রবিবার মহা মিছিলের আহ্বান জানিয়েছিলেন ডাক্তাররা। আর যার ফলে সল্টলেকে ধর্নাস্থলে কিছু খাবার কম পড়ে বলে রাত ১২টা নাগাদ জানিয়েছিলেন এই আরজে। প্রথম থেকেই তিনি আরজি কর নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে পথে। এখানেই শেষ নয়, জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনে তিনি শুধু উপস্থিতিই থাকেননি, ডাক্তারদের সুবিধে-অসুবিধে তুলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়াতেও।
তবে সোমবার অনেকেই দাবি করতে থাকেন, অত রাতে খাবার চেয়ে নাকি ডাক্তারদেরই বিড়ম্বনায় ফেলেছেন তিনি। ভোর অবধি খাবার নয়ে আসতে থাকে সাধারণ মানুষ। ফলে প্রচুর খাবার ফেলে দিতে হয়। যেখানে শুকনো খাবার, যেমন কলা পাউরুটি ছিল, যা দিয়ে আরামসে রাতের মতো পেট ভরানো যেত। এই মর্মে একাধিক পোস্ট হতে থাকে ফেসবুকে। হাফ-সেলেব্রিটি, আগুন-লঙ্কার মতো শব্দ ব্যবহার করা হয় অগ্নিকে বোঝাতে।
এরপর সোমবারই জবাব আসে আরজে-র তরফে। শালীনতা বজায় রেখেই, ট্রোলের মুখ বন্ধ করলেন তিনি। অগ্নি ফেসবুকে ছবি দিলেন যেখানে দেখা যাচ্ছে রাস্তায় থাকা মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে খাবার। সঙ্গে লিখলেন, ‘রাত তখন প্রায় বারোটা। হঠাৎ ডাক্তারদের খাবারের কাউন্টার থেকে খবর এলো এখনো প্রায় আড়াইশো মানুষের খাওয়া বাকি আর রাতের খাবার (ভাত, রুটি ইত্যাটি) শেষ হয়ে গেছে। সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ত্রিপলের নীচে শুতে যাবার আগে ভালো ঘুমের জন্য একটু ভারী খাবার সকলের প্রয়োজন। …দেখলাম সত্যিই কত মানুষ ওই মধ্যরাতে কলকাতা, দিল্লি, পুনে থেকে বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে খাবার পৌঁছে দিলেন। শুরু হল পরিবেশনের কাজ। আড়াইশো জনের জায়গায় চলে এলো প্রায় সাড়ে ছ'শো জনের খাবার।’
‘ধীরে ধীরে রাত তিনটে অবধি সেই খাবার দেওয়া হলো। ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে তিনটে পেরিয়েছে তখনো বাকি প্রায় আশি জনের খাবার। দিব্যেন্দু (অগ্নির পরিচিত) যোগাযোগ করলো তার এক পরিচিত দাদার সঙ্গে, যিনি সল্টলেকে থাকেন । ওই রাতে এক কথায় গাড়ি নিয়ে হাজির হলেন ওর দাদা অনির্বান চক্রবর্তী। সমস্ত খাবার গাড়িতে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন দুজন জুনিয়ক ডাক্তারকে সাথে নিয়ে। উল্টোডাঙ্গা, কারুনাময়ী এবং সল্টলেকের বিভিন্ন অভুক্ত মানুষের আছে পৌঁছে গেলো সেই খাবার। কেউ হয়তো রাস্তায় ঘুমাচ্ছিলেন মাথার কাছে রেখে আসা হলো সুসজ্জিত ফুড প্যাকেট, অনেকটা আদরে মাখা আর লড়াইয়ের আগুনের আঁচে তখনো গরম। হঠাৎ ভোর রাতে আসা খাবার দেখে চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠেছিল অনেকের, আর মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তির হাসি।’, লেখেন অগ্নি।
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তারপর , ভোর পাঁচটার সময় যখন সমস্ত খাবার দেওয়া হয় গেছে, কাউন্টার থেকে খবর পাই নাগেরবাজার থেকে এসেছেন কয়েকজন বাড়ির মায়েরা তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে। তৈরি করতে শুরু করলেন গরম গরম কফি আর স্যান্ডুইচ , কী নিষ্ঠা সেই কাজে।জিজ্ঞেস করতে একজন বললেন, 'আমরা ভোর ভোর না আসলে ছেলে মেয়ে গুলো ঘুম থেকে উঠে না খেয়ে বসে থাকবে। ওদের breakfast এর দেরী হয়ে যাবে না।'’