বাঙালি বললেই অবাঙালিদের সবার আগে যেটা মনে পড়ে সেটা হল 'রসগুল্লা', 'মাচ্ছি'। অবশ্য কথাটা বিশেষ ভুল নয়। আমরা তো এমনিই বলে থাকি, 'মাছে ভাতে বাঙালি'। বাঙালির খাদ্যরসিকতার কথা নতুন নয়। তবে বাঙালি মানে যে কেবল বাহারি খাবার দাবার তেমনটা নয়, একই সঙ্গে বাঙালি মানে শিল্প সংস্কৃতিও বটে। কিন্তু সম্প্রতি বাঙালির এই মাছপ্রীতি নিয়ে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা পরেশ রাওয়াল একটি বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন। আর তারপরই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে শুরু হয় তীব্র ব্যঙ্গ, মীমের বন্যা। চলে প্রতিবাদও।
বিজেপির হয়ে প্রচারে গিয়ে গুজরাটে এমন মন্তব্য করেন পরেশ রাওয়াল। সাধারণ মানুষ হোক কিংবা কোনও সেলিব্রিটি, অথবা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সকলকেই কম বেশি এই বিষয়টার বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালেন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। না না, ঋত্বিক নন, তাঁর পুতুল। ব্যাপারটা কী? দেখুন।
অভিনেতাকে আজকাল হামেশাই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পুতুল নিয়ে লাইভ আসতে দেখা গিয়েছে। আর সেই পুতুল সমাজের নানান বিষয় নিয়ে তার মন্তব্য জানিয়েছে। বলা ভালো সমাজের নানান বিষয় নিয়ে তার অত্যন্ত সুস্পষ্ট মতামত রয়েছে। ঋত্বিক চক্রবর্তীর এই পুতুল তাঁকে বড়দা বলে ডাকে। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ এসে সেই পুতুল তার বড়দাকে বলল পারশে বাওয়ালের কথা! না না, আপনি কি ভাবলেন আমি পার্সে মাছের কথা বলছি? একদমই না। এই পুতুল পারশে বাওয়াল বলে আদতে পরেশ রাওয়ালকে বুঝিয়েছে।
পুতুলটি তার বড়দাকে প্রশ্ন করে জানতে চায় যে 'সে নাকি বাঙালিদের অপমান করেছে?' উত্তরে অভিনেতা বলেন, জাতিবিদ্বেষী রাজনৈতিক মতামত এটা। সেটা শুনে পুতুলটি আবার বলে, ' গাধার ডাকে কি তানসেন অপমানিত হয়?' এরপর আরও নানান মন্তব্য করে পুতুলটি পারশে বাওয়াল, থুড়ি পরেশ রাওয়ালকে নিয়ে।
সামনেই গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচন আর সেটার জন্যই বিজপির হয়ে ভালসাদে প্রচারে যান অভিনেতা। আর সেখানে তিনি মাছে ভাতে বাঙালিকে নিয়ে টিপ্পনি কেটে সমস্যায় পড়ে যান। পড়ে চাপ বাড়ায় তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন অবশ্য। শুধু তাই নয়, তিনি রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়েও মন্তব্য করতে ভোলেন না। অভিনেতা বলেন, 'গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়লে কমবে, মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে সেটাও কমে যাবে। মানুষ ফের চাকরি পাবেন। কিন্তু যদি দিল্লির মতো রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশিরা আপনার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন? তখন গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে কী করবেন? বাঙালিদের জন্য মাছ রান্না করবেন?'
এই মন্তব্য ভাইরাল হওয়ার পরেই বিতর্ক তৈরি হয়। চাপের মুখে পড়ে গত শুক্রবার অভিনেতা ক্ষমা চান। তিনি টুইট করে বলেন, বাঙালি বলতে তিনি রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বুঝিয়েছেন। মাছটা এখানে বিষয় নয়, কারণ গুজরাটিরাও মাছ খায়। এরপর তিনি বলেন, 'এই মন্তব্য যদি আপনাদের ভাবাবেগে আঘাত করে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।'
অনেকেই মনে করছেন পরেশ যে মন্তব্য করেছেন সেটা জাতিবিদ্বেষীমূলক। তৃণমূলের তরফে এর ঘোর বিরোধিতা করা হয়। তৃণমূলের সাংসদ কীর্তি আজাদ বলেন যে বাবু ভাইয়া তো এরম ছিলেন না। অন্যদিকে বামেদের তরফে মহম্মদ সেলিম তালতলা থানায় এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করেছেন। তৃণমূলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যর দাবি যত শীঘ্র অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।