আর জি কর কাণ্ডে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে চেস্ট মেডিসিন ডিপার্টমেন্টের ৩১ বছরের তরুণী চিকিৎসকে। হাসপাতালের অন্দরে ঘটে যাওয়া এই নারকীয় ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। এই মামলার দায়ভায় ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রতিবাদে রাত দখলে নামছে নারীরা। এত প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাঝেই নির্যাতিতার শোকসন্তপ্ত বাবা-মা'কে নিয়ে অসংবেদনশীল মন্তব্য করে বসলেন ঋতুপর্ণা সেন ওরফে ঋ।
জীবনে অতীতে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন ঋ। একটা সময় ঋ-র ছবির সঙ্গে সঙ্গে চলত বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচণ্ড অ্যাক্টিভ ঋ, আর মাঝেমধ্য়েই সেখানে আলটপকা মন্তব্য করে বসেন। কিন্তু নির্যাতিতার বাবা-মা'কে নিয়ে ঋ-র সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট হজম হচ্ছে না নেটিজেনদের।
ঠিক কী লিখেছেন ঋ?
আচ্ছা যে মেয়েটি আজ আর নেই, তার বাবা, মা এতো নর্ম্যাল আর স্মার্টলি কি করে উত্তর করছেন? রাগে দুঃখে পাগল হয়ে যাবার কথা!'
নিন্দার ঝড়, ধেয়ে এল কটাক্ষ
ঋতুপর্ণা ওরফে ঋ-র ফেসবুক পোস্ট মোটেই সহজে গ্রহণ করেনি নেটিজেনরা। এক মহিলা লেখেন, ‘ল্যাংটো হয়ে সিনেমা করলে এইরকম মন্তব্যই লেখা আসে বৈকী!’ এই বিদ্রুপ দেখেও দমে যাননি ঋ। পালটা লেখেন, ‘তুমি তো ল্যাংটো হয়েই জন্মেছিলে। আর ল্যাংটো না বলে লেখো ন্যুড যেমন ন্যুড লিপস্টিক’।
যদিও ঋ-র সঙ্গে সহমত না হলেও তাঁর ব্যক্তিগত আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন শুভ বুদ্ধিসম্পন্নরা। তবে নিজের ভুল শিকার করতে না রাজ ঋ। তিনি স্পষ্ট বলেন, কিছু ভুল বলিনি।
কী বলেছেন নির্যাতিতার বাবা?
বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তরুণী চিকিৎসকের বাবা সিবিআই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এতে খুশি হওয়ার মতো কিছু নেই। আমাদের দাবি অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাহলে আমাদের শরীর – মন কিছুটা জুড়াবে আর আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। মেয়ে যেমন রোজ সকালে হাসপাতালে যেত, রাতে ফিরে আসত তেমন তো আর ফিরবে না।’
তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের চব্বিশ ঘণ্টার আগেই গ্রেফতার হয় সঞ্জয় রায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখেই আন্দোলনকারী চিকিৎসক থেকে শুরু করে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, এই ঘটনা একা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতা চিকিৎসকের পেটে, ঠোঁটে, আঙুলে, বাঁপায়ে ক্ষত রয়েছে। চিকিৎসকের চশমার কাচ ভেঙে চোখে ঢুকে গিয়েছিল। তাঁর মুখ খুব জোরে চেপে ধরে রাখা ছিল। তার মাথা দেওয়ালে বা মেঝেতে ঠুকে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে মৃত চিকিৎসকের গালে ক্ষত রয়েছে। তা হামলাকারীর নখের থেকে হয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। এদিকে চিকিৎসকের পালটা লড়াইয়ের চিহ্ন নাকি সঞ্জয়য়ের শরীরেও পাওয়া গিয়েছে।
বুধবার সকালে সঞ্জয়কে হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। দুর্ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখছে সিবিআইয়ের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। বুধবার বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ আরজি কর মেডিক্যালে পৌঁছন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। সঙ্গে ছিলেন দিল্লির সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞরা। হাসপাতালে পৌঁছেই চার তলার সেমিনার হলে পৌঁছে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থলের অসংখ্য ছবি তোলেন তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তদন্তের কাজ চলছে।