আর জি করের নৃশংস খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্যরাজনীতি। এই ঘটনায় শুরু থেকে মমতা সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধী শিবির। ওদিকে রাস্তায় রাস্তায় চলছে প্রতিবাদ, সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নিন্দার ঝড়। আর স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধরনা মঞ্চে জুনিয়র চিকিৎসকরা।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার আন্দোলনকারীদের ধরনা মঞ্চে পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘মানবিক’ রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অনেকেই। তবে তার পরেও মমতাকে আক্রমণ শানাতে ছাড়ছেন না বিরোধিরা। মুখ্যমন্ত্রী ধরনা মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করলেন বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। একসময় মমতা ঘনিষ্ঠ এই অভিনেতা একুশের নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ে হারের মুখ দেখেছেন। সুযোগ পেলে মমতাকে আক্রমণ করার সুযোগ হাতছাড়া করেন না অভিনেতা।
এদিন তার ব্য়তিক্রম হল না। দেবদীপ ঘোষ নামের এক শিল্পীর একটি আর্ট ওয়ার্ক শেয়ার করে নেন রুদ্রনীল। সেখানে দেখা গেল নীল-সাদা হাওয়াই চটির উপর দেবীর আলতা রাঙা পা। পিছন থেকে সেই আলতা রাঙা পা চটি চেপে ধরায় বেসামাল নীলসাদা চটির মালিক।
ছবির ক্য়াপশনে লেখা- ‘আজ পক্ষ তোমায় নিতেই হবে হে শ্রী নিরপেক্ষ, একদিকেতে অসুরপালক আর ওদিকে দেবীপক্ষ।’ চলতি সপ্তাহে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মমতার উৎসবে ফেরার বার্তাকে কটাক্ষ করেছিলেন রুদ্রনীল। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘শাসকদল তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে যারা অপরাধী তাদের পক্ষেই বার্তা দিচ্ছে, মানুষের পক্ষে নয়, ডাক্তারদের পক্ষে নয়।’ তিনি বলেন, ‘উৎসবে ফিরুন, তার মানে ভুলে যান এই অন্যায়। ভুলে যান প্রমাণ লোপাট…. উৎসবের মাইকের আওয়াজে ভুলে যান সবকিছু, এটাই তারা বলতে চাইছে’।
প্রসঙ্গত, এদিন মমতার ধরনা মঞ্চে যাওয়াকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসাবেই দেখছে। আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানির আগে ফের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সামনে হাজির হন মমতা। স্পষ্ট করেন, তিনি কোনওরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, তিনিও আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছেন।
মমতা জানান, মুখ্যমন্ত্রী নন, আন্দোলনকারীদের ‘দিদি’ হিসেবে তিনি সেখানে হাজির হয়েছে। নিজেকে জুনিয়র ডাক্তারদের ‘সহযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করলেন। সেইসঙ্গে দাবি করলেন যে শনিবার রাতভর যখন বৃষ্টি হয়েছে, তখন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কথা ভেবে দু'চোখের পাতা এক করতে পারেননি। বৃষ্টির রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা যে কষ্ট পেয়েছেন, সেটা অনুভব করেছেন তিনি নিজেও।
এরপর শনিবার বিকালে দ্রুত ‘স্বচ্ছ’ আলোচনা চেয়ে ‘দিদি’কে ইমেল করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান ডাক্তাররা। সূত্রের খবর, লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে সুর নরম করেছেন আন্দোলকারীরা। তবে নিজেদের দাবিগুলো থেকে সরছেন না তাঁরা।