রেড রোডে হওয়া পুজো কার্নিভাল নিয়ে আরজি কর কাণ্ডের জেরে কার্যত দুইভাবে ভাগ হয়ে গিয়েছিল টলিপাড়ার তারকারা। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কিছুটা হলেও অনুষ্ঠানের জৌলুস কম ছিল। প্রসেনজিৎ চট্টপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী থেকে দেব, রুক্মিণী মৈত্র কারুরই দেখা মেলেনি এদিনের অনুষ্ঠানে। এমনকী তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক এবং তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টোরাজেরও দেখা মেলেনি। কিন্তু জেলার পুজো কার্নিভাল থেকে রেড রোডের পুজো কার্নিভাল সব জায়গাতেই নজর কেড়েছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
রেড রোডে পারফর্মেন্সের শেষে মঞ্চে উঠে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বার্তালাপ করতেও দেখা গিয়েছিল নায়িকাকে। আর তা নিয়ে আবার নতুন করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। পাশাপাশি তাঁদের নানা ট্রোল ও কটাক্ষের শিকারও হতে হয়েছে। এবার তাঁর পুজো কার্নিভালে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন: পর্ণার স্মৃতি ফিরতে বাজিমাত নিম ফুলের মধু-র! তাহলে কি টপার হতে পারল না ফুলকি-কথা
TV9 বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দুর্গাপুজোর কার্নিভ্যালে নৃত্য পরিবেশন করে কটাক্ষের মুখে পড়া অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা ট্রোলাদের কড়া ভাষায় জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন শিল্পী। শিল্পসত্তা নিয়েই আমার জীবন। আমার বিবেক, আমার বোধ কারও কাছে জমা রাখিনি। অনেক বছরের পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে আমার আজকে এই অবস্থান। আজও একইভাবে পরিশ্রম করি। আমার সম্বন্ধে অনেক কথা শুনি। কিন্তু নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকি। আমি অত্যন্ত পীড়িত এবং বিধ্বস্ত তিলোত্তমার ঘটনা নিয়ে। যেসব ডাক্তাররা অনশন করছেন তাঁদের নিয়েও চিন্তিত। আমার ভিতরের কষ্ট বা প্রতিবাদ আমার কাছেই রাখতে চাই। আর কারও সঙ্গে ভাগ করতে চাই না। কারণ যাঁরা সব কিছু এত খারাপ চোখে দেখেন আর এত বিরূপ মন্তব্য করেন, তাঁদের কোনও সুযোগ দিতে চাই না।’
এর আগে আরজি কর কাণ্ডের জেরে শাঁখ বাজানো নিয়ে ট্রোলের মুখে পড়েছিলেন অভিনেত্রী। তাছাড়াও 'মেয়েরা রাত জাগো'-তে অংশগ্রহণ করতে গেলে তাঁর উপর সরাসরি আক্রমণ করেন বেশ কিছু আন্দোলনকারীও। সেই ঘটনার রেশ টেনে নায়িকা বলেন, ‘নিজে যেচে অপমানিত হতে চাই না। আত্মসম্মান আর অভিমান আমার জন্মের থেকেই অধিকারের মধ্যে পড়ে। মা-বাবার শেখানো সংস্কার হল, ছোটবেলা থেকে ভাবা যে কিছু মানুষের জন্য কীভাবে ভালো করতে পারি। অন্যের সমস্যায় কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ব, সেটাই শিখেছি। কাউকে প্রমাণ দিতে চাই না। এই অনুষ্ঠানটার জন্য কলকাতা পুলিশ বডিগার্ড লাইন আবাসিক দুর্গাপুজোর পক্ষ থেকে আবেদন আসে। লালবাজারের পুলিশের দফতর থেকে আবেদন জানানো হয় আমার কাছে। আমি তাঁদের সমর্থন করেছি কেবল মাত্র। রাজ্যে প্রশাসনকে আমাদের প্রয়োজন। তাঁদের সমর্থন করার জন্যই একটা নাচ পরিবেশনা করেছিলাম।'
আরও পড়ুন: বেবিবাম্প নিয়ে হঠাৎ এলেন প্রকাশ্যে, মা হতে চলেছেন রাধিকা আপ্তে, হতবাক ভক্তরা
অভিনেত্রী জানান, পেশাগত তাগিদে তিনি রেড রোডের পুজো কার্নিভালে অংশগ্রহণ করছেন। তবে এক্ষেত্রে তাঁর নিজের থেকেও তাঁর দলের স্বার্থ বেশি জড়িয়ে। কারণ তাঁদের অনেকেই আয়ের একমাত্র মাধ্যম এই ধরণের অনুষ্ঠানগুলি। সেই জায়গার যেখানে কেবল তাঁর নিজস্ব রোজগারের জায়গা ছিল, তেমন বহু কাজ নাকি তিনি ছেড়েছেন। অভিনেত্রীর কথায়, 'অনেকের জীবিকা এবং পরিবার আমার উপর নির্ভর করে থাকে। তবে অনেক অনুষ্ঠান, অনেক পুজোর উদ্বোধন বাতিল করেছি। পুরস্কার নিতেও যেতে পারিনি। কিন্তু দু’ একটা কাজের দিকে আমার নাচের দল তাকিয়ে থাকে। তাঁদেরও সংসার খরচ বহন করতে হয়।’
ঋতুপর্ণা জানান, তিলোত্তমা কাণ্ডে বিচার তিনিও চান। কিন্তু তার জন্য তাঁকে কটাক্ষ করাটা কোনও পথ নয়, তাতে ন্যায়বিচার আসে না। নায়িকার কথায়, ‘আমাকে কটাক্ষ করে, ছোট করে কিছু পাওয়া যাবে না। আমি নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার। একদম পরিষ্কার আকাশের মতো। কালিমা লাগানো যাবে না এত সহজে।
পুজো কার্নিভালে তাঁকে দেখে অনেকেই ‘চটিচাটা’ বলে বিদ্রুপ করেছেন। সেই প্রসঙ্গে সরব হয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাকে কোনও তকমা দেওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করি। মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান করি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর শেষ যাত্রাতেও গিয়েছিলাম। সিবিআই, সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের কাছে আশাপ্রার্থী যে তিলোত্তমা এবং ডাক্তাররা বিচার পাক। মাননীয়ার কাছেও প্রার্থনা জানাই। তবে আমাদের সবাইকে কর্ম করতে হবে। কর্ম আমাদের ধর্ম। কর্মের মধ্যেই প্রতিবাদ থাকবে। থাকবে সুবিচারের প্রতীক্ষা।’
পাশাপাশি অভিনেত্রী তিলোত্তমার পরিবারকে প্রণাম জানিয়ে, ডাক্তারদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে ভোলেননি। সকলের সুস্থতাও কামনা করেছেন তিনি।