ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহল নিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষের বিস্তর আগ্রহ। আর সেই আগ্রহ রবাবরই মাত্রাছাড়ায় কাদম্বরী ও রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ককে ঘিরে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'নতুন বউঠান', যিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের শৈল্পিক সৃষ্টির মূল অনুপ্রেরণা, একটা সময় রবীন্দ্রনাথের গোটা জগত ছিল তাঁর নতুন বউঠানকে ঘিরে- এবার সেই আখ্যান ধরা পড়বে টেলিভিশনের পর্দায়। সৌজন্যে স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সপ্তম সন্তান জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী গঙ্গোপাধ্যায়। মাত্র ন বছর বয়সে শাখা-সিঁদুর,লাল বেনারসি পরে, চর্তুদোলায় চড়ে ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করল কাদম্বরী। কাদম্বরীর পিতা শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ঠাকুরবাড়ির বাজার সরকার, তাই যোগাযোগ বহু পুরানো। আর্থিক বা সামাজিক প্রতিপত্তিতে মিল ছিল না তবুও দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশেই হয়েছিল এই বিয়ে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বয়স তখন ১৯, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ সবে সাত বছরের। অর্থাত্ বয়সে রবির চেয়ে মাত্র দু বছরের বড় ছিলেন তাঁর নতুন বউঠান। এক কথায় নিজের খেলার নতুন সাথী পেয়ে আত্মহারা ছিল সে। তবে ঠাকুরবাড়ির সকল সদস্য যে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যাকে নিজেদের সমকক্ষে বসাতে পরেছিলেন তা নয়।
‘রবির নতুন বউঠান’ ধারাবাহিকের চরিত্র নির্বাচন এখনও হয়নি। এই পিরিয়ড ড্রামা লিখছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। কাদম্বরী ও রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ককে জড়িয়ে থাকা চিরকালীন বিতর্ক নয় বরং সে সময়ের সমাজ ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোকে তুলে ধরবার চেষ্টা করা হবে। তেমনটাই দাবি প্রযোজনা সংস্থা ‘ম্যাজিক মোমেন্টস’-এর।
রবীন্দ্রনাথের সব লেখার প্রথম পাঠক ছিল তাঁর নতুন বউঠান। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবনের প্রসঙ্গ উঠলে যে নারীর নাম অবধারিতভাবে উঠে আসে তা হল কাদম্বরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের বিয়ের ঠিক চার মাসের মাথায় আফিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কাদম্বরী দেবী, ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল। ঘটনার দু-দিন পর মৃত্যু হয় তাঁর। ঠাকুর বাড়িতে পুলিশ এসেছিল, তবে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। বরং ঠাকুরবাড়িতেই বসেছিল করোনার কোর্ট। আশ্চার্যজনকভাবে এই মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও সেই সময় তেমন লেখালেখি হয়নি।
‘জীবনস্মৃতি’(১৯১২)-তে রবীন্দ্রনাথ লিখে গিয়েছেন, ‘চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়।’ যদিও রবীন্দ্রনাথের ২৪ বছর বয়সের সময়ে ঠাকুরবাড়িতে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল, রবীন্দ্রনাথের ভগ্নীপতি সারদাপ্রসাদ, কাদম্বরী দেবী, ও মেজদাদা হেমেন্দ্রনাথের। তবে রবীন্দ্রনাথ যে এই লাইনটি কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর দিকে ইশারা করে লিখেছেন তেমনটাই অনুমিত হয়।
এর আগে রুপোলি পর্দায় পরিচালক সুমন ঘোষ কাদম্বরী দেবী'কে নিয়ে ছবি বানিয়েছেন। যেখানে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় দর্শক দেখেছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে, অন্যদিকে কাদম্বরীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কঙ্কনা সেনশর্মা। এখন দেখার টেলিভিশনের পর্দায় এই ভূমিকায় কাকে দেখবে দর্শক…