ছবি: বিনোদিনী একটি নটীর উপাখ্যান
পরিচালনা: রাম কমল মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ে: রুক্মিণী মৈত্র, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ওম সাহানি, রাহুল বসু প্রমুখ
রেটিং: ৪/৫
বিনোদিনীর প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া, স্বপ্ন পূরণ করা বা তাঁর গল্পকে বড় পর্দায় আনা নয়। গত পাঁচ বছর ধরে চরিত্রটিকে রীতিমত নিজের অন্দরে যে লালন করেছেন, চরিত্রটাকে যাপন করছেন সেটাই যেন বুঝিয়ে দিলেন রুক্মিণী মৈত্র। হয়তো দীর্ঘদিন কোনও চরিত্রকে নিজের সঙ্গে বয়ে নিয়ে চললে এমনটা হয়, কী জানি! যাক গে, এবার আসা যাক বিনোদিনী একটি নটীর উপাখ্যান কেমন লাগল সেই বিষয়ে।
বিনোদিনী একটি নটীর উপাখ্যান ছবির বিষয়
সিনেমার গল্পে উঠে এসেছে নটী বিনোদিনীর ছোটবেলা, 'থ্যাটারের' প্রতি তাঁর টান জন্মানোর গল্প থেকে, সেই সময় পতিতাদের লড়াইয়ের গল্প থেকে গিরিশ ঘোষের নজরে পড়া, সেখান থেকে তাঁর মানসকন্যা হয়ে ধীরে ধীরে বদলে যাওয়া জীবন। প্রেম, পুরুষের আগমন, স্বপ্ন দেখা, প্রতারিত হওয়া সহ সমস্ত কথাই। বিনোদিনীর জীবনে টুকরো টুকরো কাহিনি দিয়ে সাজানো হয়েছে চিত্রনাট্য।
কেমন হল বিনোদিনী একটি নটীর উপাখ্যান?
রুক্মিণী মৈত্রর কথা তো আগেই বললাম। বাংলা থিয়েটার জগতের নাট্য সম্রাজ্ঞী যদি তিনি হন তাহলে এই সিনেমার নায়ক , নায়িকা যাই বলুন সবটাই তিনি। এই ছবির জন্য যে তিনি সুদীপ্তার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছিল। তাঁর চরিত্রের বদলটা সব থেকে আকর্ষণীয় লেগেছে, সে থিয়েটারের মঞ্চে হোক বা এমনই জীবনে। তবে কেবল রুক্মিণী নন, এই ছবির প্রতিটি অভিনেতাই যেন এ বলছেন আমায় দেখ, তো ও বলছে আমায়। সবার আগে বলি চান্দ্রেয়ী ঘোষের কথা। ওঁকে গোলাপের চরিত্রে দেখার পর আর কাউকে ওই চরিত্রে ভাবতে পারলাম না। কী দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন চরিত্রটাকে। কখনও কখনও পর্দায় তিনি আর রুক্মিণী একসঙ্গে থাকলে তাঁর দিকেই নজর আটকেছে। ওঁকে যে কেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রি সেভাবে ব্যবহার করল না!
ওম সাহানি কুমার বাহাদুরের চরিত্রে যথাযথ। তাঁর এবং রুক্মিণী মৈত্রর রসায়ন বেশ লেগেছে। সেই জমিদার বা রাজপুত্র সুলভ আভিজাত্য নিপাট ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। গিরিশ ঘোষের চরিত্রে নজর কেড়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও। ছোট হলেও অল্প সময় আবারও নিজের জাত চেনালেন রাহুল বসু। অন্যদিকে মীর, গৌতম হালদার, চন্দন রায় সান্যাল সহ অন্যান্যরা নিজ নিজ জায়গায় যথাযথ।
এই সিনেমার সবথেকে স্ট্রং পয়েন্ট এর সংলাপ এবং ব্যাকগ্র্যান্ড স্কোর-গান। কিছু জায়গায় সংলাপ শুনে গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য। আবার ঠিক তেমন ভাবেই সৌরেন্দ্র সৌম্যজিতের করা ব্যাকগ্র্যান্ড স্কোর ছবিটিকে যেন আলাদা মাত্রা দিয়েছে। কোনও গান জোর করে গুঁজে দেয়া হয়েছে মনে হয়নি। বরং বেশ সুন্দর করে দৃশ্যের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছে। সেই কানহা বলুন বা আজই বরিষ রাতে, কিংবা হরি মন মজায়ে.... এক একটি গান এক একরকমের অনুভূতি এনে দিয়েছে।
গোলাপের মৃত্যু দৃশ্য থেকে ওয়েস্টমিনিস্টারের জন্য ফটোশ্যুট, কিংবা একেবারে শেষ দৃশ্যে নিজ বাড়িতে বিনোদিনীর প্রত্যাবর্তন গায়ে কাঁটা দেওয়াবে। কিংবা অজান্তেই চোখে কোণ ভিজিয়ে দেবে।
কিছু জায়গায় অতি নাটকীয়তা মনে হতে পারে কিন্তু সেটুকু বাদ দিলে বড় পর্দায় গিয়ে দেখার মতোই ছবি বিনোদিনী একটি নটীর উপাখ্যান।