অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ টলিউড। এভাবে যে হঠাৎ করে এই এত কম বয়সে চলে যাবেন তিনি তা হয়তো কেউ ভাবতেও পারেননি। অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সাথে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। স্বভাবতই তাঁর কাছে এই খবর খুবই কষ্টের। গলার আওয়াজেও স্পষ্ট ছাপ বেদনার।
ঋতুপর্ণা অভিষেকের চলে যাওয়া প্রসঙ্গে জানালেন:
‘‘সকালে উঠে জানতে পারলাম। এত খারাপ খবর এটা। জানি না কী বলব। অভিষেক চট্টোপাধ্যায় আমাদের বাংলা সিনেমার জগতকে অনেক কিছু দিয়ে গিয়েছে। আমি চাই দর্শক যেন অনেক সম্মানের সাথে তাঁকে মনে রাখে। একসময় এত ছবি করেছি ওর সাথে, ঠিক মনেও নেই কত ছবি করেছি। আমার জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ ছবি ওঁর সাথে করা।
আমার মনে আছে সুজন সখী হিট হওয়ার পর সবাই বলত ঋতুপর্ণা সুপারস্টার হয়ে গিয়েছে। মনে আছে, প্রযোজক আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার লক্ষ্মী’। আর অভিষেককে বলেছিল, ‘তুমি আমাকে বড় একটা উপহার দিলে’। ঋতুপর্ণ-র ‘দহন’-এও তো আমরা একসাথে কাজ করেছি। ওই ছবির জন্যই তো আমার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া। অভিষেক গিয়ে ঋতুপর্ণকে আমার নামে অনেক অনেক ভালো কথা বলেছিল। আমি নাকি খুব ভালো অভিনেত্রী। ভালো মেয়ে। পরে ঋতুদা আমাকে সেসব কথা বলেছিলেন। শুনে মনটা ভরে গিয়েছিল।
লাঠি, শাঁখা সিঁদুরের দিব্যি, জয়ী, আলো-র মতো ব্লকবাস্টার ছবিতে আমরা একসাথে কাজ করেছি। অভিষেক মানুষটা খুব সরল, সাধাসিধে ছিল। মজা করত সেটে, রান্না করে নিয়ে আসত, আড্ডা দিত, খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। পরে শেষের দিকে ওকে টেলিভিশনে যখনই দেখতাম মনে হত, এত ভালো চেহারা তাও কেন নিজেকে মেনটেন করে না। মনে হত, ও কি অসুস্থ? ওর চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি।
বাংলা সিনেমা যখন ক্ষরার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, যখন ধন্ধ এসেছিল বাংলা সিনেমা কি আদৌ বানানো হবে-থাকবে? সেইসময় যাঁরা হাল ধরেছিল, তাঁদের মধ্যে অভিষেক অন্যতম। সেইসময় আমাদের একটা গ্রুপ ছিল। খুব আনন্দ করে কাজ করতাম। আউটডোরে ভীষণ মজা করতাম। আমার কাছে সেসব স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়াটা খুবই কষ্টের।
শেষের দিকে আমাদের যোগাযোগ কমে গেছিল। সেভাবে কথা হত না। ওর মনে অনেক ক্ষোভ ছিল। অনেক না পাওয়া ছিল। জানি না সেগুলো নিয়ে কতটা আক্ষেপ ছিল। তবে আজকে ও যেখানে গেছে সেখানে হয়তো ওগুলোর জায়গা নেই। তাই আমি চাইব ও যেখানে গেছে সেখানে অনেক ভালো থাকুক। শান্তিতে থাকুক। ’’