলিত করেনি। গোটা পরিস্থিতি সামাল দিতে এক ঘণ্টা কেটে লেগেছে। এই নাটক ছিল দুই ঘণ্টা চল্লিশ মিনিটের। ফলে ততক্ষণে শোয়ের প্রায় অর্ধেক হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তখনও শো শুরু করা যায়নি। শো শুরু হতে তখনও আরও আধ ঘণ্টা লাগবে, কারণ নো অবজেকশন সার্টিফিকেট না মেলা পর্যন্ত অভিনয় শুরু করা যাবে না। ঋদ্ধি এরপর জানান, 'আমরা ভাবলাম বুঝি আজ অভিনয় বাতিল করে দিতে হবে। দর্শকদের সেই কথা জানানো হলে তাঁরা বলেন যে তাঁরা থাকবেন, দেরি হলেও এই অভিনয় দেখবেন। অবশেষে ৭.৪০এ শুরু হল শো, শেষ হল রাত ১০.৩০এ। কার্টেন কল হল যখন তখনও কেউ চলে যাননি। সকলেই ছিলেন। এই ধৈর্য আর ভালোবাসা সহজে দেখা যায় না।' এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট পর নাটক শুরু হওয়া সত্বেও সকলে যেভাবে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, থেকেছেন সেটা দেখে দারুন আপ্লুত তিনি।
এই পোস্টে অভিনেতা গতকাল উপস্থিত সমস্ত দর্শকদের উদ্দেশে প্রণাম এবং ভালোবাসা জানান। তিনি গোটা বিষয়ে একটি অতীতের ঘটনাকে স্মরণ করে লেখেন, 'এরম ঘটনা আগের বছর দেখেছিলাম। স্বপ্নসন্ধানীর কবির বন্ধুরা নাটকের প্রথম অভিনয়ের দিন জ্ঞান মঞ্চের এসি বার্স্ট করে সন্ধ্যা ৬.৩০ টা নাগাদ। এক ঘণ্টা পর শো শুরু হয়। কিন্তু কোনও দর্শক ফিরে যাননি। আমাদের পাশে ছিলেন।'
তাঁর লেখা এই পোস্টের শেষ লাইন সকলকে মুগ্ধ করে দেয়। তিনি লেখেন, ' এই পচতে থাকা সমাজে এই ভালোবাসা বারবার প্রমাণ করে যে এখনও দেরি হয়ে যায়নি, সব কিছু এখনও বিক্রি হয়ে যায়নি, ভালোবাসা এখনও কেনা যায় না। তৃতীয় বেলে সাড়া দিতেই হবে।'